ভেঙে দেওয়ার ১৫ দিন পর আবারও অবৈধ ইটভাটা চালু
১৮ এপ্রিল ২০২১ ১৮:০৪
ভোলা: ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় মাওয়া ব্রিকস নামের একটি অবৈধ ইটভাটা প্রশাসনের ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার ১৫ দিনের মাথায় ফের চালু করা হয়েছে। উপজেলার শশীভূষণ থানার রসুলপুর ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের করিমপুর গ্রামে অবস্থিত ওই ভাটায় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কাঠ পুড়িয়ে ইট বানান হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, ওই এলাকার অসহায় ১৩জন কৃষকদের জমি দখল করে দুই বছর আগে স্থানীয় প্রভাবশালী রাসেল পণ্ডিত জোরপূর্বক এই ইটভাটা নির্মাণ করেন। কৃষকের বাৎষরিক লগ্নির টাকা না দিয়ে ভাটা চালিয়ে যাচ্ছে। অনুমোদন না থাকায় পরিবেশ অধিদপ্তর চলতি বছরের ৯ মার্চ ইটভাটার ড্রাম-চিমনি ভেঙে পানি ঢেলে গুড়িয়ে দেয়। পরবর্তীতে ২৩ মার্চ আবার চালু করে ইটভাটা। ইতিপূর্বে আরও কয়েকবার ভেঙে দিলেও ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ভাটাটি ফের চালু করা হয়।
ভোলা পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, কোনো অনুমোদন না থাকার কারণে গত ৯ মার্চ শশীভুষণ থানার রসুলপুর ইউনিয়নের মাওয়া ব্রিকসসহ জেলার ১০টি ইটভাটা ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে অধিদপ্তর। অনুমোদনের জন্য ওই ভাটা এখনো কোনো আবেদন করেনি। একই তথ্য দেয় জেলা প্রশাসনের বিচারিক শাখা।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, শশীভুষণ ও করিমপুর মৌজার মধ্যে প্রায় ২০ একর জমির ওপর ইটভাটাটি গড়ে তোলেন রাসেল পণ্ডিত। গত দুই বছর ধরে গাছ দিয়ে ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। টাক্টরে করে শত শত টন জ্বালানি কাঠ ইটভাটায় ফেলছে। ভেকু মেশিন দিয়ে কৃষকের দখলকরা কৃষি জমি থেকে মাটি তুলে ভাটায় নিয়ে ইট বানায়। তারা আরও বলেন, নিজেরা জমি দিয়ে গ্রামের ভিতরে একটি সড়ক বানিয়েছে। সেই সড়কটিও ইটভাটার গাড়ির কারণে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসি যতোবারই সড়কটি উঁচু করেছে, ততোবারই ধুলা হয়ে উড়ে যায়। আর বর্ষাকালে ডুবে যায়। কারণ, পুরো শুকনো মৌসুম ইটভাটার গাড়ি চলে। মানুষের আর রিকশা-গাড়িতে ওঠা হয় না। কারণ, বর্ষায় পানি আর শুষ্ক মৌসুমে সড়ক ভাঙা ও ধুলা ওড়ার কারণে রিকশাও যেতে চায় না। ভাটার কারণে আশপাশের মানুষ দুই বছর ভুগছে।
করিমপুরের বাসিন্দা মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, তার বাড়ি ৫০ শতাংশ জমির ওপর, সেই জমি থেকে ২০ শতাংশ রাসেল পণ্ডিত জোর করে নিয়ে গেছে মাওয়া ব্রিকস বানাতে। জমির দামও দেয় না, বাৎসরিক লগ্নি মূল্যও দেয় না।
এভাবে কাজল মিয়ার নিয়েছে এক একর ৬০ শতাংশ, ইউনুস হাওলাদার পক্ষের প্রায় ১০ একর। তিনি বলেন, ওই এলাকার নারকেল, সুপারিসহ গাছের ফল-ফলাদি মুকুলেই জ্বলে যাচ্ছে।
ভোলার দখল হওয়া জমির মালিক মো. হারুন মিয়া বলেন, তার বাবা মোজাম্মেল হককে সরকার ১৯৭৫ সালে দেড় একর জমি বন্দোবস্ত দিয়েছিল। বিগত সময়ে সেই জমি ভোগ-দখল করে আসছিল তার পরিবার। সেই জমিতে বছর দুই আগে রাসেল পণ্ডিত জোর করে ইটভাটা নির্মাণ করে। সেখানে আমরা ধান চাষ করতাম এখন ভেকু মেশিন দিয়ে ১৫-২০ফুট গভীর করে মাটি কেটে ভাটার ইট তৈরি করছে । তিনি বলেন, মাওয়া ব্রিক বানাতে ১৩ জন মালিকের প্রায় ২০ একর জমি দখল করেছে রাসেল পণ্ডিত।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রসুলপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও ইটভাটার মালিক রাসেল পণ্ডিত বলেন, ভাটার বেশিরভাগ জমি তার ক্রয় করা সম্পত্তি। কিছু জমি এখনো কিনতে বাকি আছে। দ্রুত জমির মালিকের সঙ্গে সমাধান হয়ে যাবে। ভাটার অনুমোদন না থাকার বিষয়ে স্বীকার করে রাসেল বলেন, অনুমোদন চাওয়ার আগে ভাটাটি পরিবেশ উপযোগী করতে হবে। সে কারণেই ইট পোড়ান হচ্ছে।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমিন বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে ইটভাটায় অভিযান চালান হবে।
ভোলা পরিবেশ অধিপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল মালেক মিয়া বলেন, মাওয়া ব্রিকস নামক ইটভাটার কোনো কাগজপত্র নেই। আবাসিক এলাকায় হওয়ায় ভবিষ্যতেও অনুমোদন পাওয়ার আশা নেই। কারণ ভাটাটির চারপাশে কৃষি জমি ও জনবসতি। শুনেছি ভাটাটি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইট পোড়াচ্ছে। ‘লকডাউন’ উঠলে আমরা ফেড় অভিযান চালাব।
সারাবাংলা/এনএস