আমের বাম্পার ফলন নওগাঁয়, ৩ লাখ মেট্রিক টন ছাড়ানোর প্রত্যাশা
২১ মে ২০২১ ০৮:১৩
নওগাঁ: কৃষিপ্রধান জেলা নওগাঁয় গত বছরের তুলনয় এ বছর আমের আবাদ বেড়েছে। এখন পর্যন্ত আম বাগানগুলোর যে অবস্থা, তাতে ফলনও খুব ভালো হবে বলে প্রত্যাশা করছে কৃষি বিভাগ। তাদের অনুমান, এ বছর জেলায় আমের বাম্পার ফলন হবে। আর উৎপাদন ছাড়িয়ে যাবে ৩ লাখ মেট্রিক টন।
কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, বৃহস্পতিবার (২০ মে) থেকে আম ভাঙা, অর্থাৎ গাছ থেকে আম পাড়া শুরু হয়েছে নওগাঁ জেলায়। প্রথমেই ভাঙা হয়েছে গুটি আম। তবে এ মৌসুমে মুকুল পর্যায়ে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সব গাছই আমের ভারে নুয়ে রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শামসুল ওয়াদুদ জানালেন, গত মৌসুমে এ জেলায় মোট আমের বাগান ছিল ২৪ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে। এ বছর বাগান হয়েছে ২৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। সে হিসাবে জেলায় গত বছরের তুলনায় ১ হাজার ৭৫ হেক্টর বেশি জমিতে আমের বাগান গড়ে উঠেছে।
গত বছরের হিসাব বিবেচনায় রেখে চলতি মৌসুমে হেক্টর প্রতি গড়ে ১২ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। সে হিসাবে জেলায় এ বছর মোট আম উৎপাদনের পরিমাণ প্রত্যাশা করা হচ্ছে ৩ লাখ ১০ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। গড়ে প্রতি কেজি আম ৫০ টাকা করে ধরলেও এই আমের দাম আসে ১ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফদরের উপপরিচালক সারাবাংলাকে বলেন, গত বছরের হিসাব ধরে এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বাস্তবে এর চেয়ে বেশি আম উৎপাদন হবে বলে প্রত্যাশা আমাদের। কেননা এ বছর এখন পর্যন্ত বড় ধরনের ঝড় হয়নি। ফলে আমের তেমন ক্ষতি হয়নি বলা চলে। ফলে অধিদফতরের নির্ধারণ করা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আরও অনেক বেশি আম উৎপাদন হবে বলেই মনে করছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের এমন তথ্যের সঙ্গে একমত স্থানীয় আম চাষিরাও। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদস্য স্নাতকোত্তীর্ণ রেদওয়ানুর রহমান মুনও সাপাহারের কোচকুড়লিয়ায় গড়ে তুলেছেন আমের বাগান। ১৪ বিঘা জমিতে ৫টি বাগান করেছেন তিনি।
মুন সারাবাংলাকে বলেন, ইচ্ছা ছিল কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার। পারিবারিক জমিতে আমের বাগান ছিল। আগে লিজ দিয়ে দেওয়া হতো। এবার অনেক ভেবেচিন্তে নিজেই বাগান করতে নেমেছি। মানুষকে রাসায়নিকমুক্ত ফ্রেশ আম খাওয়াতে চাই। এবার যে আমের বাগান করেছি, তাতে এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে ফলন ভালো হবে। আগামী কয়েকটা দিন আবহাওয়া প্রতিকূল না হলে আশা করছি ভালো পরিমাণে আম পাব। প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী আম বিক্রি করতেও অন্য আম ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
কোন উপজেলায় আমের আবাদ কত
স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য বলছে, জেলায় সবচেয়ে বেশি ১০ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে আমের বাগান হয়েছে পোরশা উপজেলায়। সাপাহার উপজেলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৫২৫ হেক্টর ও পত্নীতলা উপজেলায় তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে আমের বাগান হয়েছে।
এছাড়া নিয়ামতপুর উপজেলায় ১ হাজার ১৩০ হেক্টর, ধামইরহাট উপজেলায় ৬৭৫ হেক্টর, মহাদেবপুর উপজেলায় ৬২৫ হেক্টর, নওগাঁ সদর উপজেলায় ৪৪০ হেক্টর, মান্দা উপজেলায় ৪০০ হেক্টর, বদলগাছি উপজেলায় ৩৩৫ হেক্টর, আত্রাই উপজেলায় ১২০ হেক্টর ও রানীনগর উপজেলায় ৩৫ হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে।
কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এসব উপজেলায় এ বছর গুটি আম, গোপালভোগ, রানিপছন্দ, খিরসাপাত, হিমসাগর, নাগফজলি, ল্যাংড়া, ফজলি, আম্রপালি, আশ্বিনা, বারি-৪ ও ঝিনুক জাতের আমের আবাদ হয়েছে।
কোন আম উঠবে কবে
বৃহস্পতিবার থেকেই নওগাঁতে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘আম ভাঙা’ শুরু হয়েছে। গুটি আম দিয়ে শুরু হয়েছে এ আনুষ্ঠানিকতা। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলার আমের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৭ মে থেকে গোপালভোগ ও রানিপছন্দ, ২ জুন থেকে খিরসাপাত ও হিমসাগর, ৪ জুন থেকে নাগফজলি, ১০ জুন থেকে ল্যাংড়া, ২০ জুন থেকে ফজলি, ২২ জুন থেকে আম্রপালি এবং ৮ জুলাই থেকে আশ্বিনা, বারি-৪ ও ঝিনুক জাতের আম ভাঙা শুরু হবে। নির্ধারিত এই সময় মেনেই আম ভাঙতে অনুরোধ জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
সারাবাংলা/টিআর