অ্যাডোবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা চার্লস গেসকি মারা গেছেন
১৯ এপ্রিল ২০২১ ০৬:২১
বিশ্বব্যাপী গ্রাফিক্স ও ডেস্কটপ পাবলিশিং খাতের অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান অ্যাডোবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা চার্লস ম্যাথিউ গেসকি মারা গেছেন। জনপ্রিয় ডক্যুমেন্ট ফাইল ফরম্যাট পিডিএফ (পোর্টেবল ডক্যুমেন্ট ফাইল) উদ্ভাবনেরও অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি।
অ্যাডোবি’র এক বিবৃতিতে চার্লস জেসকির মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, গত শুক্রবার ৮১ বছর বয়সে (১৬ এপ্রিল) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন জেসকি। তবে তার মৃত্যুর খবরটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশ পেয়েছে রোববার (১৮ এপ্রিল)।
চার্লস গেসকি ১৯৮২ সালে জন ওয়ারনকের সঙ্গে যৌথভাবে গড়ে তোলেন অ্যাডোবি। আজকের এই ডিজিটাল যুগে পিডিএফ ফাইল ফরম্যাটই কেবল নয়, অ্যডোবি অ্যাক্রোব্যাট, ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, প্রিমিয়ার প্রো’র মতো বহুল ব্যবহৃত সফটওয়্যার উপহার দিয়েছে গেসকি-ওয়ারনকের গড়ে তোলা অ্যাডোবি। ডেস্কটপ পাবলিশিংয়ের সূচনাই বলা চলে এই কোম্পানির হাত ধরে। আজকের অডিও-ভিজুয়াল যুগেরও বড় অংশ দখল করে রেখেছে এই অ্যাডোবি।
চার্ল জেসকি’র মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন অ্যাডোবি’র আরেক সহপ্রতিষ্ঠাতা ড. জন ওয়ারনক। তিনি বলেন, তার মতো এত ভালো, পছন্দনীয় কিংবা সক্ষম ব্যবসায়িক অন্য কোনো অংশীদারের কথা আমি কল্পনাও করতে পারি না। তার প্রয়াণ আমাদের জীবনে বড় একটি শূন্যতা। তার পরিচিত প্রত্যেকেই এটি স্বীকার করবেন।
অ্যাডোবি’র সিইও শান্তনু নারায়ণ শোকবার্তায় বলেন, কেবল অ্যাডোবি কমিউনিটি নয়, গোটা প্রযুক্তি শিল্পের জন্যই চার্লসের মৃত্যু এক অপূরণীয় ক্ষতি। দশকের পর দশক তিনি এই খাতের একজন পথপ্রদর্শকই কেবল নয়, একজন নায়ক হয়ে ছিলেন। মানুষ কিভাবে সৃজনশীলতাকে কাজে লাগাবে এবং পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করবে, অসাধারণ সব সফটওয়্যার উপহার দেওয়ার মাধ্যমে তাকে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন গেসকি ও ওয়ারনক।
১৯৩৯ সালে ওহাইও’তে জন্ম নেওয়া গেসকি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন জ্যাভিয়ের ইউনিভার্সিটি থেকে। গণিতে স্নাতকোত্তর গেসকি এই বিষয়েই শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন জন ক্যারল ইউনিভার্সিটিতে। পরে পিটসবার্গের কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি পিএইডি করেন কম্পিউটার বিজ্ঞানে। এরপর যোগ দেন আরেক বিখ্যাত কোম্পানি জেরক্সে। সেখানেই পরিচয় ওয়ারনকের সঙ্গে। দু’জনে মিলে পরে জেরক্স ছেড়ে দিয়ে নিজেরাই গড়ে তোলেন অ্যাডোবি।
১৯৮৬ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৪ সালের জুলাই পর্যন্ত অ্যাডোবি’র চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) ছিলেন গেসকি। এর মধ্যে ১৯৮৯ সাল থেকে ২০০০ সালের এপ্রিলে অবসর নেওয়ার আগ পর্যন্ত ছিলেন অ্যাডোবির প্রেসিডেন্ট। ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ওয়ারনকের সঙ্গে অ্যাডোবির চেয়ারম্যান অব দ্য বোর্ড ছিলেন। গত বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এই বোর্ডের সদস্য ছিলেন তিনি। ওই এপ্রিলে তাকে ইমেরিটাস বোর্ড মেম্বার করা হয়।
অ্যাডোবি গড়ে তোলা থেকে শুরু করে ডেস্কটপ পাবলিশিং ও প্রযুক্তি খাতে অনন্য অবদান রাখার জন্য ২০০৯ সালে গেসকি ও ওয়ারনককে সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ন্যাশনাল মেডেল অব টেকনোলজিতে ভূষিত করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
সারাজীবন অনন্য সফলতার সাক্ষী চার্লস জেসকি ব্যক্তিজীবনে ছিলেন ভীষণ বিনয়ী। সে কথা বলছেন তার স্ত্রী ন্যান্সি জেসকি’ও। তিনি বলেন, তার স্ত্রী হিসেবে আমি বলতে পারি তিনি অত্যন্ত বিনয়ী ছিলেন। অনন্য সফলতা তিনি অর্জন করেছেন। তা নিয়ে তিনি সবসময় গর্ব করতেন। তবে এই সাফল্যকে কখনো প্রচার করতে চাইতেন না তিনি।
সারাবাংলা/টিআর