Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বাধীনতা দিবস : বাঙালির প্রেরণার বাতিঘর


২৬ মার্চ ২০১৮ ০০:১২

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা:  আজ ২৬শে মার্চ। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। বাঙালির শোষণ মুক্তির দিন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী একাত্তরের এই দিনে যে নির্বিচার হত্যাকান্ড শুরু করেছিল বুক চিতিয়ে তা প্রতিহতের ডাক দিয়োছিল বীর বাঙালি। সেই থেকে এ দিনটি বাঙালির প্রেরণার বাতিঘর। শত বাধা ঠেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়দ্বীপ্ত এ দিন। স্বাধীনতার ৪৭ বছরে এসে এ দিনটি লাল-সবুজের বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় আসীন করেছে আরও গৌরবের সঙ্গে।

সোমবার মহান স্বাধীনতা দিবসটি পালন মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন জাতি উদযাপন করবে। এবার মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের পূর্বে জাতি অর্জণ আলোয় উজ্জীবিত হয়েছে। ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে স্বল্পোন্নত দেশের গ্রুপ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্তরে রূপান্তরের যোগ্যতা অর্জন করেছে।

২৫মার্চ ভয়াল কালরাত্রি। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ লাশ আর জননীর কান্না নিয়ে রক্তে রাঙা নতুন সূর্য উঠেছিল। রক্তাক্ত সারি সারি মানুষের নিথর দেহ। জ্বলে উঠল মুক্তিকামী মানুষের চোখ। জ্বলে উঠল মুক্তির প্রতিরোধ। মুত্যুভয় তুচ্ছ করে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান তুলে ট্যাঙ্কের সামনে বুক পেতে দিল সাহসী প্রাণ। এমনি এক রক্তাক্ত রাতে পাক বাহিনীর গণহত্যার বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ঘোরতর অনিশ্চিত অমানিশা ভেদ করেই সেদিন আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার চিরভাস্বর সূর্য। শুরু হয় বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই।

২৫শে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আধুনিক সমরাস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সে রাতে বর্বর পাক হানাদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানার ইপিআর সদরদপ্তর, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায়। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একাধিক গণকবরে শত শত লাশ মাটি চাপা দিয়ে তার ওপর বুলডোজার চালায়। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সারারাত হাজার হাজার লাশ মাটি চাপা দেয়। আর কত লাশ ঢাকার বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া হয় তা অজানা।

১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বাংলার মানুষের ভোটে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তাস্তরে গড়িমসি করতে থাকে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনার আড়ালে সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে পাক হানাদার বাহিনী। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানার কারণে বাংলার মুক্তকামী মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এমনই এক প্রেক্ষাপটে ২৫শে মার্চ কালরাত্রিতে পাক হানাদার বাহিনী ঢাকাসহ সারাদেশে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ইতিহাসের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। মধ্যরাতেই অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরের বাড়ি (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু ভবন) থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইপিআরের ওয়্যারলেসে স্বাধীনতার ডাক দেন। ইংরেজিতে ঘোষণা করা সেই স্বাধীনতা ঘোষণার বাংলা অনুবাদ হলো, ‘এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের জনগণ তোমরা যে যেখানেই আছ এবং যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শেষ পর্যন্ত দখলদার সৈন্য বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য আমি তোমাদের আহ্বান জানাচ্ছি। চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।’ একই সঙ্গে বাংলায় পাঠানো আরেকটি বার্তা হলো, ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিতভাবে পিলখানা ইপিআর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে, আমি বিশ্বের জাতিসমূহের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছি। এর আগে ৭ই মার্চে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে উত্তাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন,‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।

সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে মহান স্বাধীনতা দিবসটি পালন করা হবে। সোমবার প্রত্যুষে রাজধানীতে ৪৭বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সাভার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এর পর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধারা, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশী কূটনীতিকগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সাধারণ জনগণ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে প্রাঙ্গণের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হবে। এরপর সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশু-কিশোর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন। এবারই প্রথম স্বাধীনতা দিবসের দিন সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জাতীয় শিশু কিশোর সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সারাদেশে ও বিদেশে একযোগে একই সময়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হবে।স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আগামীকাল সরকারি ছুটির দিন। এদিন রাজধানীর সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকাসহ নানা রঙের পতাকা দিয়ে সাজানো হবে। দিবসটি উদযাপনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দুই দিন বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করবে। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিভিন্ন যুব ও ছাত্র সংগঠন মহান স্বাধীনতা দিবসে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

সারাবাংলা/এনআর/এমএস


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর