ভ্যাকসিনের মেধাস্বত্ব উন্মুক্ত করার পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র
৬ মে ২০২১ ২২:০২
বৈশ্বিক চাপের মুখে করোনা ভ্যাকসিনের মেধাস্বত্ব উন্মুক্ত করে দিতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ডেমোক্রেট দলীয় সাংসদ এবং ১০০র বেশি দেশের লাগাতার চাপের কাছে নতি স্বীকার করে বুধবার (৫ মে) মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে, যুক্তরাষ্ট্র তার দীর্ঘ দিনের নীতির বাইরে গিয়ে ওষুধ কোম্পানিগুলোকে ক্ষুব্ধ করলেও নিজের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলেন বাইডেন।
এর আগে, বিশ্বজুড়ে ভ্যাকসিনের উৎপাদন বাড়াতে ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকা মেধাস্বত্ত্ব উন্মুক্ত করে দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল। বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়ে মেধাস্বত্ত্ব উন্মুক্ত করার বিরোধিতা করে আসছে ওষুধ কোম্পানিগুলো।
এদিকে, হোয়াইট হাউজ থেকে দেওয়া এক বক্তব্যে বাইডেন মেধাস্বত্ত্ব উন্মুক্ত করা নিয়ে নতুন অবস্থান ঘোষণার পরপর যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যদূত ক্যাথরিন তাই বিবৃতিতে বলেন, বিশেষ সময় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার ডাক নিয়ে আসে, তখন তাতে সাড়া দিতে হয়।
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন মিললেও এখনই মেধাস্বত্ত্ব উন্মুক্ত করার উদ্যোগ কার্যকর হচ্ছে না। এ বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে ডব্লিওটিও’র সদস্য দেশগুলোর কিছুটা সময় প্রয়োজন হবে বলে সতর্ক করেন ক্যাথরিন তাই।
এ ব্যাপারে রয়টার্স বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তের খবর বের হওয়ার পর বিশ্বের দুই শীর্ষ ওষুধ উৎপাদনকারী যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার এবং মডার্নাসহ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন উদ্ভাবক কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দরপতন শুরু হয়েছে।
প্রসঙ্গত, কোভিড ভ্যাকসিন থেকে মেধাস্বত্ত্ব উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবিতে ছয় মাস ধরে ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার নেতৃত্বে অনেকগুলো দেশ সোচ্চার থাকলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে জোরালো বিরোধিতার মুখে পড়ে।
কিন্তু, এবার ট্রাম্পের উত্তরসূরী জো বাইডেন উল্টোপথ ধরলেন। ২০২০ সালের নির্বাচনি প্রচারণার সময় করোনা ভ্যাকসিনের মেধাস্বত্ত্ব উন্মুক্ত করে দেওয়ার প্রতি যে সমর্থন দিয়েছিলেন, বুধবার সেই সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
বিবিসি বলছে, মেধাস্বত্ত্ব উন্মুক্ত করার এই পদক্ষেপ অনুমোদিত হলে ভ্যাকসিন উৎপাদন ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে গরিব দেশগুলোকে সুলভ মূল্যে সরবরাহ করা যাবে বলে দাবি উত্থাপনকারীরা জানিয়েছেন। মেধাস্বত্ত্ব সংরক্ষণ বিধি মহামারি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন এবং অন্যান্য সেবাসামগ্রী ব্যাপক উৎপাদনের পথে বড় বাধা হিসেবে দেখছে উন্নয়নশীল দেশগুলো।
এ ব্যাপারে বাইডেনের বাণিজ্যদূত বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন এই দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে ডব্লিউটির আলোচনায় জোরালভাবে অংশ নেবে। তবে, ডব্লিউটিও’র সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ১৬৪ সদস্য দেশের সর্বসম্মতি বাধ্যতামূলক হওয়ায় এতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হবে।
অপরদিকে, বাইডেনের ঐতিহাসিক এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস আধানম গ্যাব্রেইসাস এক টুইটার বার্তায় বলেন, কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এটি একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ওষুধ কোম্পানিগুলো এর বিরোধিতা করে জোর দিয়ে বলছে, মেধাস্বত্ত্ব সংরক্ষণ প্রধান বাধা নয়। এই উদ্যোগের ফলে ভ্যাকসিন উদ্ভাবন বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
পাশাপাশি, এই উদ্যোগকে হতাশাজনক হিসেবে বর্ণনা করেছে ওষুধ প্রস্তুতকারক ও সমিতিগুলোর আন্তর্জাতিক ফেডারেশন। জেনেভাভিত্তিক সংগঠনটি বলেছে, মেধাস্বত্ত্বে ছাড় দেওয়া সহজ। কিন্তু জটিল সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ভুল সমাধান।
এ ব্যাপারে জন হপকিন্স সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটির প্রধান স্কলার ড. আমেশ আডালজা রয়টার্সকে বলেন, এই ছাড় আসলে সেই সব ওষুধ কোম্পানির স্বত্ত্বের জবরদখল, যাদের উদ্ভাবন ও বিনিয়োগের ফলে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে।
সারাবাংলা/একেএম