দ্বিতীয় ডোজ মিলছে না, চট্টগ্রামে সড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভ
৯ মে ২০২১ ১৪:৪৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: মজুত সংকটের কারণে চট্টগ্রামে করোনার ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ না পেয়ে কেন্দ্রে এসেও ফেরত যেতে হচ্ছে গ্রহীতাদের। টিকা দেওয়া-না দেওয়া নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা না থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কেন্দ্রের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ভেতরে ঢোকার পর বিভিন্ন অজুহাতে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে না।
এসব অভিযোগে রোববার (৯ মে) নগরীর কোতোয়ালী থানার সদরঘাট এলাকায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন জেনারেল হাসপাতালের সামনে ভুক্তভোগীরা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ আরও বিভিন্ন কেন্দ্রের সামনে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের।
গত ৮ এপ্রিল থেকে চট্টগ্রামে করোনা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। গত একমাসে শনিবার (৮ মে) পর্যন্ত চট্টগ্রামে দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছেন ৩ লাখ ১১ হাজার ৩৭৭ জন।
সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনার প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৭৬০ জন। এর মধ্যে প্রায় দেড় লাখ প্রথম ভ্যাকসিন গ্রহীতা এখনও দ্বিতীয় ডোজ পাননি। কিন্তু মজুত আছে মাত্র ২৭ হাজার ৩৮০ ডোজ।
এ অবস্থায় ভ্যাকসিনদান কেন্দ্রগুলোতে মোবাইলে এসএমএস ছাড়া দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। যদিও শুরুতে কেন্দ্রগুলোতে মোবাইলের এসএমএস ছাড়াও দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে। প্রথম ডোজ দেওয়ার পর নিবন্ধন কার্ডে যে তারিখ দেওয়া হয়েছিল, সেই তারিখে এসএমএস ছাড়াই শুরুতে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সুনির্দিষ্ট ঘোষণা ছাড়া এসএমএস ব্যতীত দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া বন্ধ করে দিলে দূরদূরান্ত থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে আসা লোকজন বিপাকে পড়েন।
রোববার সকাল ৯টার দিকে নগরীর চকবাজার থেকে সদরঘাট এলাকায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন জেনারেল হাসপাতালে দ্বিতীয় ডোজ নিতে আসেন অনিল রুদ্র। তিনি সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, প্রায় তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রে ঢোকার পর তাকে জানানো হয় এসএমএস ছাড়া ভ্যাকসিন দেওয়া হবে না। অথচ নিবন্ধন কার্ডে ৯ মে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার তারিখ উল্লেখ আছে। এরপর দুপুর ১টার দিকে হঠাৎ তার মোবাইলে এসএমএস আসে। তিনি সেটি দেখানোর পর তাকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে।
আগ্রাবাদ থেকে ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নিতে যাওয়া আমেনা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘রোজা রেখে রোদের মধ্যে দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েছি। পরে বলে, ভ্যাকসিন নেই, দিতে পারবে না। এই কথা যদি আগে বলত, কষ্ট করে রোজার মধ্যে আসতাম না।’
আরেক গ্রহীতা জসিম উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার কার্ডে তারিখ লেখা আছে ৯ মে। আমি যখন কার্ড দেখালাম, বলে এসএমএস দেখান। আমি বললাম, অনেকে তো এসএমএস ছাড়া দিয়েছে। এসএমএস যদি লাগে, তাহলে কার্ডে তারিখ লিখেছেন কেন ? তারা বলে, আবার লাইনে দাঁড়ান।’
এভাবে ভোগান্তির পর একপর্যায়ে সকালে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ভ্যাকসিন গ্রহীতারা। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন জেনারেল হাসপাতালের সামনে সড়ক অবরোধ করেন শ’খানেক মানুষ। এসময় আলকরণ মোড় থেকে মেমন হাসপাতালের সামনের সড়কে প্রায় আধাঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। কেন্দ্রের সামনেও তারা বিক্ষোভ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
জানতে চাইলে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে এই সমস্যা হচ্ছে। প্রতিদিন লোকজন উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছে। আজ (রোববার) সকালে রাস্তায়ও এসে যায়। আমরা গিয়ে তাদের বুঝিয়ে আবারও লাইনে দাঁড় করিয়েছি।’
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সারা বাংলাদেশে ভ্যাকসিন নেই। আমাদের কাছেও নেই। মজুত স্বল্পতা আছে। সর্বোচ্চ আর একদিন আমরা ভ্যাকসিন দিতে পারব। আমরা লোকজনকে সেটা বলছি। তারা যদি না বোঝেন, আমাদের বিষয়টাও তো বুঝতে হবে। ভ্যাকসিন যখন এভেইলেবল হবে, তখন তো সবাই পাবেন।’
সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজের মজুত স্বল্পতার কারণে মে মাসের শুরু থেকেই ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিমাণ তিন ভাগের দুই ভাগ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এপ্রিলে শুরুর পর থেকে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ১৮ হাজার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে। মে মাসের শুরু থেকে প্রতিদিন ৬ হাজারের মতো দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কাছে ভ্যাকসিন নেই। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অলমোস্ট বন্ধ হয়ে গেছে। আন্দরকিল্লায় জেনারেল হাসপাতালে হয়ত আর এক-দুইদিন চলবে। সিটি করপোরেশনেও মজুত নেই। উপজেলা পর্যায়ে হয়ত সামান্য কিছু আছে। আমরা বলছি যে, ঈদের ছুটির আগপর্যন্ত আমরা মোটামুটিভাবে দিতে পারব। কিন্তু ভ্যাকসিন না এলে ঈদের পর আর দেওয়া সম্ভব হবে না। তবে আশা করছি, ঈদের পর ভ্যাকসিন চলে আসবে। যে প্রক্রিয়া চলছে, তাতে ঈদের পরপরই ভ্যাকসিন একেবারে এভেইলেবল হয়ে যাবে।’
সারাবাংলা/আরডি/এসএসএ