বৃষ্টির অপেক্ষায় আমের রাজধানী
২৭ এপ্রিল ২০২১ ১৮:১২
চাঁপাইনবাবগঞ্জ: দেশে চলছে প্রচণ্ড তাপদাহ। গ্রীষ্ম শুরু হলেও এখন পর্যন্ত বলতে গেলে বৃষ্টির দেখা নেই। এদিকে আমের রাজধানীখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমগাছগুলোর প্রায় ৯৮ ভাগেই গুটি এসেছে। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় গুটির স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত হচ্ছে। ফলে প্রচণ্ড তাপদাহে আম উৎপাদনে চরম বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন চাষীরা। বৃষ্টি না হওয়ায় আমচাষে একদিকে যেমন খরচ বাড়বে, তেমনি ফলনও কমে যাওয়ার আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
আম চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রধান অর্থকরী ফসল হওয়ায় এর উৎপাদনকে ঘিরেই এ অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণের কারণে গতবছর আমচাষীদের বিপুল পরিমাণ লোকসান গুনতে হয়েছে। আবার ফিরেছে আমের মৌসুম। কিন্তু গাছে গাছে মুকুল ও গুটি আসতে দেখার পরেও বৈরী আবহাওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষের মুখের হাসি মলিন হয়ে গেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, শিবগঞ্জ, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট উপজেলার বিভিন্ন আমবাগান ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব গাছেই গুটি এসেছে। জাতভেদে আমের গুটির সাইজ হয়েছে ছোট-বড়। বৃষ্টি না হওয়ায় আমের গুটি স্বাভাবিকভাবে বড় হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আমচাষীরা। এমনকি বৃষ্টির অভাবে আমের গুটি ঝরে পড়ছে বলে জানান গবেষকরা।
শিবগঞ্জ উপজেলা নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নের বিরামপুর এলাকার আম চাষী জিয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে বেশি মুকুল এসেছিল এ বছর। মুকুল ফুটে আমের গুটিও হয়েছে ব্যাপক। তবে এসব গুটি টিকছে না। গুটি ঝরে পড়ার কারণ হলো বৃষ্টির পানি নেই। বৃষ্টি হলে গুটির ডাটা শক্ত হয়।’
তিনি জানান, গুটি থাকা অবস্থায় গাছ প্রচুর পানি টানে। কিন্তু বৃষ্টির পানি না হওয়ায় কয়েক দফা শ্যালো মেশিন লাগিয়ে পানি দিতে হয়েছে। এতে খরচ আরও বেড়ে গেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের আরামবাগের মো. তহিদুল ইসলামের বাগান রয়েছে সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের নশিপুরে। তিনি বলেন, ‘এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে যে, পানিই এখন আমের জন্য প্রাণ। আর বৃষ্টির পানি খুব জরুরি দরকার। কয়েকদিন থেকে আমের গুটি ঝরে পড়ছে। এমন করে গুটি ঝরতে থাকলে ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। গাছের গোড়ায় বারবার পানি দিচ্ছি। কিন্তু এই পানিতে কি আর বৃষ্টির মতো কাজ হয়? বৃষ্টির পানি হলে আমের গুটি দ্রুত বড় হবে। এমনকি মজবুতও হবে।’
আম ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, বাগানে বাগানে শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ চলছে। অতিরিক্ত খরার কারণে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। ফলে পানি তুলতেও বেগ পেতে হচ্ছে। তাই আমচাষীরা এখন বৃষ্টির পানির দিকে তাকিয়ে আছে।
আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব ও আম গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এই মূহূর্তে আমের গুটি রক্ষা করতে বৃষ্টির পানি খুব প্রয়োজন। একবার বৃষ্টি হলে খুব দ্রুত আম বড় হয়ে যাবে। এমনকি নানারকম কীটনাশক দূর করতেও কাজ করবে বৃষ্টির পানি।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, গত বছরের ৯ অক্টোবর চাঁপাইনবাবগঞ্জে সর্বশেষ বৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে গত কয়েকদিন থেকে প্রচণ্ড রোদ। এতে আমের গুটি ঝরে পড়ছে। গাছের গোড়ায় বেশি পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা ও ভালো ফলন পেতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমচাষীদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী দুয়েকদিনের মধ্যেই বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টি হলে কৃষকদের জন্য খুবই ভালো হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, জেলার পাঁচ উপজেলায় প্রায় ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। এসব বাগানের প্রায় ২৭ লাখ গাছ থেকে আড়াই লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।
সারাবাংলা/পিটিএম