আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন জবির ৫ শিক্ষক
১২ এপ্রিল ২০২১ ১৩:২৯
ঢাকা: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বিদ্যমান আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পাঁচজন শিক্ষক একাধিক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এ কাজ আইন পরিপন্থী হলেও তারা আর্থিক সুবিধা ভোগ করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ১৭ (২) ধারায় সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সকল দায়িত্বের জন্য আর্থিক সুবিধা প্রদান করা যাইবে সেই সকল দায়িত্বের মধ্য হইতে একসঙ্গে একাধিক দায়িত্ব কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে প্রদান করা যাইবে না।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন শিক্ষক একাধিক পদে থেকে দায়িত্ব পালন করছেন এবং আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন। এই তালিকায় রয়েছেন পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নূরে আলম আব্দুল্লাহ। তিনি চেয়ারম্যানের দায়িত্বের পাশাপাশি তিনি গবেষণা পরিচালকের দায়িত্বও পালন করছেন এবং আর্থিক সুবিধা ভোগ করছেন। আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সরকার আলী আক্কাস একইসঙ্গে আইন বিভাগের চেয়ারম্যান ও আইন অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন। প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদের ডীন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম। তিনিও দুই পদে থেকে আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ইভিনিং ডিরেক্টর ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. মোস্তফা কামালও একাধিক পদে থেকে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন। এই তালিকায় আছেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. অরুণ কুমার গোস্বামী ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সিনিয়র অধ্যাপকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত আট বছর থেকে সাবেক ভিসির যারা কাছের মানুষ তাদেরকে বিভিন্নভাবে সুবিধা দিয়েছেন। এ জন্য এক ব্যক্তি একাধিক দায়িত্ব পেয়েছেন এবং আর্থিক সুবিধা ভোগ করেছেন।
একজন অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করপার শর্তে বলেন, ‘যেহেতু ডিন ও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ‘বাই রোটেশন’ এ আসে তাই এটি হয়ত এর মধ্যে পড়বে না। কিন্তু চেয়ারম্যান ও অন্যান্য দায়িত্ব এক ব্যক্তির প্রদান করা উচিত নয়। আর তা ছাড়া অনেক যোগ্য লোক থাকতেও এক ব্যক্তি একাধিক পদে আছেন। এটা প্রশাসনের উচিত বলে মনে করি না।’
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের দুটি গ্রুপের মধ্যে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে সিনিয়র শিক্ষকরা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান নীল দলকে দুই গ্রুপে বিভক্ত করে শিক্ষকদের ম্যানেজ করতেন। তার আস্কারায় নীল দলের প্রভাবশালী শিক্ষকরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব খাটাতে শুরু করেন। তাদের পছন্দমতো শিক্ষক না হলে দুই পদে দায়িত্ব থাকা শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কর্তৃক দায়িত্ব হস্তান্তর করতে বাধ্য করেন। তবে তারা এক সঙ্গে দুই দায়িত্বে থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন তোয়াক্কা করেন না।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার ইঞ্জিনিয়ার ওহিদুজ্জামান বলেন, ‘আমি তো বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ব্যাখ্যা দিতে পারি না। তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।’
পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. নূরে আলম আব্দুল্লাহ একসঙ্গে বিভাগের চেয়ারম্যান দায়িত্বের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা পরিচালকের দায়িত্বও পালন করছেন এবং আর্থিক সুবিধা ভোগ করছেন। তবে তিনি একাধিক পদের জন্য আর্থিক সুবিধা নেন না বলে জানান। তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যানের দায়িত্ব কোন আর্থিক সুবিধার পদ নয়। তবে গবেষণা পরিচালক একটি আর্থিক লাভজনক পদ বলা যেতে পারে এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিয়োগ দিয়ে থাকে।’
আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. সরকার আলী আক্কাস। তিনি আইন বিভাগের শিক্ষক হলে বেআইনি ভাবে একসঙ্গে বিভাগের চেয়ারম্যান ও আইন অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. সরকার আলী আক্কাস বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট পাশ করা একটি আইন আছে যত পদই থাকুক না কেন সর্বোচ্চ যে পদে থাকবে সে পদের বেতন এবং এর পরের যে পদে থাকবে তার অর্ধেক বেতন পাবে।’
তাহলে কি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও সিন্ডিকেট কি পরস্পরবিরোধী কথা বলছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না তা হবে কেন। আমাদের সিন্ডিকেটে পাশ করা আইনে তো এমন কথা বলা হয়েছে।’
তবে সিন্ডিকেটের পাশ করা এমন কোনো আইন বা নিয়মের বিষয়ে তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম একসঙ্গে লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদের ডিন ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যানে দায়িত্ব পালন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অমান্য করে একসাথে দুই পদে দায়িত্বে থাকা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ সব দায়িত্ব পালন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ভাঙ্গা হচ্ছে না।’ তবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অথারিটির সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
এদিকে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের বহুল আলোচিত-সমালোচিত শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল একইসঙ্গে বিভাগের ইভিনিং ডিরেক্টর এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আইনের বিষয়ে জানতে চাইলে ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট থেকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। লোকবল সংকট থাকায় এটি দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘একজনের একাধিক দায়িত্বে থাকা ও আর্থিক সুবিধা নেওয়ার বিষয়টি আমাদের এখানে প্রচলিত হয়ে গেছে। তবে একইসঙ্গে একাধিক দায়িত্ব পালন করা কারও উচিত নয়।’
সারাবাংলা/একে