জুন নয়, ডিসেম্বরে উৎপাদনে যাবে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র
১৬ এপ্রিল ২০২১ ১০:০৮
ঢাকা: গত বছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ছেষট্টি দিনের সাধারণ ছুটির কারণে প্রায় তিন মাস বন্ধ রাখতে হয়েছে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। ফের শুরু করতে আরও তিন মাস সময় লেগে যায়। যে কারণে আগামী জুন মাসে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের যে প্রথম ইউনিট চালুর কথা ছিল তা হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পিছিয়ে থাকা কাজ শেষ করে ডিসেম্বরে এক ইউনিট উৎপাদনে যেতে পারবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে খুলনার রামপালে কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সাপমারি- কাটাখালী ও কৈর্গদাশকাঠী এলাকায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইউনিট নির্মান প্রক্রিয়া ২০১৪ সালে শুরু হয়। ১ হাজার ৮৩৪ একর জমির ওপরে নির্মিত হওয়া কয়লাভিত্তিক রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাংলাদেশ- ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেড যৌথভাবে নির্মাণ করছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, মূল কাজ শেষ করতে দেরি হলেও ভূমি উন্নয়ন কাজ, সীমানা প্রাচীর ও স্লোপ প্রোটেকশন কাজ, মূল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফেন্সিং কাজ, নির্মাণ কাজের বিদ্যুৎলাইন, নির্মাণ কাজের পানিসহ বেশ কিছু কাজের পুরোটাই শেষ হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি প্রক্রিয়া শুরু গত সাত বছরে ৬৪ শতাংশের মতো কাজ শেষ করা গেছে। নির্মাণ কোম্পানি বাংলাদেশ ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি- বিআইএফপিসিএল। তারা বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুতে পিছিয়ে থাকলেও সংশ্লিষ্ট এলাকার জনকল্যাণমূলক কাজেও এগিয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয়দের জন্য তারা বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ, স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া, বিনামূল্যে ওসুধ বিতরন, শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণের মতো কাজগুলো নিয়মিত করছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মশত বার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরেই বাংলাদেশ- ভারত মৈত্রীর অন্যতম প্রধান স্মারক রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট চালু করার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে তা সম্ভব হয়নি।
এ প্রসঙ্গে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী আফসার উদ্দীন আহম্মেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত বছর করোনার কারনে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ কাজে ভীষণ ক্ষতি হয়। কাজ পিছিয়ে যায়। অনেক কর্মচারী-কর্মকর্তা ছুটিতে থাকায় দীর্ঘ সময় কাজ বন্ধ থাকে। যা ফের শুরু করতে তিন মাস সময় লেগে যায়। তাই আসছে জুনে প্রথম ইউনিট চালু করা সম্ভব না।’
প্রায় সাত বছর আগের নেওয়া এ প্রকল্প নানা কারনে বার বার বাধাগ্রস্থ হয়েছে। প্রকল্প শুরুর আগে থেকেই রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে দেশের পরিবেশবাদীদের ঘোর আপত্তি ছিল। তাদের বক্তব্য, কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার কারনে রামপাল প্রকল্প পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে এবং নিকটবর্তী সুন্দরবনে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ডেকে আনবে। সরকার এর বিপক্ষে যুক্তিও দেখিয়েছে যে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের কারনে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশের কোনো ধরনের ক্ষতি করবে না। নষ্ট হবে না সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য। ওই সময়ে কয়েক দফা সময়সূচি পিছিয়ে ২০২১ সালের জুনে প্রথম ইউনিট চালু করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু করোনার কারণে কাজ বন্ধ থাকায় তা আরো পিছিয়ে এ বছরের ডিসেম্বরে চালুর দিন ঠিক করা হয়।
এ প্রসঙ্গে, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী আফসার উদ্দীন আহম্মেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে যেসব কাজ বাকি রয়েছে তা ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। ওই সময়ে আমরা প্রথম ইউনিট চালুতে যেতে পারব। আর দ্বিতীয় ইউনিট চালু হবে ২০২২ সালের মে মাসে। সব মিলিয়ে এখন ৬৪ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবারও করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বাড়তি রয়েছে। আমরা সরকারি নির্দেশনা মেনে কাজ চালিয়ে নিচ্ছি। স্বাস্থবিধি মেনে শ্রমিকেরা কাজ করছে আর দাপ্তরিক কাজ চলতে নতুন সময়সূচি তৈরি করে।’
তিনি বলেন, ‘অর্ধেক জনবল নিয়ে সীমিত পরিসরে দাফতরিক কাজ চালিয়ে গেলেও মাঠপর্যায়ে কাজ পুরোদমেই চলছে।’
এদিকে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানির জন্য কয়লা আমদানির বিষয় এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নীতিসহায়ক সংস্থা পাওয়ার সেল সূত্রে জানা গেছে, কয়লা আমদানির জন্য দরপত্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন মূল্যায়নের কাজ চলছে। শিগগিরই এ বিষয়ে কার্যাদেশ দেওয়া হবে। এরপর কয়লা আমদানি প্রক্রিয়া শুরু হবে।
উল্লেখ্য, সরকার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। এরমধ্যে বেশ কিছু প্রকল্প বাদ দিতে তালিকা তৈরি করেছে এবং অনুমতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হচ্ছে। যদিও সে উদ্যোগ থেকে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাদ পড়ছে না।
সারাবাংলা/জেআর/একে