আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ভবিষ্যৎ কী?
১৯ এপ্রিল ২০২১ ০৫:২৭
ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতিতে স্বস্তিতে নেই কেউই। নানা ধরনের অনিশ্চয়তার মুখোমুখি সবাই। এর মধ্যেও অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রবাসীদেরও। মহামারির এই সময়ে দেশে আসা প্রবাসী শ্রমিকদের বেশিরভাগই সময়মতো ফিরতে পারেননি কর্মস্থলে। সবশেষ চলতি মাসের বিভিন্ন ফ্লাইটের জন্য যারা টিকিট কেটেছিলেন, তারা পড়েছেন মহাবিপদে। কারণ আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেছে। আবার বিশেষ ফ্লাইট চালু হলেও টিকিট যেমন মিলছে না, তেমনি সেই বিশেষ ফ্লাইটও হরদম বাতিল হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সরকারও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর বিষয়ে এখন পর্যন্ত সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা দিতে পারছে না।
এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক ফ্লাইট নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই সোমবার (১৯ এপ্রিল) বসছে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক। এই বৈঠক থেকেই সিদ্ধান্ত হবে বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ভবিষ্যৎ কী। ২০ এপ্রিলের পর সরকারের জারি করা বিধিনিষেধ বাড়লে সেই সময়ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকবে কি না, সেই সিদ্ধান্তও আসবে এই বৈঠক থেকে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিধিনিষেধ বাড়লে কেবল পাঁচ দেশের সঙ্গে ফ্লাইট চালুর সিদ্ধান্ত বহাল থাকার সম্ভাবনাই বেশি।
তবে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) একাধিক সূত্র বলছে, লকডাউন বাড়লেও তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালাতে চায়। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার তাদের নেই। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কিংবা আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক থেকেই এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বেবিচক এবং বেসরকারি বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, সোমবারের ‘মহাগুরুত্বপূর্ণ’ আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী ছাড়াও বিমান মন্ত্রণালয়ের সচিব, বেবিচক চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান, বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও উপস্থিত থাকবেন। তাদের সবার মধ্যে আলোচনা থেকেই সিদ্ধান্ত হবে ফ্লাইট চলবে কি না।
জানতে চাইলে রোববার (১৮ এপ্রিল) রাতে বাংলাদেশ বিমানের সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল সারাবাংলাকে বলেন, আগামীকাল (সোমবার) আমাদের একটি বৈঠক আছে। বৈঠকের বিষয়ে এখন কিছুই বলা যাবে না। কারণ আগামীকালের বৈঠক থেকে কী সিদ্ধান্ত হবে, সেটি তো আর আমার পক্ষে বলা সম্ভব না। যেভাবে নির্দেশনা আসবে, বিমান বাংলাদেশ সেভাবেই তার দায়িত্ব পালন করবে।
জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, আমরা ফ্লাইট চালাতে চাই। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আমরা ফ্লাইট চালাতে চাই। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা আগামীকাল (সোমবার) সেই সুপারিশ করব। এই খাত অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর ক্ষতি হতে দেওয়া উচিত হবে না। তবে এ বিষয়ে আমি তো একা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। সিদ্ধান্তের জন্য আগামীকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সরকার বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যেভাবে চাইবে, আমাদের সেভাবেই কাজ করতে হবে।
দেশে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বাড়তে শুরু করলে সরকার নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়। গত ২৯ মার্চ জারি করা ১৮ দফা নির্দেশনার পর ৫ এপ্রিল থেকে জারি করা হয় বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ। পরে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে ১৪ এপ্রিল থেকে জারি করা হয় আরও কঠোর বিধিনিষেধ।
এর মধ্যে ইউরোপের দেশগুলোসহ ৩৭ দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়। কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের সময় আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও বন্ধ করে সরকার। ফলে ছুটিতে বা অন্য কারণে দেশে আসা প্রবাসীরা আটকা পড়েন। তাদের দাবির মুখে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান ও সিঙ্গাপুর— এই পাঁচটি দেশের সঙ্গে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ফ্লাইট চালু হয়। তবে এসব বিশেষ ফ্লাইট চালু হলেও প্রথম দুই দিনে অনেকগুলো ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। ফলে এরকম বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থাই থাকবে নাকি নিয়মিত আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হবে— সে সিদ্ধান্তের দিকে গভীর উৎকণ্ঠা নিয়ে তাকিয়ে রয়েছেন প্রবাসীরা।
এমন প্রবাসীদের একজন রসুল রায়হান একজন। মালয়েশিয়া প্রবাসী রসুল মাসখানেক আগে দেশে এসেছিলেন। এখন আর ফিরতে পারছে না। জানালেন, তার ভিসার মেয়াদও শেষ হবে এ মাসেই। ফলে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট যদি চালু না হয় তাহলে তিনি কর্মস্থলে ফিরতে পারবেন না। ভিসা না বাড়লে তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
তার মতোই আরেক প্রবাসী আবু রায়হান থাকতেন সৌদি আরব। তিন মাস আগে দেশে ফিরেছিলেন। জানালেন, এ মাসেই শেষ হচ্ছে তারও ভিসার মেয়াদ। সে কারণেই আগাম টিকিট কেটে রেখেছিলেন। ফ্লাইট বন্ধ, বিশেষ ফ্লাইট চালুর জটিলতায় আগাম কেটে রাখা টিকিটে ফিরতে পারেননি সৌদি আরবে। এখন টিকিট নবায়নও করতে পারছেন না।
প্রবাসীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট নিয়ে সরকারের স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া উচিত। ফ্লাইট বন্ধ থাকলে কত দিনের জন্য বন্ধ থাকতে পারে সে বিষয়টি যেমন জানানো উচিত, তেমনি বিশেষ ফ্লাইট চালু থাকলে সেটি যেন ঠিকমতো চলাচল করে সে নির্দেশনাও থাকা উচিত।
আরও পড়ুন-
প্রবাসী কর্মীদের জন্য শনিবার থেকে বিশেষ ফ্লাইট
বিশেষ ফ্লাইটের প্রথম দিনে ধাক্কা, কপালে চিন্তার ভাঁজ
সারাবাংলা/এসজে/টিআর