স্বাস্থ্য-ত্রাণে ব্যস্ত মাঠ প্রশাসন, ডিসি সম্মেলন নিয়ে অনিশ্চয়তা
৫ মে ২০২১ ১৯:৩৩
ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে মাঠ প্রশাসনের কার্যক্রম গতি হারিয়ে অনেকটা ঢিমেতালে চলছে। মাঠ পর্যায়ের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কার্যক্রমেও গতি নেই। এ পরিস্থিতিতেও জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা নিয়মিত অফিস করছেন। তবে তাদের বর্তমান কার্যক্রমও অনেকটাই হাসপাতাল, ত্রাণ ব্যবস্থাপনা, মৎস্য ও পশু সম্পদ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাও তাদের নিয়মিত কাজের অংশে পরিণত হয়েছে।
মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলমান করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে তাদের স্বাভাবিক সময়ের নিয়মিত কার্যক্রম অনেকটাই স্থবির। তবে মহামারি পরিস্থিতিতে জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে উৎসাহিত করা ছাড়াও হাসপাতালে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করতে হচ্ছে তাদের। বিধিনিষেধে উপার্জন হারানো মানুষদের সহায়তার জন্য ত্রাণ ব্যবস্থাপনাতেও বিশেষ নজর দিতে হচ্ছে। এর সঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্র পরিচালনার কাজেও নজর দিতে হচ্ছে তাদের। পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ের চিত্র তুলে ধরে নিয়মিত প্রতিবেদনও তৈরি করতে হচ্ছে। তবে এর মধ্যেও কোনো কোনো কর্মকর্তা ও কার্যালয়ে যে করোনা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ফাঁকিঝুঁকি চলছে না, এমনটিও নয়।
মাঠ প্রশাসনে এক কর্মকর্তা নাম গোপন রাখার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রশাসনিক উন্নয়ন প্রকল্পসহ অন্যান্য কাজে তেমন গতি নেই। করোনা পরিস্থিতির কারণে সেগুলো অনেকটাই থমকে আছে। তবে আমাদের বসে থাকার সুযোগ নেই। হাসপাতালে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ঠিক রয়েছে কি না, ওষুধ বিতরণে ঠিকমতো হচ্ছে কি না, ভ্যাকসিন সময়মতো পৌঁছাচ্ছে কি না— এ বিষয়গুলো প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই মনিটরিং করছেন। এছাড়া এই মহামারিতে যেন খাদ্য সংকট না দেখা দেয়, সেটি নিশ্চিত করতে ত্রাণ বিতরণ ও ব্যবস্থাপনার কাজগুলো করতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জনগণের পুষ্টিকর খাবারের প্রাপ্যতা ও খামারিদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্র পরিচালনা করছে। এর সমন্বয়ের দায়িত্বও পালন করতে হচ্ছে।
মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিদিন যেসব কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে, তা প্রতিবেদন আকারে তৈরি করে সেটি পৃথকভাবে পাঠাতে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রতিদিনই যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের হালনাগাদ নির্দেশনা। সেগুলোও যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য কাজ করতে হচ্ছে তাদের। করোনা প্রতিরোধে জনগণের মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নির্দেশনাও থাকে। এখন নিয়মিতই এরকম ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে সরকার আরোপিত বিধিনিষেধের মধ্যে সব কার্যক্রম বন্ধ, আমরা বসে আছি। কিন্তু বিষয়টি তেমন নয়। স্বাভাবিক সময়ে যেসব কার্যক্রম আমাদের পরিচালনা করতে হয়, সেগুলো এখন আমাদের করতে হচ্ছে না। তবে করোনা প্রতিরোধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি কাজেই আমাদের সম্পৃক্ত থাকতে হচ্ছে। তাছাড়া মাঠ পর্যায়ের যেকোনো নির্বাহী কর্মকর্তাকেই সব বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে জনস্বার্থে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। সেই সমন্বয়ের চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সবকিছু করেও যদি করোনা প্রতিরোধে কিছুটা হলেও অবদান রাখা যায়, সেটিই পাওয়া।
এদিকে, করোনা সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের ব্যস্ততার কারণে মাঠ প্রশাসনের উন্নয়ন প্রকল্পসহ আইনশৃঙ্খলা ও অর্থনৈতিক সংক্রান্ত অনেক বৈঠকই হচ্ছে না। মাঠ প্রশাসনের অন্যান্য বিভাগ ও দফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে জেলা প্রশাসকের যে সমন্বয় বৈঠক, সেটিও হচ্ছে না নিয়মিত। তবে স্বাস্থ্য, খাদ্য ও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে বৈঠক হচ্ছে। যদিও কর্মকর্তারা বলছেন, ভার্চুয়াল বৈঠক থেকে শারীরিক উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকের মতো ফলাফল আসে না। কর্মকর্তারা বলছেন, এ পরিস্থিতিতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দাফতরিক কাজের ব্যাঘাত ঘটছে। এ পরিস্থিতিতে গত বছরের মতো এ বছরও জেলা প্রশাসক সম্মেলন নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে একটি সূত্র বলেছে, মাঠ পর্যায়ের এই পরিস্থিতির খবর তাদের কাছেও রয়েছে। যারা ভালো কাজ করছেন, তাদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। তবে যারা কাজে পিছিয়ে আছেন, তাদের নিয়েও খুব কঠোর অবস্থানে নেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, মহামারির এই সময় কারও ওপর চাপ প্রয়োগ মানবিক হবে না।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওই সূত্রটি বলছে, করোনা মহামারির কারণে গত বছর ডিসি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। শারীরিক উপস্থিতিতে এই সম্মেলন আয়োজন সম্ভব না হওয়ায় ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে এটি আয়োজনের একটি প্রস্তাবনা এসেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সেটি হয়নি। এ বছরও এই ডিসি সম্মেলন হবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ। আর সেটি না হলে তা মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা বঞ্চিত হবেন বলে মনে করছেন। কেননা, এই ডিসি সম্মেলনে যেমন সরকারের পক্ষ থেকে তাদের পুঙ্খানুপুঙ্খ নির্দেশনা দেওয়া হয়, তেমনি নিজেদের দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্যও এই সম্মেলনের জন্যই অপেক্ষা করে থাকেন মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। গত বছর এই সম্মেলন না হওয়ায় মাঠ প্রশাসনের কর্মকাণ্ড অনেকটা ব্যাহত হয়েছে বলেও মনে করছেন তারা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আরেকটি সূত্র বলছে, জুন মাসের কোনো একটি সময়ে ডিসি সম্মেলন হয়ে থাকে। তবে এ বছর ডিসি সম্মেলন নিয়ে এখনো কোনো প্রস্তাব এখনো আসেনি।
মাঠ প্রশাসনে কার্যক্রম সম্পর্কে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, মহামারি প্রতিরোধে মাঠ প্রশাসন তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। অনলাইনে প্রতিদিনই তাদের কার্যক্রম মনিটরিং করা হচ্ছে।
এসব বিষয় নিয়ে জানতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) কামাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের সব কর্মকাণ্ডই মনিটরিং করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক সম্মেলন বিষয়ে জানতে চাইলে কামাল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না।
আরেকজন অতিরিক্ত সচিব জানান, ডিসি সম্মেলন নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জুন অথবা জুলাইয়ে এই সম্মেলন হতে পারে। আর জেলা প্রশাসকদের শারীরিক উপস্থিতিতে সম্মেলন করা সম্ভব না হলে এ বছর ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে হলেও জেলা প্রশাসক সম্মেলন হতে পারে বলে মনে করছেন আরেকজন অতিরিক্ত সচিব।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর