‘ইসরাইলের নৃশংসতা ইস্যুতে পশ্চিমাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে’
২৬ মে ২০২১ ১৯:১২
ঢাকা: তিন দশক ধরে শান্তি আলোচনার প্রক্রিয়া ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কিছুই দেয়নি। বরং যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা সবসময় মানবতার কথা বললেও তারা ইসরাইলি হামলার কোনো নিন্দা করে না। বরং অস্ত্র দিয়ে ইসরাইলকে সাহায্য করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাবিশ্বের এই সমর্থনে ইসরায়েল প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে এই সংঘাতকে আরও তীব্র করে তুলেছে। তাই প্রশ্ন উঠেছে— যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এই বর্বরতাকে আর কতদিন অব্যাহত রাখবে?
‘ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলি নৃশংসতা: কোথায় মানবতা?’ শিরোনামে আয়োজিত এক ওয়েবিনারে বক্তারা এমন মন্তব্য করেন। বুধবার (২৬ মে) নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিউট ফর পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের (এসআইপিজি) অধীন সেন্টার ফর পিস স্টাডিজের (সিপিএস) উদ্যোগে এই ওয়েবিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘ফিলিস্তিনে ভবিষ্যত সহিংসতা মোকাবিলায় বর্তমান যুদ্ধবিরতি যথেষ্ট নয়। এর পরিবর্তে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের ভিত্তিতে অবিলম্বে স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সব সম্মিলিত প্রচেষ্টার মূল বিষয় হওয়া উচিত।’
সচিব আরও বলেন, ‘ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর নৃশংসতা ও অপরাধের জন্য ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একটি আন্তর্জাতিক স্বাধীন কমিশন গঠন করতে হবে।’
ফিলিস্তিনিদের প্রতি বাংলাদেশের অটল সমর্থন ও সংহতি জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফিলিস্তিনিদের অধিকারের জন্য বাংলাদেশের অকুণ্ঠ সমর্থন প্রদর্শনে আন্তর্জাতিক পরিসরে সোচ্চার ছিলেন।’
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব হিউম্যানিটিজ অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেসের (এসএইচএসএস) ডিন অধ্যাপক আবদুর রব খান বলেন, যদিও ক্যাম্প ডেভিড অ্যাকর্ড ও অসলো শান্তি প্রক্রিয়ার মতো বিভিন্ন শান্তি আলোচনা হয়েছে, তবে বিশ্বজুড়ে সমর্থিত ইসরায়েল প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে এই সংঘাতকে আরও তীব্র করে তুলেছে।
ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের নৃশংসতা ও শান্তি প্রক্রিয়া সম্পর্কে ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর আলোকপাত করার পাশপাশি প্রশ্ন রাখেন— আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এই বর্বরতাকে আর কতদিন অব্যাহত রাখতে দেবে?
মানবতা আজ কোথায়?— এমন প্রশ্ন রেখে ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান বলেন, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলিদের নৃশংসতার ক্ষেত্রে মানবাধিকার অবহেলিত হয়েছে। সম্ভাব্য ন্যায়বিচারের অভাবে ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ বেড়েছে। গত তিন দশকে শান্তি আলোচনার প্রক্রিয়া ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কিছুই দেয়নি। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা সবসময় মানবতার কথা বললেও তারা ইসরাইলি হামলার কোনো নিন্দা করে না, বরং অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছে। তিনি বাংলাদেশি সরকার ও জনগণকে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অশেষ ধন্যবাদ জানান।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক বলেন, এই সংকট নিরসনে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শক্ত অবস্থান নেওয়া উচিত। জাতিসংঘ, ওআইসি ও আইসিসি এ বিষয়ে কার্যকর সমাধান আনতে ভূমিকা রাখতে পারে, যদিও ইসরায়েলের যেকোনো বহুপাক্ষিক হস্তক্ষেপ না মানার ইতিহাস রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কর্তৃক ইসরাইলের বিরুদ্ধে আনা যুদ্ধপরাধের অভিযোগগুলো নিরপেক্ষ তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলেও মত দেন সাবেক এইপররাষ্ট্র সচিব।
সারাবাংলা/জেআইএল/টিআর