Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বইমেলায় প্রকাশকদের গচ্চা গেছে ৯৬ কোটি টাকা

নুর সুমন, নিউজরুম এডিটর
১৩ এপ্রিল ২০২১ ২৩:৩৩

ঢাকা: ছোট-বড় মিলিয়ে এবার বইমেলায় অংশ নিয়েছিলেন পাঁচ শতাধিক প্রতিষ্ঠান। মেলায় স্টল বরাদ্দ নেওয়া, স্টল গোছানো, কর্মীদের বেতন এ সব প্রাসঙ্গিক কাজে এবার প্রকাশকদের বিনিয়োগ ছিল শত কোটি টাকা। লাভ তো দূরের কথা, বিনিয়োগের টাকাই তুলতে পারেননি তারা। এবারের মেলায় মাত্র চার কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে।

আনুমানিক হিসাবে প্রকাশকদের গচ্ছা গেছে ৯৬ কোটি টাকা। এমন অবস্থায় মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অন্তত ১০০ কোটি টাকার বই কিনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রকাশকরা।

বিজ্ঞাপন

জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির সাবেক সভাপতি ও আগামী প্রকাশনীর কর্ণধার ওসমান গনি বলেন, ‘আমরা ফেব্রুয়ারির যে কোনো সময় থেকে ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পর্যন্ত বইমেলা চালানোর জন্য প্রস্তাব করেছিলাম। ওই সময় গরমও কম ছিল। কিন্তু আমাদের কথা না শুনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এই সময়ে গরমের মধ্যে মেলার আয়োজন করে। এই মেলায় প্রকাশকরা প্রায় ১০০ কোটি বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু বিক্রি হয়েছে মাত্র চার কোটি। ফলে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন প্রকাশকরা।’

তিনি আরও বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের অনুষ্ঠিত শারজাহ আন্তর্জাতিক বইমেলায় প্রকাশকরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাই আমিরাতের সরকার মেলায় অংশ নেওয়া প্রকাশকদের কাছে ১০ মিলিয়ন ডলারের বই কেনার ঘোষণা দিয়েছেন। আমাদের সরকারও যদি এই মেলায় অংশ নেওয়া প্রকাশকদের কাছ থেকে কিছু বই ক্রয় করতেন তাহলে এই ক্ষতি অনেকটা কাটানো যেত।

সাধারণত প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে বইমেলা অনুষ্ঠিত হলেও করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির কারণে এবার তা হয়নি। কিন্তু স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীসহ নানা বিষয়ে বিবেচনা করে প্রকাশকরা বইমেলা আয়োজনের ইচ্ছা প্রকাশ করে। তাতে বাংলা একাডেমি ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ও সাড়া দেয়। তবে দ্বিতীয় দফায় করোনার সংক্রমণ রোধে লকডাউন আসায় ১২ এপ্রিল থেকে মেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, গত ১৮ মার্চে থেকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণে বইমেলা শুরু হয়। প্রথম দিন থেকে দুপুর ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বইমেলা চলছিল। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারের জারি করা ১৮ দফা নির্দেশনার কারণে মেলায় সময়সীমা কমিয়ে দুপুর ৩টা থেকে সাড়ে ৬টা করা হয়। এরপর দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মেলার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।

করোনার মহামারির মধ্যে আয়োজিত এই বইমেলায় প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বলে জানিয়েছেন মেলায় অংশ নেওয়া অনেক প্রকাশক। অনেক প্রকাশক মেলায় তাদের স্টল তৈরির খরচও তুলতে পারেননি বলেও জানিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সহযোগিতাও কামনা করেছেন প্রকাশকরা।

এ বিষয়ে বাতিঘর প্রকাশনীর প্রকাশক দ্বীপঙ্কর দাস সারাবাংলাকে বলেন, আমরা যে সময় বইমেলা শুরু করেছিলাম তখন করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। কিন্তু মেলা শুরুর পর হঠাৎ করেই করোনার সংক্রমণ আবারও বৃদ্ধি পায়। এতে করে এবারের মেলায় বিক্রির যে প্রত্যাশা করা হয়েছিল তা পূরণ হয়নি।

করোনা মহামারিকালে বইমেলা আয়োজনের কারণ সম্পর্কে ওসমান গনি বলেন, ‘দেখেন করোনার কারণে মানুষে অনেকটা ঘরবন্দী হয়ে পড়েছিল। অন্য সকল কিছু স্বাভাবিকভাবে চললেও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছিল। আর বইমেলা হলো আমাদের বড় সংস্কৃতিক উৎসবের মধ্যে একটি। তা ছাড়াও চলতি বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। তাই এ সব বিষয়ে বিবেচনায় নিয়ে আমরা  বইমেলা আয়োজন করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে এবারের বইমেলা এতো বড় পরিসরে না করে ছোট পরিসরে করার জন্য কমিটিতে প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু তা মানা হয়নি।’

বইমেলায় অংশ নেওয়া বাংলানামা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী হোসেন শহীদ মজনু বলেন, ‘যে প্রত্যাশা নিয়ে এবারের বইমেলা শুরু করেছিলাম তা পূরণ হয়নি। এমনকি মেলার স্টল তৈরি ও ডেকোরেশনে যে খরচ হয়েছে তাও উঠে আসেনি। এমন অবস্থায় প্রকাশকদের রক্ষায় সরকারের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করি।’

এমন মহামারিকালে বইমেলার আয়োজন ভুল ছিল কি না, জানতে চাইলে বাংলানামার ওই প্রকাশক বলেন, ‘বিষয়টা তেমন নয়। কারণ যখন বইমেলা শুরু হয় তখন পরিস্থিতি আনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এমনটা হয়েছে। এখানে কী করার আছে?’

জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ও সময় প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবারের বইমেলাটা ছিল নিয়ম রক্ষার মেলা। বইমেলার যে ধারাবাহিকতা সেটাই রক্ষা করা হয়েছে মাত্র। এখানে প্রকাশদের কোনো লাভ হয়নি। প্রকাশকরা তাদের খরচ তুলতে পারেননি।’

তবে করোনা মহামারির মধ্যে অনুষ্ঠিত এবারের বইমেলাকে একটু ভিন্নভাবে দেখছেন কথাপ্রকাশের প্রকাশক জসিম উদ্দিন।

তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবারের বইমেলার কারণে অনেক প্রকাশক বেঁচে গেছেন। এখন আমরা ক্ষতির শিকার হলেও বেঁচে আছি। কিন্তু মেলাটা না হলে এই শিল্পটা ধ্বংস হয়ে যেত। সেই অর্থে এবার মেলা সফল বলে আমি মনে করি। আর ঝুঁকি নিয়ে বইমেলা আয়োজন করার জন্যও বাংলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জানাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে এবারের বইমেলায় ছোট ও মধ্যমসারির প্রকাশরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রকাশকদের একটি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আমাদের সমস্যার কথা তুলে ধরব।’

অনেক নিয়মিত প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান আছে যারা লোকসানের বিষয়টি আচ করতে পেরে অংশ নেননি এবারের মেলায়। এদের একটি ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ। বইমেলায় অংশ না নেওয়ার বিষয়ে প্রকাশক জহিরুল আবেদীন জুয়েল সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রথমে এ বছর বইমেলা না করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পরে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে মার্চে বইমেলা করার ঘোষণা দেওয়া হয়। একে তো করোনা মহামারি তার ওপর ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে ঝড়-বৃষ্টি বেশি হয়। এই সময় গরমও বেশি পড়ে। এ সব বিবেচনা করে এবারের মেলায় অংশগ্রহণ করিনি।’

সারাবাংলা/এনএস/একে

করোনা কোভিড-১৯ নভেল করোনাভাইরাস বইমেলা ২০২১ বাংলা একাডেমি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর