সিএন্ডএফ এজেন্ট থেকে বিমান বাংলাদেশের ভুয়া চেয়ারম্যান!

ঢাকা: নাম শামীম আহমেদ (৪৫)। নিজেকে কখনো পরিচয় দেন মোস্তফা মনির, কখনো তিনি মোশাররফ। তার পরিচয় রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি দাবি করেন, টাকার বিনিময়ে বিমানে চাকরি দিতে পারেন।

তার বান্ধবী তানজীলা সুলতানা সমাপ্তির বয়স ২৫ বছর। বিমানের কথিত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গেই থাকতেন তিনি। পরিচয় দিতেন বিমানের এয়ার হোস্টেস বা কেবিন ক্রু হিসেবে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও বিমানবালার ৪ জনের চক্র মিলে বিমানে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা করতেন তারা। হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা।

বুধবার (২৬ মে) রাতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার (২৭ মে) তাদের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি।

শামীম, তানজীলা ছাড়া গ্রেফতার বাকি দুইজন হচ্ছেন বজলু রশিদ ও শরিফুল ইসলাম।

বিমানের ভুয়া নিয়োগ পরীক্ষা

সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, শামীম নিজেকে বিমানের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবার কখনো এমডি দাবি করেন। তিনি ও তার চক্র বিমানে চাকরি দেওয়ার নাম করে অনেকের কাছ থেকে ১৩ থেকে ১৭ লাখ টাকা করে আত্মসাৎ করে চাকরি না দিয়ে প্রতারণা করেন।

সিআইডি জানায়, চক্রের সদস্যরা বিমানের নিয়োগের সার্কুলার হওয়ার পর তাদের এলাকার লোকজনকে বিমানে চাকরি দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেন। বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য তারা নিয়োগপ্রত্যাশীদের ভুয়া পরীক্ষা নিতেন এবং তাদের সবাইকে ফেল করিয়ে দিতেন। পরে ফেল করাদের টাকার বিনিময়ে নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা টাকা হাতিয়ে নিতেন।

বিমানের একটি বিভাগে সহকারী পরিচালকের চাকরির জন্য শামীমকে ২০১৯ সালে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা দিয়েছেন একজন ব্যক্তি। তিনি প্রতারিত হয়ে এ বিষয়ে একটি মামলা করেন। সেই মামলায় আসামিদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

কে এই শামীম

দীর্ঘদিন আগে শামীম একটি সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। সেই সূত্রে বিমানবন্দরের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। সেখান থেকেই প্রতারণার কৌশলগুলো রপ্ত করেন। এরপর সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানের চাকরি ছেড়ে দেন শামীম।

গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে ফরমাল শার্ট, প্যান্ট, স্যুট, মোবাইল এবং ভুয়া নিয়োগপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বিমানে নানা জনকে চাকরি দেওয়ার নামে ৮০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে সিআইডির কাছে তথ্য রয়েছে।

তবে শামীম সিআইডির কাছে জানান, বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। এর আগে সে বেশ কয়েকজনকে বিমানের কেবিন ক্রু, এক্সিকিউটিভ অফিসার, সিগন্যাল ম্যান, চেকিং অফিসার, এক্সিকিউটিভ ম্যানেজার পদে অনেককে চাকরি দিয়েছেন। তবে এবার চাকরি দিতে পারেননি।

এয়ার হোস্টেস তানজীলা

বিমানের কথিত এয়ার হোস্টেস তানজীলা নিজেকে একজন টিকেটিং অফিসার বলে দাবি করেন। তিনি কখনো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স আবার কখনো রিজেন্ট এয়ারওয়েজের টিকেটিং অফিসার বলে দাবি করেন। তিনি শামীমের সঙ্গে যোগসাজশ করে তার এলাকার লোকজনকে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নিতেন। তানজীলা নিজেকে এয়ার হোস্টেস বোঝানোর জন্য তার ফেসবুক পেইজে কেবিন ক্রু’র পোশাক পরে ছবি দিতেন। একবার তিনি নিয়োগপ্রত্যাশীদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য বিমানে করে সৈয়দপুরেও যান। তানজীলা অবিবাহিত। প্রতারণার সুবিধার্থে শামীম ও তানজীলা একই ফ্ল্যাটে থাকতেন।

বজলুর রশিদ সাবেক সেনা সদস্য

গ্রেফতার হওয়া তৃতীয়জন বজলুর রশিদ সেনাবাহিনীর সৈনিক হিসেবে র‍্যাবের সদস্য ছিলেন। ২০০৭ সালে একটি ডাকাতির মামলায় তাকে চাকরিচ্যুত করে জেলে পাঠানো হয়। ৮ বছর জেল খেটে তিনি বের হয়ে এই প্রতারণা চক্রের সঙ্গে যোগ দেন। প্রতারণা চক্রে বজলুর রশিদ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বডিগার্ড দাবি করতেন।

বিমান বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের যোগসাজশ

সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে বিমান বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের যোগসাজশের আভাস পাওয়া গেছে। আমরা বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছি।

সারাবাংলা/ইউজে/একে

চাকরির নামে প্রতারণা টপ নিউজ বিমানের ভুয়া চেয়ারম্যান