‘আঙ্কেলটা মাস্কও দিছে, আপেলও দিছে, এখন থেকে মাস্ক পইরা থাকুম’
১২ মে ২০২১ ১০:২৮
ঢাকা: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম রাজধানীর উত্তরায় ‘মাস্ক পরি কর্মসূচি’ পালন করেন। কর্মসূচি চলাকালে রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্সের সামনে পথচারীদের মাঝে মাস্ক বিতরণ ও প্রচারণার সময় মেয়র দুই পথশিশুকে দেখতে পান, যারা ভিক্ষা করছিল। এসময় তিনি তাদের সামনে যান ও দুইজনকে মাস্ক পরিয়ে দেন। পরে দোকান থেকে দুটি আপেল কিনে তাদের খেতে দেন।
কর্মসূচি চালিয়ে মেয়র যখন সামনে চলে যান তখন সেই দুই শিশুর একজন নাজনীন বলেন, ‘আঙ্কেলটারে আমি চিনি না। এখানে মাইক দিয়ে কি কতগুলো যেন বলছিল। পরে আমারে আর ভাইরে ডাইকা নিয়ে দুইটা মাস্ক পরিয়ে দিয়ে আপেল কিনে দিছে। আমাগোর এটা ভালো লাগছে। এখন থেকে আমরা মাস্ক পইরা থাকমু।’
মঙ্গলবার (১১ মে) রাজধানীর উত্তরার রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্সের সামনে এ দৃশ্য দেখা যায়।
এ দিন দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় রাজলক্ষী শপিং কমপ্লেক্স এলাকায় ‘ডিএনসিসির মাস্ক পরি কর্মসূচি’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম।
উদ্বোধন শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ডিএনসিসির মাস্ক পরি কর্মসূচি’ একটি জীবনরক্ষাকারী উদ্যোগ, সবাই মিলে একে সফল করতে হবে। সঠিকভাবে মাস্ক পরিধান করার মাধ্যমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমানো এবং মানুষের জীবন বাঁচানোই এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য।
তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরীর প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্রায় ৪৯ হাজার লোক বাস করে, তাদেরকে বুঝিয়ে যথাযথভাবে মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতেই এই কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার মাঝে জীবনকে রক্ষা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গৃহীত এই কর্মসূচিকে সফল করতে হলে সকলের সর্বাত্মক অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের এই আয়োজনে ইনোভেশন ফর পোভার্টি অ্যাকশন (আইপিএ), ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়, স্ট্যানফোর্ড মেডিকেল স্কুল, সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই), শক্তি ফাউন্ডেশন ফর ডিসএ্যাডভান্টেজ ওমেন, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং বিডি ক্লিন একইসঙ্গে কাজ করছে।
কর্মসূচি সম্পর্কে জানিয়ে মেয়র বলেন, এই কর্মসূচীকে সফল করার জন্য দেড় শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছে। তাদের মাধ্যমে লোকজনকে মাস্ক পরিধানের সঠিক নিয়ম হাতেকলমে শেখানোর পাশাপাশি প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। জনকল্যাণমূলক এই কর্মসূচির শুরু থেকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণসহ সাত দিন পর এর প্রভাব পর্যালোচনা করা হবে।
তিনি বলেন, প্রত্যেকটি মার্কেটের সামনেই ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ কথাগুলো স্পষ্টভাবে লিখে রাখতে হবে অথবা এই সংক্রান্ত ব্যানার দৃশ্যমান রাখতে হবে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মানতে হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রচলিত আইন, সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করার কারণে ইতোমধ্যে অনেক হোটেল, রেস্টুরেন্ট, দোকান, শপিংমল এবং কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পরবর্তীতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, সরকারি নির্দেশনাসহ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে চলমান মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, নিজের পরিবার, শহর ও দেশকে সুরক্ষিত রাখতে যথাযথভাবে মাস্ক পরিধান করতে হবে এবং সবাইকে সরকারি নির্দেশনাসহ স্বাস্থ্যবিধিসমূহ মেনে চলতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সংরক্ষিত আসনের এমপি নাহিদ ইজাহার খান, ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, শক্তি ফাউন্ডেশনের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ইমরান আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সোমবার (১০ মে) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) জানায়, ৭২ জন কাউন্সিলরের মাধ্যমে ৯ লাখ মাস্ক, ৮০ হাজার বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজার, দেড় লাখ সাবান, তিন স্তরবিশিষ্ট ৫০ হাজার কাপড়ের মাস্ক এবং ২ হাজার বোতল হ্যান্ডওয়াশ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও কাউন্সিলরের মাধ্যমে সার্জিক্যাল মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান, তিন স্তরবিশিষ্ট কাপড়ের মাস্ক এবং লিকুইড হ্যান্ডওয়াশ বিতরণ করা হয়েছে।
সারাবাংলা/এসবি/এসএসএ