।।স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা : শাহীনের নয় বছরের মেয়ে সূচনা। মেয়ের চিন্তা করতে করতে চলে গেল শাহিন। মেয়ের কাছে বাবার কথা কী বলব? আমার মেয়ের কি হবে এখন। আমার মেয়েকে আমি কী জবাব দিব। তার স্বপ্নই ছিল সূচনা কে নিয়ে।
বার্ন ইউনিটের ২য় তলায় আইসিইউ’র সামনে শাহীনের স্ত্রী রীমা আক্তার ক্রন্দনরত অবস্থায় কথাগুলো বলছিলেন। তিনি বলেন, আমার এখন কী হবে? আমার সন্তানের এখন কী হবে। কে দেখবে আমাকে?
শাহীনের অবস্থার অবনতির খবর শুনে আত্মীয় স্বজনরা বার্ন ইউনিটে ভিড় করেন। খবর পেয়ে সূচনার খালা পারভীন বেগমের সঙ্গে মেয়ে সূচনাও বার্ন ইউনিটে চলে আসে এবং খালাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
গত ১৮মার্চ ঢাকায় আনা হয় তাকে। তারপর থেকেই স্ত্রী রীমা আক্তার ও মা জাহানারা বেগম সারাক্ষণ শাহীনের সঙ্গে ছিলেন। গত ২১ মার্চ শাহিনের প্রথম অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকরা। এবং সেদিন থেকেই মুখে খাওয়া শুরু করে। এর আগে থেকেই সে মুখেই খাইত।
স্ত্রী রীমা জানান, গত রবিবার দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচার হয় শাহীনের। সেই দিন অজ্ঞান করার পর থেকেই তার খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তারপর আর কিছুই খাইতে পারে নাই। শুধু মেয়ে সূচনার কথা জিজ্ঞেস করেছিল একবার।
এর আগে গত ১৮ মার্চ বিকালে শাহীন বেপারী কে ঢাকায় বার্ন ইউনিটে ভর্তি করে। তখন নেপালের চিকিৎসাপত্র দেখে চিকিৎসরা বলেছিল তার শরীরের ১৬ শতাংশ গভীর দগ্ধ রয়েছে। এছাড়া তার শরীরে কিছু আঘাতও রয়েছে। বিমান দুর্ঘটনায় আহত যে কয়জনকে বার্ন ইউনিটে আনা হয়েছে তাদের তুলনায় শাহীনের অবস্থা একটু বেশি আহত বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন।
সেইদিনই দেখার পর ডা. সেন জানান, শাহীন ব্যাপারীর হাত, পা, পিঠ ও বুক সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ৩২ শতাংশ গভীর আকারে পোড়া রয়েছে।
নেপাল থেকে আহত শাহীনের সঙ্গে আসা ঢামেক হাসপাতালের এ্যানেসথেসিওলজি বিভাগের চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসক টিম যাওয়ার আগে আহতদের যে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে তা হাই লেভেলের। তাদের চিকিৎসায় আমরা সেটিসফিকশন ছিলাম।’
মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার বান্দেগাঁও গ্রামের মৃত শফিউল বেপারীর ছেলে শাহীন (৪৩)। স্ত্রী রীমা আক্তার, ৯ বছরের একমাত্র মেয়ে সূচনা ও মা জাহানারা বেগমকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী মিঝমিঝি এলাকাতে থাকতেন শাহিন। তিনি ঢাকা সদরঘাট এলাকার বিক্রমপুর গার্ডেন সিটিতে মেসার্স করিম অ্যান্ড সন্স নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
স্বজনরা জানায়, শাহীনের ময়নাতদন্ত শেষে তার মরদেহ বর্তমান ঠিকানা নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী এলাকায় দাফন করা হবে।
সারাবাংলা/এসএসআর/একে