Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সুরমা নদীতে ভয়াবহ ভাঙন, ৫০ পরিবার ভিটে ছাড়া

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১০ মে ২০২১ ২১:২০

সুনামগঞ্জ: সুরমা নদীর ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়ে সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের রাজারগাঁও গ্রামের অন্তত ৫০ পরিবার ভিটে ছাড়া হয়েছেন। হুমকিতে আরও ৫০ পরিবার। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিরা ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভাঙন প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানান গৃহহীন একাধিক পরিবার।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম থেকে শুরু হয় রাজারগাঁও গ্রামের নদী ভাঙন। দ্রুত নদী ভাঙনের কারণে অনেক বাসিন্দাদের ভিটেমাটি, পাকা ঘর ও গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ইতোমধ্যে গ্রামের একটি বড় অংশ চলে গেছে নদীতে। এখন যোগাযোগের সড়ক ও সড়কের পাশের বাসিন্দারা নদী ভাঙনের কবলে পড়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন।

একাধিক বাসিন্দা জানান, একদিন রাতের শেষ ভাগে শুরু হয় নদী ভাঙন। ভাঙনের শব্দে গ্রামের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ঘুম থেকে জেগে উঠে গ্রামের বাসিন্দারা দেখেন বড় আকারের গাছপালা একের পর এক বিলীন হচ্ছে। ভোর হবার আগেই নদীতে বিলীন হয় ১০ পরিবারের বসতভিটা ও গাছপালা। এভাবে প্রতিদিন বিলীন হতে থাকে ঘরবাড়ি।

নদী ভাঙনে ভিটে হারা ব্যক্তি সরোয়ার উদ্দিন ও আজুন নেছা জানান, আধা পাকাঘর বানিয়ে বসবাস করে আসছিলেন বছরের পর বছর। কোনো দিন ভাবতেও পারেননি বাড়ি নদীতে বিলীন হবে। এখন তারা অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

একই অবস্থা কফিল উদ্দিন ও শহীদ নুরের। তারা জানান, শখ করে বসতবাড়ির চারপাশে ফলের গাছ, কাঠের গাছ লাগিয়ে ছিলেন। ঘর পাকা করেছিলেন। একদিনে সব শেষ হয়ে যায়। এখন মাথাগোঁজার ঠাঁই না থাকায় অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তারাও।

রোববার (৯ মে) দুপুরে অন্যের বাড়িতে থাকা আজহারুল ইসলাম, সেলিম আহমদ, শামীম আহমদ, শেখ ফরিদ, নুর হোসেন, আলী মিয়া, হাজেরা খাতুনসহ অনেকে বলেন, এমন ভয়াবহ নদী ভাঙনের কবলে পড়ে পরিবারসহ পথে বসেছেন তারা। ভাঙন প্রতিরোধে সংশ্লিষ্টরা কোনো উদ্যোগও নেননি। নদী ভাঙনের হুমকিতে আছেন আরও অন্তত ৫০টি পরিবার।

নদী ভাঙনের হুমকিতে থাকা আজহারুল ইসলাম, সেলিম আহমদ, শামীম আহমদ, আলী মিয়া, শাহজাহান, মিনারুল মিয়া, আবু বকর, নুরুজ্জামান, আব্দুন নুর, সেজাউল হক, ডালিম মিয়া, শাহাবুদ্দিন, বাতির আহমদ, নাহিম উদ্দিনসহ অনেকে জানান, সুরমা নদীর ভাঙনে তাদের রান্নাঘর, বসতভিটার অর্ধেক এবং অসংখ্য গাছপালা ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে, এই ভাঙনের কারণে তারাও ভিটে ছাড়া হয়ে পড়বেন বলে আশঙ্কা তাদের।

নাহিম উদ্দিন ও হাজেরা খাতুন বলেন, দীর্ঘ পাঁচ মাসের ভাঙনে আমাদের অর্ধেক বসতভিটা, পাকঘর এবং অসংখ্য গাছ নদীতে বিলীন হয়েছে। এভাবে ভাঙন চলতে থাকলে বাড়ির জায়গা কিছুদিনের মধ্যে নদীতে বিলীন হবে। আমাদেরও অন্যত্র আশ্রয় নিতে হবে। গত শনিবার ভোর থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতেও একাধিক গাছপালা বিলীন হয়েছে নদীতে।

গ্রামের আরেক বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন বলেন, ভাঙন দেখার জন্য অনেকেই এসেছেন। তবে প্রতিরোধের ব্যবস্থা করেননি কেউ। ভাঙন প্রতিরোধের আগেই আমাদের বাড়ির অবশিষ্ট অংশও চলে যাচ্ছে নদীতে। এই ভাঙন প্রতিরোধে বিভিন্ন দায়িত্বশীল দপ্তরে আবেদনও করা হয়েছে। অনেক স্থানে যোগাযোগও করা হয়েছে। কিন্তু কেউ কিছু জানাননি।

গৌরারং ইউপি চেয়ারম্যান মো. ফুল মিয়া বলেন, রাজারগাঁও নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। আমি সরেজমিন দেখে এসেছি। পুরো রাজারগাঁও বিলীন হতে চলেছে নদীগর্ভে। জরুরি কোনো পদক্ষেপ না নিলে যোগাযোগের সড়ক অতিক্রম করে ফসলি জমিও বিলীন হবে নদীতে।

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরান শাহরিয়ার সারাবাংলাকে বলেন, সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের রাজারগাঁও গ্রাম নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে শুনেছি। এই বিষয়ে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সুনামগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, আমি রাজারগাঁও গ্রাম এলাকা পরিদর্শন করেছি। নদী ভাঙন প্রতিরোধে দুইটি প্রস্তাব পাঠিয়ে দিয়েছি। প্রথমটি জরুরিভিত্তিতে বস্তা ফেলে প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা। দ্বিতীয়টি স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন প্রতিরোধ করা। এখন কোনোটিই অনুমোদন হয়নি। প্রকল্প অনুমোদন হলে কাজ শুরু করা হবে।

সারাবাংলা/এনএস

৫০ পরিবার ভিটে ছাড়া টপ নিউজ সুরমা নদীর ভাঙন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর