মহাসড়কে চলছে দূরপাল্লার বাস, কমেছে যাত্রীর চাপ
১৩ মে ২০২১ ২৩:০৩
ঢাকা: বিধিনিষেধ থাকলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলছে দূরপাল্লার বাস। একইসঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলা লোকাল বাস, কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাকে করে যাত্রীরা ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রামের উদ্দেশে। ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষদের চাপ তুলনামূলকভাবে কমেছে। একই সঙ্গে মহাসড়কে যানজটও নেই।
বৃহস্পতিবার (১৩ মে) সরেজমিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর এলাকায় দেখা যায় তাশা পরিবহন নামে একটি বাসে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে কুমিল্লা যাওয়ার জন্য। জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে ভাড়া। টিশিতা নামে ঢাকা-কুমিল্লা-ঢাকা রুটের একটি গাড়িতেও যাত্রীদের নেওয়া হচ্ছিল। এখানে দেখা যায় খোকন এন্টারপ্রাইজ নামে একটি বাসে যাত্রীদের ওঠানো হচ্ছে ভৈরবের দিকে যাওয়ার জন্য।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকা থেকেও দেখা যায় ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রামের উদ্দেশে বাসে উঠছে যাত্রীরা। শেষ মুহূর্তের যাত্রায় যাত্রীর চাপ কমে আসলেও রাস্তায় এদিনও দেখা গেছে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যানে করে যাত্রীদের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিতে।
তবে ঘরমুখো মানুষের ভিড় কম থাকায় এদিন রাস্তায় তেমন যানজট দেখা যায়নি। তবে যাত্রীদের কাছ থেকে শোনা যায় বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ।
আগের দিন বুধবার (১২ মে) সরেজমিনে দেখা যায়, এদিনও রাস্তায় ছিল দুরপাল্লার বাসের উপস্থিতি। কাঁচপুর থেকে মেঘনা ব্রিজের টোল প্লাজা পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট। প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যানে করে যাত্রীরা রাজধানী ছাড়ছিল। আবার অনেককেই দেখা যায় লোকাল পরিবহনে বাড়ির উদ্দেশে যেতে। সাইনবোর্ড থেকে মেঘনা ব্রিজ পর্যন্ত গিয়ে অনেকেই গাড়ি পরিবর্তন করে। ব্রিজ হেঁটে পার হয়ে আরেকটি গাড়িতে ওঠে দাউদকান্দির ব্রিজের আগ পর্যন্ত। দাউদকান্দির ব্রিজ হেঁটে পার হয়ে টোল প্লাজার পরে দাঁড়িয়ে থাকা বিভিন্ন গাড়িতে উঠেই যাত্রীরা যায় গন্তব্যস্থলে।
এদিন সন্ধ্যার পর থেকেই যাত্রীর চাপ কমতে থাকায় রাস্তায় যানজটও কমে আসে। মহাসড়কে দুরপাল্লার বাস ও অন্যান্য মাধ্যমে যাত্রীদের চলাচল বিষয়ে কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘যে পরিমাণ মানুষের চাপ তাতে আপনি কতজনকে বাধা দিবেন? তাও আমরা চেষ্টা করছি সর্বোচ্চ। বাস দেখলে আমরা তাদের আবার ঘুরিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু তাও ফাঁকে ফাঁকে বাস চলে। এতে আমাদের কোনো অনুমতি নেই। লুকিয়ে লুকিয়ে চলছে। তবে বুধবার রাস্তায় যানজট থাকলেও আজকে তেমন নেই।’
দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দেশব্যাপী চলছে বিধিনিষেধ। ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই বিধিনিষেধ ১৬ মে পর্যন্ত বর্ধিত করেছে সরকার। শর্তসাপেক্ষে ৬ মে থেকে শুধু জেলা শহরে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সংক্রমণ এক জেলা থেকে অন্য জেলায় না ছড়ানোর জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে দূরপাল্লার পরিবহন।
সরকারিভাবে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী বিধি নিষেধকালীনও পুরো দেশের এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাতায়াত করা যাচ্ছে নির্বিঘ্নেই। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের তৎপরতা চোখে পড়লেও কার্যত সবার চোখের সামনেই মহাসড়কে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, পিকআপ ভ্যানে গাদাগাদি করে মানুষ রাজধানী থেকে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। একই সঙ্গে বিভিন্ন স্থান থেকে আসছে রাজধানীতেও। এছাড়াও মহাসড়কে চলছে পিকআপ, বাইক এমনকি সিএনজিওচালিত অটোরিকশাও। বিধিনিষেধকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই যাতায়াত করেছে মানুষ।
বিশেষজ্ঞরা এভাবে যাতায়াতের বিষয়টিকে বলছেন সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও মহামারি বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এভাবে যদি আন্তঃজেলা যান চলাচল করে তবে সংক্রমণ এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ছড়ানোর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে আমাদের বর্তমানে সংক্রমণ শনাক্তের হার যেটা কমছে সেটা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে অনেকাংশে। কারণ প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে তো পাশাপাশি বসলে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব না।’
তিনি বলেন, ‘আসলে মানুষকে বোঝাতে হবে আগে। কেন এভাবে যাতায়াত নিরাপদ নয়। তার পাশাপাশি তাদের বোঝাতে হবে, এভাবে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গেলে সংক্রমণ বাড়তে পারে। একই সঙ্গে সেই ব্যক্তি নিজের জন্য কিভাবে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে এটাও তাকে বোঝাতে হবে। অর্থাৎ এই যে বিধিনিষেধ বা লকডাউন তা যে মানুষকে নিরাপদে রাখার জন্যেই দেওয়া হচ্ছে এটা সবাইকে বোঝাতে হবে। তা না করে যদি শুধু মুখে আইনের কথা বলা হয় তবে সেটা বাস্তবায়ন করা অনেকটাই কষ্টকর হয়ে পড়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একদিকে যখন প্রাইভেটকার চলছে তখন যাদের নিজস্ব গাড়ি নাই তাদের আর কী দোষ? তাদেরও তো যাতায়াত করতে হয় কোনো না কোনো কাজে। এক্ষেত্রে যদি বাস চালানোর অনুমতি দেওয়া হয় তবে তখন সেখানে কতটুকু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালানো হবে তাও প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে আসলে বলতে হয়, সরকারকেই উদ্যোগ নিয়ে পরিবহন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’
ডা. মোশতাক বলেন, ‘বর্তমানে যেভাবে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরবাইক, পিকআপ বা সিএনজি চলাচল করছে তাতে সড়কে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা যেমন বাড়ে ঠিক তেমনি কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। আর এর প্রভাব কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপরে পড়তে পারে।’
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম