গানে গানে ধান কাটায় উৎসাহ দিতে পরামর্শ শেখ হাসিনার
২২ এপ্রিল ২০২১ ২২:৫৮
ঢাকা: কৃষকের ধান কাটাকে উৎসবে পরিণত করতে আঞ্চলিক গানের ওপর গুরুত্বারোপ করে কৃষক লীগকে নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাক্কার চলমান পরিস্থিতিতে আগাম বন্যায় যেন ধান নষ্ট হয় তাই হাওর এলাকাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ধান কাটাকে কৃষক ও শ্রমিকদের কাছে উৎসবমুখর করার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
দলীয় সূত্র জানা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিকে শ্রমিক সংকট ও আগাম বন্যায় যেন হাওরের ধান ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য বোরো মৌসুমে কৃষকদের ধান কাটায় পাশে থাকার জন্য গতবারের ন্যায় এবার নির্দেশনা দিয়েছেন সহযোগী সংগঠনের নেতাদের। বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) সকালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের এক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যকে কৃষকের ধান কাটাকে উৎসাহ দিয়ে উৎসবমুখর করতে অঞ্চলভেদে ধান কাটা গানে গানে উৎসাহ সৃষ্টির নির্দেশনা দেন। এরপর আওয়ামী লীগের ওই সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ্রকে দলীয় সভাপতির নির্দেশনাটি অবহিত করেন।
কারণ চলমান লকডাউনের কারণে শ্রমিক সংকট নিরসন দেখা দেয় তাই বিভিন্ন এলাকা থেকে ধান কাটা শ্রমিকরা যেন নির্বিঘ্নে এসে ধান কাটতে পারে, গতবারের মতো এবারও এ বিষয়ে ১৯ এপ্রিল সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নির্দেশনা দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
প্রসঙ্গত, বোরো মৌসুমে হাওরে এখন চলছে ধান কাটার উৎসব। শ্রম–ঘামে ফলানো সোনার ধান গোলায় তোলার উৎসব। দিনভর ধান কাটা, মাড়াই ও শুকাতে ব্যস্ত কৃষক পরিবারের লোকজন। এবার আবহাওয়া ভালো। ঝড়-বৃষ্টি কম, আগাম বৃষ্টি নেই। শ্রমিকের সংকট নেই। তবে রয়েছে আগাম বন্যার শঙ্কা। তাই চলমান পরিস্থিতিতে এখন কৃষকরা যাতে খুশি মনে ধান গোলায় তুলতে পারে, সেজন্য ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনের নেতাদের প্রতি এ নির্দেশনা দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
এ ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে সারাদেশে কৃষকের ধান কাটার কার্যক্রম শুরু করেছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ কৃষক লীগ। বুধবার কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলা সুতারপাড়া ইউনিয়নের গেরাজুরের হাওড়ে কৃষক মোহাম্মদ জালাল মিয়ার ক্ষেতের ধান কেটে দেওয়ার মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। গতকাল কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতির নেতৃত্বে কৃষক লীগের কেন্দ্রীয়, জেলা, উপজেলার নেতাকর্মীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
এ বিষয়ে কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ সারাবাংলাকে বলেন, ‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কোভিড-১৯ সংক্রমণের সময় আগাম বন্যা এবং খাদ্য সংকট যেন না হয় তাই এই বোরো মৌসুমে লকডাউনের কারণে শ্রমিক সংকট নিরসন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন এলাকায় ধান কাটা শ্রমিক পাঠানো এবং গতবারের মত এবারও কৃষক লীগকে ধান কাটার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা হাওর অঞ্চলে যেখানে আগাম ধান হয় এবং ধান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, আমরা এসব এলাকা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়ে গতকাল কিশোরগঞ্জে ধান কেটেছি এবং সেখানে প্রতিটি হাওরে কেটে ধান মাড়াই করা থেকে ঘরে তোলা পর্যন্ত কৃষকের পাশে থাকার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে এসেছি। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা ২৪ এপ্রিল সুনামগঞ্জের হাওরে কৃষক লীগের পক্ষ থেকে ধান কাটতে যাব এবং নেতাকর্মীদেরকে নির্দেশনা দিয়ে আসব।’
‘এরপর ২৮ এপ্রিল নেত্রকোনা হাওরে যাব। এইভাবে কৃষকের পাশে থেকে হাওর অঞ্চলের ধানগুলি কেটে দেয় এবং পরবর্তীতে যখন সারাদেশে ধান পাকার সময় হয়ে আসবে, তখন যেখানেই সমস্যা হবে, যেখানেই কৃষকরা ধান কাটা নিয়ে সমস্যায় পড়বে, কৃষক লীগের পক্ষ থেকে তাদের পাশে থাকবে। কোভিড-১৯ সংক্রমণের সময় কৃষকের দুঃখ দুর্দশা নিরসনে কৃষক লীগ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় পাশে থাকবে। তিনি এই ধান কাটার কর্মসূচি সামাজিক সুরক্ষা বিধি মেনে অনুসরণ করে ধান কাটার উৎসব হিসাবে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার নির্দেশনা দিয়েছেন’ বলেন কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আপনাদের কি আঞ্চলিক তথা ধান কাটা গানে গানে কৃষকের ধান কাটাকে উৎসবমুখর করার কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন কি না? এ বিষয়ে সমীর চন্দ বলেন, ‘ধান কাটার গান; যেগুলো আমার সাইজ্যা ভাই, মাইজ্যা ভাই কই গেলো রে, চলো ধান কাটিরে…এমন আঞ্চলিক গানগুলির মধ্য দিয়ে তো বাঙালির কৃষ্টি সংস্কৃতি জড়িত। তাই গ্রামের কৃষাণ কৃষাণীরা যেভাবে সাধারণ সময়ে গুনগুনিয়ে গলা ছেড়ে মাঠে গান করে, এইভাবে ধান কাটার কর্মসূচি পালন করার নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে ওনি কঠোরভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে এই কর্মসূচি যেন পালন করা হয়।’
এদিকে গত বছর করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির চলমান সময়েও কৃষকের ধান কাটতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা মাঠে নামে। এ ধারাবাহিকতায় খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার দলের নেতাকর্মীদের প্রশংসা করেন। তিনি গত বছর (২৩ জুন) রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমিতে আইন ও প্রশাসন কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কোনো কাজই ছোট কাজ নয় উল্লেখ করে বলেছেন, একবার ফুলপ্যান্ট পরলে আর লুঙ্গি পরা যাবে না বা গামছা পরে মাঠে যাওয়া যাবে না এ চিন্তাটা যেন মাথায় না আসে। মানুষকে বলতে হবে, বোঝাতে হবে। প্রয়োজনে সব কাজ করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি তো বলেছিলাম দরকার হলে আমি নিজে যাবো। আমার চোখে অপারেশন না হলে আমি ঠিকই চলে যেতাম। আমি দেখিয়ে দিতাম আমার কাছে সব কাজ সমান।’
সারাবাংলা/এনআর/একে