Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রিসোর্ট ভেঙে বের করে নিয়ে যান— অনুসারীদের বলেছিলেন মামুনুল

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২২ এপ্রিল ২০২১ ২০:০২

ঢাকা: ৩ এপ্রিল, বিকেল ৩টা। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়েল রিসোর্ট। নারীসহ জনতার হাতে অবরুদ্ধ হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। তার দাবি, আটক নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। দুই বছর আগে তাকে বিয়ে করেছেন। সব তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। এরপর সাংবাদিক, পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন এসে মামুনুলের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করতে রাত আটটা পার হয়ে যায়। পুলিশ যাচাই-বাছাই শেষে হয়তো ছেড়েও দিতো তাদের। কিন্তু তার আগেই মামুনুলের অনুসারীরা এসে মূল গেটসহ পুরো রিসোর্টে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। এবং এক পর্যায়ে তারা মামুনুল হককে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

এদিকে ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিতে থাকে মামুনুল। অনুসারীরা তার কথা মতো সারাদেশে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক সরগরম হয়ে ওঠে হেফাজতের সমর্থকরা। রিসোর্টে হামলার ঘটনায় একাধিক মামলা হয়। ঘটনার পর থেকে বেশকিছু গা-ঢাকা দিয়ে ছিল মামুনুল। এক পর্যায়ে মোহাম্মদপুর থানার একটি চুরির মামলায় মামুনুল হককে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেই মামলায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে সম্প্রতি হেফাজতের নাশকতার ঘটনায় ১৮টি এবং ২০১৩ সালের পাঁচটিসহ মোট ২৩টি মামলার তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)। ডিবিরি রিমান্ড শেষ হলে আগামী সপ্তাহে সোনারগাঁওয়ের নাশকতার মামলায় মামুনুল হককে গ্রেফতার দেখাতে পারে সিআইডি।

সিআইডি প্রধান পুলিশের অতিরিক্ত আইজি ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এরইমধ্যে রিসোর্টে হামলার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। সোনারগাঁও থেকে স্থানীয় হেফাজতের যেসব নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন তারাও বেশকিছু তথ্য দিয়েছেন। মামুনুল হককে খুব শিগগিরই গ্রেফতার দেখানো হবে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হতে পারে রিমান্ডে। আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলতে পারে।

বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) সিআইডির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘রিসোর্টে হামলার শুধুমাত্র ভিডিও ফুটেজ নয় বরং হামলার আগে কীভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে সেই কল রেকর্ডও উদ্ধার করা হয়েছে। পরিকল্পনার মূলে কে ছিল, কীভাবে হেফাজত সমর্থকরা একজোট হয়ে রিসোর্টে হামলা করল। হামলার নেতৃত্বে কে কে ছিলেন- তার সবই বের করা সম্ভব হয়েছে। এখন শুধু গ্রেফতার দেখানোর পালা।’

আরও পড়ুন:

হামলায় মামুনুলের কী ভূমিকা ছিল? জানতে চাইলে সিআইডির ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ওইদিন রাত আট বেজে গেলেও মামুনুল হক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিয়ে সংক্রান্ত কোনো ডকুমেন্টই দিতে পারছিলেন না। পুলিশ কর্মকর্তারাও সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না, তাকে ছেড়ে দেবে নাকি থানায় নেবে। আবার তার বিরুদ্ধে যারা সোচ্চার ছিলেন তারাও ছেড়ে দিতে দিচ্ছিল না। এরই এক ফাঁকে মামুনুল বাথরুমে যাওয়ার নাম করে ফোনে হেফাজতের নেতাকর্মীদের বলেন, যেকোনো উপায়ে আমাকে রিসোর্ট থেকে বের করেন। প্রয়োজনে সবকিছু ভেঙে আমাকেসহ ওই নারীকে উদ্ধার করেন। পরে যা হবার দেখা যাবে।’

সিআইডির ওই কর্মকর্তা বলতে থাকেন, ওই ফোন পেয়েই মূলত হেফাজতের নেতাকর্মীরা রিসোর্টে হামলা চায়। তছনছ করে দেয় রিসোর্টের ভেতর ও বাহির। এরপর মামুনুল হকসহ ওই নারীকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। খুব গুরুত্বের সঙ্গে মামলাগুলোর তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হবে।’

অন্যদিকে মামুনুল হক ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে প্রতিদিন নতুন নতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন। তার তথ্যানুযায়ী একের পর এক হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১৬ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মামুনুলের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মাহবুব আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘রিমান্ডে হেফাজত নেতাদের বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। একজনের তথ্যের সঙ্গে আরেকজনের তথ্য মেলানো হচ্ছে। যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। অকাট্য তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযোগ পত্র তৈরি করা হবে।’

মামুনুল নতুন কোনো তথ্য দিয়েছেন কি না? জানতে চাইলে যুগ্ম কমিশনার বলেন, ‘প্রতিদিনই কোনো না কোনো তথ্য দিচ্ছেন মামুনুল। আগের তথ্যগুলো যাচাই করা হচ্ছে। তথ্যের আলোকে দালিলিক প্রমাণ সংগ্রহের কাজ চলছে। অন্যান্য মামলায় তাকে এখনো গ্রেফতার দেখানো হয়নি। কাজেই ভিন্ন ভিন্ন তথ্য আগেই নেওয়াটা সমীচীন নয়। অন্যকোনো সংস্থাও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মামলার তথ্যের ব্যাপারে ওই সংস্থাই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।’

এদিকে ১৬ নেতাকে গ্রেফতারের বিষযে হেফাজতে ইসলামের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তবে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা সহকারী মহাসচিব ফজলুল করিম কাসেমী হোয়াটসঅ্যাপে সারাবাংলার এই প্রতিবেদকে বলেন, ‘সরকার মিথ্যা মামলায় হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতাদের একের পর এক গ্রেফতার করে রিমান্ডের নামে নির্যাতন চালাচ্ছে। আমরা বেশ কয়েকবার বিবৃতি দিয়েছি, অবিলম্বে আলেমদের মুক্তি দেওয়া হোক। আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করে নেতাদের মুক্তি দাবি করেছি। বোধোদয় হলে সরকার মুক্তি দেবে। আর না হলে আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।’

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

মামুনুল হক রিসোর্ট কাণ্ড হেফাজতে ইসলাম

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর