হাওরে ধান কাটা শেষের দিকে, ভালো ফলনে খুশি কৃষক
২৭ এপ্রিল ২০২১ ২৩:০৩
ঢাকা: দেশের হাওর এলাকায় এরই মধ্যে ৭০ শতাংশ জমির বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে। আর এখন পর্যন্ত সারাদেশে বোরো ধান কাটায় অগ্রগতি ১৮ শতাংশ। পাকা ধানের গন্ধে মাঠে এখন কৃষকের দম ফেলার ফুসরত নেই। ধান কাটা চলছে উৎসব আর আবহে। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশে কঠোর বিধিনিষেধ চললেও ফসলের মাঠে তেমন কোনো শ্রমিক সংকটও নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হিট শকে ধানের কিছুটা ক্ষতি হলেও ফলনে তেমন বড় কোনো প্রভাব পড়েনি। অন্যদিকে ভালো ফলন পাওয়ায় কৃষক খুশি। এবার ধানের দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ৮০০ থেকে ৯৫০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রির তথ্য পাওয়া গেছে।
জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, এখন পর্যন্ত ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে। মাঠে শ্রমিক সংকট নেই। ধান কাটার জন্যে আধুনিক যন্ত্র হারভেস্টার দেওয়া হয়েছে। হাওরে এরই মধ্যে ৭০ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। সারাদেশে আবাদি জমির ১৮ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। এ বছর রোদ থাকায় বোরো ধানের জন্যে আরও ভালো হয়েছে।
আরও পড়ুন- হিট শকে বোরো আবাদে ৩২৮ কোটি টাকার ক্ষতি
তিনি বলেন, আগাম বৃষ্টি বা পাহাড়ি ঢলের কারণে হাওরের ধান নিয়ে আমরা শঙ্কায় থাকি। কিন্তু ৭০ শতাংশ ধান উঠে যাওয়ায় এখন আর তেমন কোনো শঙ্কা নেই। আশা করি শেষ পর্যন্ত এ বছর বোরোর ভালো ফলন পাওয়া যাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের তথ্য অনুযায়ী, হাওরের ৭ জেলায় ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩৪ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাওরে বোরোর আবাদ ৫ লাখ ৫৪ হাজার ২৩ হেক্টর। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ধান কাটা হয়েছে ৩ লাখ ২১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির।
এদিকে, হাওরবেষ্টিত ওই সাত জেলার হাওর বহির্ভূত এলাকার আবাদ হওয়া ৩ লাখ ৯২ হাজার ৫১১ হেক্টর জমির মধ্যে এখন পর্যন্ত ধান কাটা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৯৫৪ হেক্টর জমির। ওই ৭ জেলায় হেক্টর প্রতি এবার বোরোর গড় ফলন সাড়ে ৩ টন থেকে ৩ দশমিক ৮০ টন পর্যন্ত হয়েছে।
অন্যদিকে, হাওর এলাকাসহ সারাদেশে এবার বোরোর আবাদ হয়েছে ৪৮ লাখ ৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত ১৮ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রামের কৃষক রনি সারাবাংলাকে বলেন, হাওরে বোরো ধান কাটা চলছে। চার-পাঁচ দিন হলো ধান কাটা শুরু হয়েছে। শ্রমিক অনেক আছে। লকডাউনের আগে দূরের শ্রমিকরা এলাকায় এসেছিল। আবার লকডাউনের কারণে এলাকার অনেক শ্রমিকই এখন গ্রামে। ফলে ধান কাটায় এবার শ্রমিক সংকট নেই।
তিনি বলেন, গরম বাতাসে ধানের কিছু ক্ষতি হলেও উৎপাদনে কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে হচ্ছে না। ফলন ভালো হয়েছে। মাঠ থেকে ওঠানোর পর কাঁচা ধান এখন ৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। শুকালে মণপ্রতি ধানের দাম পড়তে পারে ১ হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার কৃষক কাজল সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের এখানে ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। ফলন ভালোই হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় গরম বাতাস হলেও তেমন ক্ষতি হয়নি।
তিনি বলেন, শুরুতে ধান ৯৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। মাঝে ৮৫০ টাকা মণ দরেও বিক্রি করেছি। এখন ৭৮০ টাকা মণে কাঁচা ধান বিক্রি হচ্ছে। এ বছর ধানের দাম ভালো পাওয়া গেছে।
নরসিংদীর কৃষক শহীদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, মাঠে এখন পুরোদমে ধান কাটা চলছে। এবার বোরোর ফলন ভালোই হয়েছে। তবে গরম বাতাসে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। প্রতি মণ ধান (৪৮ কেজি) ১০০০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার কৃষক মোস্তফা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আটাশ ধান কাটা শুরু হয়েছে। উনত্রিশ উঠবে ঈদের আগে। ধানের ফলনও বেশ ভালো হয়েছে।’ তার মতোই তথ্য দিলেন অন্যান্য এলাকার কৃষকরাও। সে হিসাবে এ মৌসুমে বোরোর ফলন বাম্পারই ধরে নেওয়া যায়।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর