৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে ফ্যাশন ব্র্যান্ড লুবনান
১৮ মে ২০২১ ২১:৫০
ঢাকা: ফ্যাশন ব্র্যান্ড লুবনান ট্রেড কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের বিরুদ্ধে প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উদঘাটন করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। এ অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ মে) বিকেলে সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ভ্যাট গোয়েন্দা মহাপরিচালক ড. মইনুল খান। তিনি জানান, ভ্যাট ফাঁকির সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তিনটি ব্র্যান্ডের আওতায় পোশাক বিপণন করে থাকে লুবনান ট্রেড কনসোর্টিয়াম। রিচম্যান আ্যাপারেলস, ইনফিনিটি মেগা মল ও লুবনান এথনিক উইয়ার— রাজধানীর বড় বড় শপিংমলসহ সারাদেশে এই তিনটি ব্র্যান্ডের ১০৮টি শোরুম রয়েছে।
ড. মইনুল খান জানান, একজন গ্রাহকের সুনির্দিষ্ট ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ থাকায় ১১ ফেব্রুয়ারি ভ্যাট গোয়েন্দার সহকারী পরিচালক মো. মাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে ভ্যাট গোয়েন্দার একটি দল বাড্ডায় প্রতিষ্ঠানটির কারখানা ও অফিসে অভিযান চালায়। সেখান থেকে জব্দ করা নথিপত্র বিশ্লেষণ ও তদন্ত শেষ করার পর আজ মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ভ্যাট গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, অভিযানে লুবনানের প্রতিনিধির সহযোগিতায় বিভিন্ন রুম তল্লাশি করে ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত চার বছর সময়ের বিভিন্ন নথি জব্দ করা হয়। এসব নথির মধ্যে ছিল ১০৮টি শাখায় জমা হওয়া মূসকের সারসংক্ষেপের হিসাব (রিটার্ন অনুযায়ী), বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্র, সিএ ফার্মের অডিট রিপোর্ট, করপোরেট চালানের কপি ও আমদানি এলসির তথ্যসহ আনুষাঙ্গিক বাণিজ্যিক দলিলপত্র। একইসঙ্গে অন্যান্য নির্ভরযোগ্য দফতর থেকে প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট সংক্রান্ত দলিল সংগ্রহ করা হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ভ্যাট গোয়েন্দা দল প্রতিষ্ঠানটির মূসক ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে।
ভ্যাট গোয়েন্দার তথ্য বলছে, তদন্ত মেয়াদে বিক্রয়মূল্যের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি ৩৯ কোটি ৮২ লাখ ৫৮ হাজার ৫৬৭ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাট এর পরিমাণ ছিল ৪১ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৯৯৫ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির ১ কোটি ৭৫ লাখ ৫৭ হাজার ৪২৮ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এর ওপর ভ্যাট আইন অনুযায়ী এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৯৫ লাখ ২০ হাজার ৯২৯ টাকা সুদ টাকা আদায়যোগ্য হবে।
অন্যদিকে, তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটি স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার বিপরীতে ৪ কোটি ৪০ লাখ ৫১ হাজার ৩৬৮ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৪১ লাখ ৬৫ হাজার ৮০ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি ১ লাখ ১৩ হাজার ৭১২ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এর ওপর এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭৫ হাজার ১৮ টাকা সুদ প্রযোজ্য।
এছাড়া, তদন্ত মেয়াদে সিএ ফার্মের রিপোর্ট অনুযায়ী উৎসে ভ্যাট ৩ কোটি ২১ লাখ ৩৭ হাজার ৯৮৫ টাকা পরিশোধ করেছে। কিন্তু এই সময়ে ৪ কোটি ৯৪ লাখ ১৪ হাজার ৭০০ টাকা ভ্যাট আদায়যোগ্য ছিল। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির ১ কোটি ৭২ লাখ ৭৬ হাজার ৭১৫ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এর ওপর প্রযোজ্য সুদের পরিামণ এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৪ লাখ ৬৫ হাজার ৬৪০ টাকা।
সব মিলিয়ে তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটির মোট অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ৩ কোটি ৪৯ লাখ ৪৭ হাজার ৮৫৪ টাকা এবং এর ওপর প্রযোজ্য সুদ ১ কোটি ১০ লাখ ৬১ হাজার ৫৮৭ টাকা। সুদসহ লুবনান কনসোর্টিয়ামের কাছে মোট ৪ কোটি ৬০ লাখ ৯ হাজার ৪৪২ টাকার ভ্যাট বাকি রয়েছে।
ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর বলছে, প্রতিষ্ঠানটি সরকারকে ভ্যাট ফাঁকি দিতে নানা ধরনের অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছে, যা ভ্যাট আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এসব অনিয়মের মধ্যে রয়েছে মাসিক রিটার্নে অসত্য তথ্য প্রদান ও ভুয়া ভ্যাট চালান ইস্যু করা। এসব অনিয়ম ও ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ এনে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের করেছে। লুবনান যে পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে, আইনি পদ্ধতিতে তা আদায়ের জন্য এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদনটি কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা উত্তরে পাঠাবে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর।
সারাবাংলা/এসজে/টিআর
ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর ভ্যাট ফাঁকি লুবনান লুবনান কনসোর্টিয়াম