Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

একদিনে বজ্রপাতে প্রাণ গেল ১৮ জনের

সারাবাংলা ডেস্ক
১৯ মে ২০২১ ০০:১২

দেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টির মধ্যে বজ্রপাতে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ মে) বিকেলে বজ্রপাতে নেত্রকোনায় ৮ জন, ফরিদপুরে ৪ জন, মানিকগঞ্জে ২ জন এবং ময়মনসিংহ, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে একজন করে মারা গেছেন। এছাড়া বেশ কয়েকজন আহতও হয়েছেন।

নেত্রকোনার ৪ উপজেলায় প্রাণ গেল ৮ জনের

নেত্রকোনা থেকে সারাবাংলার ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট জানান, জেলার চার উপজেলায় বজ্রপাতের ঘটনায় ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে খালিয়াজুরীতে তিনজন, কেন্দুয়ায় দুজন, মদনে দুজন ও পূর্বধলায় একজন মারা যান। এছাড়া খালিয়াজুরীতে পাঁচ জন ও মদন উপজেলায় চার জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদ এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।

বিজ্ঞাপন

খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম জানান, উপজেলার মেন্দিপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের খেলু ফকিরের ছেলে ওয়াসেক মিয়া (৩২), একই গ্রামের আমির মিয়ার ছেলে বিপুল মিয়া (২৮) ও বাতুয়াইল গ্রামের মঞ্জুরুল হকের ছেলে মনিরুল হক (২৮) বজ্রপাতে মারা যান। তারা সবাই বরবরিয়া হাওরে ধান কাটার কাজ করছিলেন। এ সময় আহত হন পাঁচ জন। আহতদের খালিয়াজুরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে তাদের চিকিৎসা চলছে।

কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহ নেওয়াজ জানান, কেন্দুয়া উপজেলার পাইকুড়া ইউনিয়নের বৈরাটী গ্রামের মো. বায়েজিদ মিয়া (৪২) ও কান্দিউড়া ইউনিয়নের কুণ্ডলী গ্রামের মো. ফজলুর রহমান (৫৫) মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে বৃষ্টি চলাকালে ধানক্ষেতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে মারা যান।

মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আলম বলেন, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বৃষ্টি চলাকালে মদন উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ফতেপুর গ্রামের পেছনে পতিত জমিতে কিশোররা ফুটবল খেলতে গেলে বজ্রপাতে ফতেপুর গ্রামের মৃত আব্দুল কাদিরের ছেলে হাফেজ মোহাম্মদ শরীফ (১৮) ও একই গ্রামের মৃত আব্দুল মন্নাফের ছেলে মাওলানা আতাবুর রহমান (২১) মারা যান। এ সময় পশ্চিম ফতেপুর গ্রামের রবিন (১৫), রুমান (১৮) ও তিয়শ্রী ইউনিয়নের বাস্তা গ্রামের ভিক্ষু মিয়ার স্ত্রী কণা (৪৫) ও চন্দন মিয়ার স্ত্রী সুরমা আক্তার আহত হন। আহতদেরকে মদন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শিবিরুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে বৃষ্টি চলাকালে পূর্বধলা উপজেলার ধলামূলগাঁও ইউনিয়নের পালগী গ্রামে বজ্রপাতে ইছাক ফকিরের ছেলে স্কুলছাত্র জুনায়েদ (১১) ঘটনাস্থলেই মারা যায়।

ফরিদপুরে ৪ জনের মৃত্যু বজ্রপাতে

ফরিদপুর থেকে সারাবাংলার ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট জানিয়েছেন, জেলায় বজ্রপাতে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। বিকেল ৪টা ও সাড়ে ৪টার দিকে ফরিদপুর পৌরসভার পশ্চিম গঙ্গাবর্দী, পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের মোল্লাডাঙ্গী মহল্লায়, সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ও মধুখালী উপজেলার চাঁদপুরে এ ঘটনা ঘটে।

বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ফরিদপুর পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের মোল্লাডাঙ্গী মহল্লায় ওই গ্রামের বাসিন্দা কৃষক কাবুল শেখের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৪৫) স্বামী ও ছেলের সঙ্গে মাঠ থেকে ধান নিয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন। এ সময় বজ্রপাত হলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।

এদিকে বিকাল ৪টার দিকে বজ্রপাতে মারা যান কৃষক কবির মোল্লা (৪৮)। তিনি ফরিদপুর পৌরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম গঙ্গাবর্দী মহল্লার গোপাল মোল্লার ছেলে। ধান নিয়ে মাঠ থেকে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়।

এছাড়া মঙ্গলবার বিকেলেই সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নে দুলাল খান (৫৮) ও মধুখালী উপজেলার চাঁদপুরে কবির শেখ (৪০) নামে আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে বজ্রপাতে। তারা দু’জনেই কৃষক।

মানিকগঞ্জে স্কুলছাত্রসহ ২ জনের মৃত্যু

মানিকগঞ্জ ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট জানিয়েছেন, পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় স্কুল শিক্ষার্থীসহ দু’জন মারা গেছেন এ জেলায়। বজ্রপাতে আহত হয়েছেন আরও দু’জন। তাদের মধ্যে একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পাঠানো হয়েছে।

নিহতরা হলেন— সদর উপজেলার গিলন্ড গ্রামের মাসুদ মোল্লার ছেলে আসিফ মোল্লা (১৬) ও ঘিওর উপজেলার বড়টিয়া গ্রামের কৃষক আজমত আলী (৫০)। মৃত আসিফ স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদ জানান, আসিফ মোল্লাসহ কয়েকজন বিকেলে ঘুড়ি উড়ানোর জন্য খোলা মাঠে যায়। বজ্রপাতের সৃষ্টি হলে ঘটনাস্থলেই আসিফ মোল্লা মারা যায়। এসময় বজ্রপাতে আহত হয় আসিফের বন্ধু আব্দুল্লাহ ও অনিক। এদের মধ্যে অনিককে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। মুন্নু মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে আব্দুল্লাহকে।

অন্যদিকে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন জানান, আজমত আলী মানিকগঞ্জ পৌর এলাকায় পৌলি গ্রামে আব্দুল হকের বাড়িতে দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন। মঙ্গলবার বিকেলে ধান খেত থেকে ধানের বোঝা মাথায় নিয়ে তিনি আব্দুল হকের বাড়ি ফিরছিলেন। এসময় তার ওপর বজ্রপাত হলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।

ময়মনসিংহে ফুটবল খেলার সময় প্রাণ গেল বজ্রপাতে

ময়মনসিংহ থেকে ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট জানিয়েছেন, তারাকান্দায় ফুটবল খেলার সময় বজ্রপাতে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের খলিশাজান গ্রামে খোলা মাঠে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এসময় আহত হয়েছেন আরও একজন। নিহত আতিকুল ইসলাম উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের খলিশাজান গ্রামের আজমত আলীর ছেলে।

তারাকান্দা থানার ওসি আবুল খায়ের বলেন, দুপুরে কয়েকজন যুবক রাস্তার পাশে খোলা মাঠে ফুটবল খেলতে নামেন। এ সময় বজ্রপাতে আতিকুল ইসলামসহ দু’জন আহত হন।

জামালপুরে বজ্রপাতে কৃষি শ্রমিকের মৃত্যু

জামালপুর থেকে সারাবাংলার ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট জানিয়েছেন, মাদারগঞ্জে বজ্রপাতের সময় বিদ্যুতায়িত হয়ে তোজা মিয়া (৫৫) নামে এক ধানকাটা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সময় বজ্রপাত হলে ধানক্ষেতে বিদ্যুতায়িত হয়ে তিনি মারা যান।

মাদারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামছুল হুদা খান জানান, দুপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সময় বজ্রপাত হলে ক্ষেতেই বিদ্যুতায়িত হয়ে মাটিতে পড়ে যান ওই কৃষি শ্রমিক। পাশের ক্ষেতের শ্রমিকরা তাকে উদ্ধার করে মাদারগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কারও কোনো অভিযোগ না থাকায় এ বিষয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।

কিশোরগঞ্জে বজ্রপাতে প্রাণ গেল রাখালের

সারাবাংলার কিশোরগঞ্জ করেসপন্ডেন্ট জানান, নিকলীতে বজ্রাঘাতে আরিফুল ইসলাম (১৭) নামে এক কিশোর মারা গেছে। আরিফুল ইসলাম গুরুই ইউনিয়নের বেতি নোওয়াগাঁও এলাকার মিয়া চাঁনের ছেলে। সে রাখাল হিসেবে কাজ করত।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে আরিফুল গুরুই ইউনিয়নের বিয়াতিরচর হাওর থেকে গরু আনতে যায়। এ সময় প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। আরিফুল বজ্রাঘাতে গুরুতর আহত হলে নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়। নিকলী থানার ওসি শামসুল আলম সিদ্দিকী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে যুবকের মৃত্যু

সুনামগঞ্জ থেকে সারাবাংলার ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট জানিয়েছেন, দোয়ারাবাজার উপজেলায় বজ্রপাতে আবু তাহের (৩৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজির আলম তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আবু তাহের দোয়ারা বাজার সদর ইউনিয়নের তেগাঙ্গা গ্রামের তাজ উদ্দিনের ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, আবু তাহের বাজার করার জন্য দোয়ারা সদরে গিয়েছিলেন। দোয়ারা বাজার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে ছিলেন তিনি। এসময় হঠাৎ করে ঝড়ো বাতাস ও প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে দৌড়ে আশ্রয় নিতে গেলে বজ্রাঘাতে তার মৃত্যু হয়।

সারাবাংলা/এসএসএ

বজ্রপাত

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কোস্ট গার্ডের নতুন ডিজি জিয়াউল হক
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:৩২

সম্পর্কিত খবর