।। মীর মেহেদী হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।
গাজীপুর: আবার দেখা যখন হলো সখা, প্রাণের মাঝে আয়…। দীর্ঘদিন পর পুরনো বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর এভাবেই আনন্দে মেতে উঠেছিলো গাজীপুরের কাপাসিয়ার তারাগঞ্জ এইচ এন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীরা। পুরনো সহপাঠীদের সঙ্গে মিলিত হবার এ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে শুক্র ও শনিবার দুদিনব্যাপী বর্ণিল উৎসবের আয়োজন করা হয়।
বলধার জামিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী ১৯১৯ সালে ঐতিহ্যবাহী এ স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। আগামী বছর প্রতিষ্ঠানটি শত বছরে পদার্পণ করবে। এ উপলক্ষে বেশ জাকজমকভাবে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়।
শুক্রবার সকালে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন গাজীপুর ৪ আসনের সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি।
অনুষ্ঠানে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তাদের স্মৃতিচারণ করেন। এই বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকন বলেন, ‘কৈশরের আকাশ-কুসুম স্বপ্নগুলোর শুরু হয়েছিল এই স্কুল জীবন থেকে। এখান থেকেই স্বপ্ন দেখেছি ভালো মানুষ হওয়ার, সুন্দর ভবিষ্যতের। এখান থেকেই স্বপ্ন দেখেছি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মা-বাবা, প্রতিবেশির মুখ উজ্জ্বল করার।’
এ ছাড়া স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র মেজর জেনারেল (অব.) মঞ্জুর রশীদ খান বলেন, সবাইকে একত্রিত করার প্রয়াস সার্থক হয়েছে। এটি শুধু আমাদের মিলন মেলা নয়, এটা একটা স্মৃতিচারণ মেলাও।
স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব আয়ূবুর রহমান খান বলেন, এই ঐতিহ্যবাহী তারাগঞ্জে উপজেলার প্রথম মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে ইতিহাসের অনেক পথ অতিক্রম করে স্কুলটি আজ শতবর্ষ পেরিয়েছে। যাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এই পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান সফল হতে যাচ্ছে, তাদেরকেও আন্তরিক অভিন্দন ও ভালোবাসা।
এখনো এই বিদ্যালয়ের পাশে দাঁড়ালে মনে হয়, একটি বটবৃক্ষের কোমল ছায়ায় দাঁড়িয়েছি, আমার ছোটবেলার সেই প্রাণ প্রীয় বিদ্যালয় এবং শ্রদ্বেয় শিক্ষাগুরুজন যেন ঠিক মা-বাবার মতো অগণিত সন্তানকে স্নেহ মমতায় জড়িয়ে ক্লান্তিহীনভাবে শিখার আলো বিতরণ করছে।
প্রাক্তন ছাত্র মীর হাবিবুর রহমান স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘বিদ্যালয়ের সোনালী দিনগুলো এখনো স্মৃতির পাতায়, আজকের দিনটির জন্য আমি খুবই আন্দিত।’
দুর্গাপুর ইউনিয়নের যুবলীগের সহসভাপতি ও প্রাক্তন ছাত্র রতন বলেন, ‘অনেক দিন পর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা। সবাই মিলে খুব আনন্দ করছি। সেই সঙ্গে পুরনো দুষ্টুমিগুলো নতুন করে করতে পেরে আনন্দিত।’
মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তারা বলেন, ১৯৭১ সালর মার্চ মাসের আটাশ তারিখে স্কুলের ছাত্র ও এলাকার যুবক, কৃষক-শ্রমিক মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য তাঁরা এই হাইস্কুল মাঠে প্রথম জড়ো হয়। এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়।
এ ছাড়া এই স্কুলের সাইক্লোস্টাইল মেশিন মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে। সেই সময় কাপাসিয়ার কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই রকম অত্যাধুনিক সাইক্লোস্টাইল মেশিন ছিল না। এ ধরনের উন্নতমানের মেশিনের কথা জানতে পেরে কোনো এক রাতে সেটি মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্কুলে আসেন বঙ্গতাজ তাজউদ্দিন আহমেদের ভাতিজা ইঞ্জিনিয়ার দলিল উদ্দিন আহমেদ খান, আড়ালে ছিলেন নজরুল ইসলামসহ বেশ কয়েক জন মুক্তিযোদ্ধা নেতৃবৃন্দ। পরবর্তীতে তারা এই সাইক্লোস্টাইল মেশিন দিয়ে কামারগাঁও থেকে মুক্তিযুদ্ধের খবর ছাপিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে এবং ভারতে পাঠাতো।
কাপাসিয়া থানার সাবেক সভাপতি আজগর রশিদ খান এর সভাপতিত্বে স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, গাজীপুর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মো. হুমায়ন কবির, গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার হারুণ অর রশিদ প্রমুখ।
সারাবাংলা/এমএইচ/এমআই