Wednesday 20 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বেলারুশে সাংবাদিককে গ্রেফতারে বিমান ‘ছিনতাই’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৪ মে ২০২১ ০৯:৪৪

লিথুনিয়াগামী রায়ান এয়ারের একটি বিমানের গতিপথ ঘুরিয়ে মিনস্কে নামতে বাধ্য করার পর সরকারবিরোধী সাংবাদিক রোমান প্রোটাসেভিচকে গ্রেফতারের অভিযোগ উঠেছে প্রেসিডেন্ট অ্যালেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর বিরুদ্ধে।

বেলারুশের টেলিগ্রাম চ্যানেল নেক্সটা মিডিয়া নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, তাদের সাবেক সম্পাদক রোমান প্রোটাসেভিচকে গ্রেফতার করেছে সরকারি কর্তৃপক্ষ। যদিও, বেলারুশ সরকার বা রায়ান এয়ার কর্তৃপক্ষের কেউই ওই সাংবাদিককে গ্রেফতারের বিষয়টি স্বীকার করেনি।

বিজ্ঞাপন

তবে, বেলারেুশের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, বিমানে বোমা আছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে বিমানটির গতিপথ ঘুরিয়ে মিনস্কে জরুরি অবতরণ করানো হয়। যদিও, পরে বিমানে কোনো বোমা পাওয়া যায়নি।

টেলিগ্রামভিত্তিক নেক্সটা মিডিয়াই প্রথম রোমান প্রোটাসেভিচ গ্রেফতার হওয়ার খবর জানায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিমান তল্লাশি করা হয়েছে, কোনো বোমা পাওয়া যায়নি। সব যাত্রীকে আরেকবার নিরাপত্তা তল্লাশির জন্য পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন নেক্সটা সাংবাদিক রোমান প্রোটাসেভিচ। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

নেক্সটার প্রধান সম্পাদক বিমানের এক যাত্রীর বক্তব্য টুইট করে জানান, মিনস্কে অবতরণের পর রোমান প্রোটাসেভিচ যাত্রীদেরকে তার পরিচয় দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, এখানে তার মত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে।

বিবিসি জানায়, রায়ান এয়ার ফ্লাইট এফআর-৪৯৭৮ গ্রিসের এথেন্স থেকে রোববার লিথুনিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে যাচ্ছিল। কিন্তু লিথুনিয়া সীমান্তে পৌছাঁর আগেই ফ্লাইটটিকে পূর্ব দিকে ঘুরিয়ে বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে নিয়ে আসা হয়। ফ্লাইটটিতে ১৭১ জন যাত্রী ছিল।

বিজ্ঞাপন

রায়ান এয়ার এক বিবৃতিতে বলেছে, বেলারুশের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে বিমানে সম্ভাব্য নিরাপত্তা হুমকি থাকার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে কাছের মিনস্ক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা বলা হয়।

কিন্তু, ফ্লাইটরাডার১২৪ ওয়েবসাইট থেকে দেখা যাচ্ছে, লিথুয়ানিয়া পৌঁছানোর আগে উড়োজাহাজটি পূর্বে মিনস্কের দিকে ঘুরে যাচ্ছে। কিন্তু বিমানটি মোড় নেওয়ার ওই জায়গাটি থেকে গন্তব্যস্থল ভিলনিয়াসই বেশি কাছে ছিল।

রায়ান এয়ার জানায়, মিনস্ক বিমানবন্দরে তল্লাশির পর কিছু পাওয়া যায়নি। পাঁচ ঘণ্টা পর বিমানটিকে উড্ডয়নের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে, তাদের বিবৃতিতে সাংবাদিক প্রোটাসেভিচের গ্রেফতারের কথা উল্লেখ করা হয়নি।

এদিকে, বেলারুশের রাষ্ট্র মালিকানাধীন গণমাধ্যম বেল্টা জানায়, বোমার ব্যাপারে সতর্কতা জারি করার পর প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো ব্যক্তিগতভাবে বিমানটিকে অবতরণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেটিকে পাহারা দিয়ে আনতে মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানও পাঠানো হয়েছিল।

অন্যদিকে, ইউরোপের দেশগুলো এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বেলারুশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের অভিযোগ এনেছে। ইউরোপের শীর্ষ রাজনৈতিকরা ইইউ এবং ন্যাটোকে এ ঘটনায় হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।

লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট বেলারুশ কর্তৃপক্ষের এই কাজকে ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড উল্লেখ করেছেন। লাটভিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেলারুশের এই কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইন পরিপন্থি বলে উল্লেখ করে এর কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন।

গ্রিস এবং ফ্রান্সও এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ ছিনতাই করা নজিরবিহীন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, এর সাজা পেতেই হবে। ন্যাটো মহাসচিবও এ ঘটনাকে মারাত্মক ও বিপজ্জনক বলে বর্ণনা করেছেন।

অপরদিকে, নির্বাসনে থাকা বেলারুশের বিরোধীদলীয় নেত্রী সেভেৎলানা তিখানোভস্কায়াও বিমান জরুরি অবতরণে বাধ্য করার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং সাংবাদিক প্রোটাসেভিচের মুক্তি দাবি করেছেন। বেলারুশে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো এই নেত্রীকে মারধরের পর তিনি দেশত্যাগে বাধ্য হন। বর্তমানে তিনি লিথুনিয়ায় অবস্থান করছেন।

প্রসঙ্গত, ৬৬ বছর বয়সী আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো ১৯৯৪ সাল থেকে বেলারুশ শাসন করছেন। ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সময় শত শত বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করে সরকার।

বেলারুশের নেক্সটা মিডিয়া নির্বাচনের সময় এবং এর পরেও বিরোধীদলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। প্রোটাসেভিচ একজন সাংবাদিক, ব্লগার, ফটোগ্রাফার এবং আন্দোলনের কর্মী। ২০১৯ সালে প্রোটাসেভিচ বেলারুশ ছেড়ে চলে যান এবং ২০২০ সালে নেক্সটার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের খবর সংগ্রহ করেন। বেলারুশে তার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। প্রোটাসেভিচকে সন্ত্রাসীর তকমা দেওয়া হয়েছে এবং বেলারুশে তিনি মৃত্যুদণ্ডের মুখে আছেন।

সারাবাংলা/একেএম

আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো বেলারুশ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর