পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শর্তে জামিন পেলেন রোজিনা ইসলাম
২৩ মে ২০২১ ১০:৫১
ঢাকা: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়ের করা মামলায় আদালতের তৃতীয় কার্যদিবসে এসে জামিন পেয়েছেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম। পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শর্তে পাঁচ হাজার টাকার বন্ডে তার জামিন আদেশ মঞ্জুর করেছেন আদালত।
সচিবালয় থেকে নথি চুরির অভিযোগে তার নামে ১৯২৩ সালের অফিশিয়াল সিক্রেটস আইনে মামলা করেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মামলায় একরাত থানা হাজতে ও পাঁচ দিন কারাগারে থাকার পর জামিন পেলেন রোজিনা। তার পক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, জামিন আদেশ পৌঁছানোর পর বিকেলের আগেই রোজিনা কারামুক্ত হবেন বলে তারা আশাবাদী।
রোববার (২৩ মে) ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম বাকী বিল্লাহর ভার্চুয়াল আদালত রোজিনার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (২০ মে) রোজিনার জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে আদেশের জন্য আজকের দিন নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন এই আদালত।
রোজিনা ইসলামের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী, জোতির্ময় বড়ুয়া ও আমিনুল গনি টিটো ভার্চুয়াল আদালতে শুনানিতে অংশ নেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের (সিএমএম) পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তার বক্তব্যে বলেন, শর্তসাপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেওয়া যেতে পারে রোজিনা ইসলামকে। আসামিপক্ষের এহসানুল হক সমাজী তার বক্তব্য সমর্থন করেন। পরে পাসপোর্ট জমা দেওয়া ও পাঁচ হাজার টাকার বন্ডে রোজিনা ইসলামকে জামিন দেওয়া হয়।
এর আগে, সোমবার (১৭ মে) রাতে শাহবাগ থানায় মামলা দায়েরের পর মঙ্গলবার (১৮ মে) রোজিনাকে আদালতে নেওয়া হয়েছিল। ওই দিন পুলিশের রিমান্ড আবেদন নাকচ করে দিয়ে এবং রোজিনার জামিন আবেদন অনিষ্পন্ন রেখে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন। একইসঙ্গে জামিন আবেদনের বিষয়ে শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেন। পরে বৃহস্পতিবার জামিন আবেদনের শুনানি নেন আদালত। পরে জামিন বিষয়ে আদেশের জন্য আজকের দিন নির্ধারণ করেন দিয়েছিলেন।
এর আগে, সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে যান রোজিনা ইসলাম। সেখানে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় তাকে আটকে রাখা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেও তার চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা না করে রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে রাত পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ জানায়, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩৭৯ ও ৪১১ ধারা এবং ১৯২৩ সালের অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ৩ ও ৫ ধারায় মামলা করা করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ওই মামলায় শাহবাগ থানা পুলিশ রোজিনা ইসলামকে গ্রেফতার দেখায়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের একান্ত সচিব দাফতরিক কাজে সচিবের কক্ষে অবস্থান করার সময় রোজিনা ইসলাম তার কক্ষে প্রবেশ করেন। তিনি দাফতরিক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রের ছবি মোবাইল ফোনে তোলেন এবং কিছু কাগজপত্র শরীরের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে ফেলেন। এসময় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য মো. মিজানুর রহমান খান তাকে বাধা দিলে রোজিনা ইসলাম নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঘটনাস্থলে হাজির হন। এসময় অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম তল্লাশি করে রোজিনা ইসলামের কাছ থেকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র এবং নথিপত্রের ছবি সম্বলিত মোবাইল উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় প্রতীয়মান হয় যে ডকুমেন্টসগুলো রোজিনা ইসলাম চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে গ্রেফতারের পর থেকেই তার মুক্তির দাবিতে সরব হয় দেশের সাংবাদিক ইউনিয়ন ও সংগঠনগুলো। এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও। সিনিয়র এই সাংবাদিকের মুক্তির দাবিতে লাগাতার কর্মসূচির ঘোষণা ছিল বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা রিপোর্টারস ইউনিটিসহ দেশের প্রায় সব সাংবাদিক সংগঠনের। রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে গত কয়েক দিন ধরেই মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি টানা পালন করে আসছেন সাংবাদিকেরা।
আরও পড়ুন-
- রোজিনা ইসলাম ন্যায় বিচার পাবেন: আইনমন্ত্রী
- রোজিনা ইসলামের জামিন বিষয়ে আদেশ আজ
- রোজিনা ইসলামের মুক্তিসহ ৪ দফা দাবি ডিইউজের
- স্বেচ্ছা কারাবরণের আবেদন বরিশালের ২৫ সাংবাদিকের
- রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি ৮৩ বিশিষ্ট নাগরিকের
- স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিং ‘বয়কট’ করল ২ সাংবাদিক সংগঠন
- ‘রোজিনাকে কাগজ ধরিয়ে দিয়ে অভিযোগ দাঁড় করানো হয়েছে’
- ডিবির তদন্ত শুরু, রোজিনার ফোন পাঠানো হবে ফরেনসিক ল্যাবে
- রোজিনা ইসলামের মুক্তি দাবি এডিটরস গিল্ড ও সম্পাদক পরিষদের
- রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে নারী সাংবাদিকদের প্রতীকী অনশন
- রোজিনা ইসলামের মুক্তি ও কালাকানুন বাতিলের দাবি জানাল ইআরএফ
- রোজিনাকে আটকে রাখা সংবিধান পরিপন্থী— দাবি মানবাধিকারকর্মীদের
- রোজিনা ইসলামের প্রতি আচরণ সাংবাদিকতার টুঁটি চেপে ধরার শামিল: টিআইবি
সারাবাংলা/এআই/এএম/টিআর