বিদ্যুৎকেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি
১৮ এপ্রিল ২০২১ ২১:১২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে চীনের একটি কোম্পানি ও এস আলম গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে পাঁচ শ্রমিক নিহতের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে চট্টগ্রামের ছাত্র-যুবসহ প্রগতিশীল বিভিন্ন সংগঠন।
রোববার (১৮ এপ্রিল) বিকেলে বাসদ, যুব ইউনিয়ন ও ছাত্র ইউনিয়নের পৃথক কর্মসূচি থেকে এ দাবি জানানো হয়। সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নিন্দা এবং প্রতিবাদও জানানো হয়েছে।
শনিবার সকালে বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা ইউনিয়নের পূর্ব বড়ঘোনা এলাকায় নির্মাণাধীন ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশের গুলিতে অন্তত পাঁচ শ্রমিক নিহত হন। আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ২০-২১ জন, যাদের মধ্যে পুলিশ ও শ্রমিক আছেন।
এর প্রতিবাদে চট্টগ্রাম জেলা যুব ইউনিয়ন রোববার বিকেলে নগরীর চেরাগি চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করে। সংগঠনের চট্টগ্রামের সভাপতি রিপায়ন বড়ুয়ার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন সহ-সভাপতি শ্যামল লোধ, সহকারী সাধারণ সম্পাদক জাবেদ চৌধুরী, রুপন কান্তি ধর, সাংগঠনিক সম্পাদক রাশিদুল সামির, টুটন দাশ, বিপ্লব দাশ, জুয়েল বড়ুয়া, মিঠুন বিশ্বাস, রবি শংকর সেন।
যুব ইউনিয়নের নেতারা বলেন, এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন এসএস পাওয়ার লিমিটেডের বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে শ্রমিক সরবরাহ করে তৃতীয় একটি কোম্পানি। এ কোম্পানি শ্রমিকদের দীর্ঘদিন ধরে বেতন-ভাতা নিয়ে অনিয়ম করছে। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করায় পুলিশ শ্রমিকদের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছে। গুলি করে পাঁচজনকে হত্যা করেছে। আমরা এই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি। একইসঙ্গে লুটেরা ব্যবসায়ীদের স্বার্থে পুলিশ বাহিনীকে দলীয় ক্যাডারের মতো ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
বিকেলে নগরীর চেরাগির মোড়ে একই ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে জেলা ছাত্র ইউনিয়ন। সভাপতি এ্যানি সেনের সভাপতিত্বে ও অয়ন সেনগুপ্তের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন জেলা কমিটির সদস্য এস এম নাবিল ও নিলয় সেনগুপ্ত। সংহতি জানিয়ে বক্তৃতা করেন চুয়েট ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য চিরঞ্জিত দাশ, রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সভাপতি অভিজিৎ বড়ুয়া জিকু।
ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, সরকার উন্নয়নের নামে সারাদেশে লুটপাটের এক বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করেছে। তথাকথিত উন্নয়নে দেশের সাধারণ জনগণের কোন স্বার্থরক্ষা তো হচ্ছেই না বরং লুটেরা শ্রেণির স্বার্থরক্ষাই প্রাধান্য পাচ্ছে। উন্নয়নের নামে লুটেরা শ্রেণির পকেটভারি করছে সরকার। আমরা পরিবেশ বিধ্বংসী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের দাবি করছি। একইসঙ্গে বলতে চাই, উন্নয়নের নামে লুটপাট, কর্তৃত্ববাদী আচরণ বন্ধ না হলে ছাত্র-জনতা কঠোর সংগ্রামে অবতীর্ণ হবে।
এদিকে চট্টগ্রাম নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন সংগঠনের জেলা কমিটির সদস্য নুরুল হুদা নিপু, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম নগরের সভাপতি রায়হান উদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সরকার এস আলম গ্রুপের ঋণের ৩ হাজার কোটি টাকা মাফ করে দিয়েছে। প্রণোদনার নামে মালিকদের হাজার-হাজার কোটি টাকা নামমাত্র সুদে ঋণ দিয়েছে। এসময় বাঁশখালীতে যখন শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য দাবিতে বিক্ষোভ করছিল, তখন তাদের দাবিকে কর্ণপাত না করে উল্টো পুলিশ দিয়ে হামলা করা হয়েছে এবং গুলি চালিয়ে নির্মমভাবে পাঁচজন শ্রমিককে হত্যা করা হয়েছে। আবার শ্রমিকদের নামে উল্টো মামলা দেওয়া হয়েছে। আমরা বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম