আর্থিক সংকট: মহামারিতেও জনগণের পাশে নেই বিরোধী দল জাপা
৭ মে ২০২১ ১৪:৫৫
ঢাকা: আর্থিক সংকটে ভুগছে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের প্রয়াণের পর থেকেই দলটির এই পার্টির আর্থিক দৈন্য স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করেছে। আর সে কারণেই দেশব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের মানুষেরা মানবেতন দিন কাটালেও তাদের পাশে দাঁড়াতে পারছে না জাতীয় পার্টি। তারপরও দলের নেতাদের মধ্যে যারা বিত্তবান, তারা নিজ দায়িত্বে নিজ এলাকায় মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিতরণ করছেন। কেউ কেউ অসহায় ও শ্রমজীবীদের মধ্যে ইফতারও বিতরণ করছেন সীমিত পরিসরে। তবে দল হিসেব জাতীয় পার্টি মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছে না।
দলীয় সূত্র বলছে, মানুষের পাশে দাঁড়ানো তো দূরের কথা, দল চালাতে গিয়েই হিমশিম খেতে হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে। এরই মধ্যে দলের বনানী অর্থ কার্যালয় ভাড়া বাকি পড়েছে দুই মাসের। অর্থ সংকটের কারণে দলটির অফিসে কর্মরতদের ঈদ বোনাস দেওয়া যাচ্ছে না।
জাতীয় পার্টির সূত্রগুলো বলছে, দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হোসেন এরশাদের জীবদ্দশাতেও বিভিন্ন সময় আর্থিক সংকটে পড়েছে জাতীয় পার্টি। তবে সেই সংকট কখনো প্রকট হয়নি। অর্থভাবে পার্টির কোনো কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়নি। কিন্তু এখন নিয়মিত কার্যক্রমই পরিচালনা করতে পারছে না জাপা। অর্থ সংকটের কারণেই দলীয়ভাবে কোনো আয়োজন করা যাচ্ছে না।
দেশব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের নিজেই দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে দলের আর্থিক দৈন্য দশার কথা তুলে ধরেছেন। একইসঙ্গে জেলা ও থানা পর্যায়ের কমিটির নেতাদের চিঠি দিয়ে মহামারিতে সাধ্যমতো পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
জাপা চেয়ারম্যানের এই নির্দেশ অনুযায়ী কয়েকটি জেলার নেতা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। দলীয় সংসদ সদস্যসহ বিত্তবান নেতারা ব্যক্তিগত তহবিল থেকে সীমিত আকারে মাস্ক, স্যানিটাইজার, ইফতারি ইত্যাদি বিতরণ করছেন। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা ও জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নির্দেশে দলটির অতিরিক্ত মহাসচিব সাইদুর রহমান টেপা গত মঙ্গলবার তার ব্যক্তিগত খরচে মঙ্গলবার কাকরাইল পার্টি অফিসের সামনে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেন। এ বিষয়ে সাইদুর রহমান টেপা সারাবাংলাকে বলেন, দেশের এই মহামারিতে জাতীয় পার্টি জনগণের পাশে নেই, এ কথা সঠিক নয়। আমরা সাধ্যমতো জনগণের পাশে আছি, যতটুকু সম্ভব সাহায্য-সহযোগিতা করছি।
তিনি বলেন, দেশ ও জাতির জানতে হবে এবং বুঝতে হবে জাতীয় পার্টি গত ২৮ বছর ক্ষমতার বাইরে। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে বন্যা হয়েছিল। ওই সময় দেশের মানুষকে কষ্ট করতে হয়নি। সেই সময় প্রচুর ত্রাণ দাওয়া হয়েছে। জাতীয় পার্টি সংসদের প্রধান বিরোধী দল, সে হিসেবে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের তরফ থেকে যে বরাদ্দ থাকা উচিত, তা আমাদের দেওয়া হয়নি। তবে আমাদের দলের সংসদ সদস্যরা জনগণের পাশে আছে।
দলের আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় পার্টি পরিচালিত হয় দলীয় নেতাকর্মী ও এমপিদের চাঁদার ওপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্যরা প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা, ভাইস প্রেসিডেন্টরা ৩ হাজার টাকা, উপদেষ্টারা ৩ হাজার টাকা, সাংগঠনিক অন্যান্য পদধারীরা এক হাজার টাকা এবং সাধারণ সদস্যরা ৫শ টাকা করে চাঁদা দেন। এর মাধ্যমে প্রতি মাসে কমবেশি ৫ লাখ টাকা চাঁদা আসে। তা নিয়েই কোনোমতে দলের কার্যক্রম চালাতে হয়।
দলের নেতারা বলছেন, এরশাদ জীবিত থাকার সময় দলের নিজস্ব তহবিলে কোনো সময় টাকা না থাকলেও সমস্যা হতো না। বড় বড় শিল্পপতিরা অনুদান দিতেন। এখন শিল্পপতি বা বড় কোম্পানি থেকে অনুদান নিয়ে আসার মতো কেউ নেই। এমন অর্থ সংকট নিয়ে কতদিন চলা যাবে, তা নিয়েও সংশয় অনেকের।
এসব বিষয়ে জানতে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলুর মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি। পরে পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব শামীম পাটোয়ারীর সঙ্গে কথা হয়।
শামীম পটোয়ারী সারাবাংলাকে বলেন, গত বছর করোনার সময় আমরা জাতীয় পার্টি জনগণের পাশে ছিলাম। ওই সময় আমার এলাকায় ২০ হাজার মানুষকে সহযোগিতা করেছি। দলের অন্যান্য সংসদ সদস্য ও নেতারাও নিজ নিজ এলাকায় জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ বছরও স্থায়ীভাবে লকডাউন হলে ব্যক্তিগত তহবিল থেকেই আমরা জনগণের পাশে দাঁড়াব।
দলের অর্থ সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে পার্টিতে অর্থ সংকট রয়েছে, এটি অসত্য নয়। তারপরও পার্টির নেতারা নিজ নিজ এলাকায় কাজ করছেন। জাতীয় পার্টি জনগণের পাশে দাঁড়াতে তহবিলও গঠন করছে।
সাধারণ মানুষের অভাব-অনটন নিয়ে সরকারের আরও সচেতন হওয়া উচিত বলে মনে করেন শামীম পাটোয়ারী। তিনি বলেন, সরকার রাজস্ব আদায় করে। জনগণের সমস্যা হলে ত্রাণও দেবে সরকার। এমপিদের মাধ্যমে বরাদ্দ দিয়ে এই ত্রাণ বা অর্থ সহায়তা বিতরণ করা উচিত। কিন্তু সরকার কোনো অর্থ সহায়তা সংসদ সদস্যদের জন্য বরাদ্দ দেয়নি। এ বিষয়ে সরকারকে আরও পরিকল্পনামাফিক কাজ করা উচিত।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর