দরিদ্রদের খাবার ও নগদ টাকা প্রদানের দাবি বাম জোটের
১২ এপ্রিল ২০২১ ১৫:২৬
ঢাকা: বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা করোনায় লকডাউন চলাকালে শ্রমজীবী হতদরিদ্র মানুষের জন্য এক মাসের খাদ্য ও নগদ ৫ হাজার টাকা প্রদানের দাবি জানিয়েছেন।
সোমবার (১২ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন সমাবেশ থেকে এই দাবি জানানো হয়।
বাম জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন সমাবেশে বক্তব্য দেন সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল্লাহ কাফি রতন, বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা পরিষদের সদস্য মানস নন্দী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য আকবর খান, কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় নেতা নজরুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদক বাচ্চু ভুইয়া, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির নেতা শহীদুল ইসলাম সবুজ, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা আব্দুল আলী। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের হামিদুল হক। সমাবেশ পরিচালনা করেন বাসদ নেতা খালেকুজ্জামান লিপন।
সমাবেশে নেতারা বলেন, সরকারের দম্ভ, আত্মম্ভরিতা ও অবহেলার কারণে আজ দেশে করোনা মহামারিতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করছে। ৫/৬ হাসপাতাল ঘুরেও ভর্তি হতে না পেরে রাস্তায় মানুষের মৃত্যু ঘটছে। চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবায় দুর্নীতি-লুটপাটের কারণে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। মিঠু সিন্ডিকেট, সাহেদ, সাবরিনাদের বিচার হয়নি। স্বাস্থ্যখাতে জনবল নিয়োগে দুর্নীতি ব্যাপক বেড়েছে। ভোট ডাকাতির বর্তমান সরকার যেহেতু জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি ফলে জনগণের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য, কাজসহ কোন অধিকার বাস্তবায়নে দায়বোধ করে না।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার একদিকে লকডাউন ঘোষণা করছে অন্যদিকে গার্মেন্টসসহ কলকারখানা চালু রেখে, দোকান-শপিং মল খোলা রেখে সংক্রমণ ছড়িয়ে দিচ্ছে। হতদরিদ্রদের খাদ্য, চিকিৎসা ও নগদ অর্থ না দিলে যে লকডাউন কার্যকর হবে না তা বার বার আমরা বলা সত্ত্বেও সরকার কর্ণপাত না করে লক্কর ঝক্কর লকডাউনে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে গাড়িভাড়া দ্বিগুণ করে জীবন যাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে চলেছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, একদিকে শ্রমজীবী মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে অন্যদিকে গার্মেন্টস মালিকেরা গত বছরেও হাজার হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা নিয়েছে ঋণ পরিশোধের সময় বাড়িয়ে নিয়েছে। এবারেও তারা নতুন করে ১০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দাবি করছে। কিন্তু শ্রমিকেরা কিছুই পাচ্ছে না, গত বছর বেতনের ৪০% দেয়া হয়নি। অনেক শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনা মোকাবেলায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ও দপ্তরের সমন্বয়হীনতা এবং জনগণের উপর নির্ভর না করে সরকারের আমলা নির্ভরতা সংকটকে ক্রমাগত বাড়িয়ে তুলছে। সরকারের গঠিত টেকনিক্যাল কমিটির পরামর্শও সরকার শুনে না। নেতৃবৃন্দ বলেন, বাম জোট শুরু থেকেই সকল রাজনৈতিক দল, চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞ, ভাইরোলজিস্ট, জনপ্রতিনিধিসহ সকলের মতামত গ্রহণ করে করোনা মোকাবেলায় সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছিল কিন্তু সরকার কর্ণপাত করেনি। আমরা পুনরায় করোনা দুর্যোগ মোকাবেলায় সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
তারা আরও বলেন, সরকারি হাসপাতালসমূহে বেড, আইসিইউ, ভেন্টিলেটর এবং হাইফ্লো অক্সিজেন ক্যানুলাসহ কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থাও সারা দেশে অপর্যাপ্ত। বেসরকারি হাসপাতালসমূহে করোনা চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ফলে সাধারণ মানুষ সেখানে চিকিৎসা নিতে পারে না। বেসরকারি হাসপাতালগুলো অধিগ্রহণ করে করোনা চিকিৎসার দাবি আমরা জানাচ্ছি। করোনা টেস্ট, ট্রেসিংও খুব কম। কমপক্ষে ১ লক্ষ করোনা টেস্ট, বিনামূল্যে চিকিৎসা ও টিকা সকল নাগরিকের নিশ্চিত করার দাবি আমরা করছি।
মানববন্ধন সমাবেশ থেকে ছয় দফা দাবি এবং এই সরকারে বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য দেশ প্রেমিক মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
বাম জোটের ৬ দফা দাবিতে বলা হয়,
১. লকডাউনে গ্রাম-শহরের শ্রমজীবীদের জন্য এক মাসের খাদ্য ও নগদ ৫ হাজার টাকা দুর্নীতি ও দলীয়করণ মুক্তভাবে প্রদান করতে হবে।
২. সকল জেলা-উপজেলায় করোনা পরীক্ষার আরটিপিসিআর ল্যাব স্থাপন করে প্রতিদিন কমপক্ষে ১ লাখ করোনা টেস্ট বিনামূল্যে করতে হবে।
৩. সকল জেলা সদরের হাসপাতালে নিরবচ্ছিন্ন কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সাপ্লাই ব্যবস্থা চালু ও কমপক্ষে ২০টি আইসিইউ বেড স্থাপন করতে হবে। বেসরকারি হাসপাতাল অধিগ্রহণ করে করোনা চিকিৎসা করতে হবে।
৪. সকল নাগরিকের বিনা মূল্যে করোনা চিকিৎসা ও ভ্যাকসিন দিতে হবে। সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। এক দেশ এক কোম্পানি না, চীন, রাশিয়াসহ একাধিক দেশ থেকে টিকা আনার উদ্যোগ নিতে হবে। বেসরকারি টিকা বাণিজ্য করতে দেয়া যাবে না।
৫. করোনা মহামারীকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করে সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। দুর্নীতি-লুটপাট বন্ধ করতে হবে।
৬. হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক-নার্স, টেকনিশিয়ানসহ পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ কর। চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ও ঝুঁকি-ভাতা দিতে হবে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এএম