তীব্র তাপদাহে ফলন বিপর্যয়, লোকসানের মুখে লিচু চাষিরা
২৯ মে ২০২১ ১২:৪১
নারায়ণগঞ্জ: জেলার সোনারগাঁওয়ে লিচু চাষিদের মাথায় হাত। তীব্র তাপদাহের কারণে এ বছর উপজেলায় লিচুর ফলন বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। প্রায় দুই শতাধিক লিচু বাগানে এবার আশানুরূপ ফলন হয়নি। ফলে বাগান মালিক ও মৌসুমি লিচু ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। তার ওপর চলমান করোনা মহামারির কারণে লিচুর সঠিক দাম পাওয়া নিয়েও সংশয়ে রয়েছেন তারা।
জানা গেছে, সোনারগাঁও উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের মাটি ও জলবায়ু লিচু উৎপাদনের জন্য উপযোগী। এই এলাকার লিচু দেশের অন্য এলাকার চেয়ে আগে বাজারে আসে এবং অনেক রসাল। তাই সোনারগাঁওয়ের লিচুর দেশজুড়ে ব্যাপক চাহিদা। কিন্তু এ বছর তুলনামূলক কম বৃষ্টিপাত ও তীব্র তাপদাহের কারণে এলাকার অন্তত দুই শতাধিক বাগানের লিচু ও এর খোসা পুড়ে ফেটে যাচ্ছে। একটি লিচু যে পরিমাণ বড় ও পুষ্টিকর হওয়ার কথা, কিন্তু তাপদাহের কারণে তা হচ্ছে না। এতে লোকসানের মুখে পড়েছে লিচু চাষিরা। মধু মাসের এ সময়টাতে এলাকার লিচু চাষি, বাগানি ও ব্যবসায়ীরা খুশি হওয়ার কথা থাকলেও উল্টো মাথায় হাত পড়েছে তাদের।
সোনারগাঁও পৌরসভা, বৈদ্যেরবাজার, মোগরাপাড়া ইউনিয়নের একাধিক বাগান ঘুরে লিচু চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি মৌসুমে লিচু উৎপাদন মারাত্মক ব্যাহত হবে। লিচু বিক্রি করে লাভ তো দূরের কথা, সারা বছরে বাগান পরিচর্যার খরচই উঠবে কিনা এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।
চাষিরা অভিযোগ করেন, এলাকার প্রত্যেকটি বাগানে এ অবস্থা চলতে থাকলেও স্থানীয় কৃষি বিভাগের কোনো কর্মকর্তা নূন্যতম খোঁজখবর নিচ্ছেন না।
সরেজমিন আজমপুর গ্রামে গিয়ে কথা হয় বাগানের মালিক কুদ্দুছ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, বাগানের দেশি, মুম্বাই ও চায়না থ্রি জাতের লিচু এখনো কাঁচা। আর পাটনাই জাতের লিচু আধা-পাকা। মাত্র সপ্তাহ দুয়েক পরেই এ জাতের লিচু বিক্রি উপযোগী হত। কিন্তু এ সময়ে লিচু ফেটে চিড় ধরেছে এবং খোসায় কালো দাগ পড়ে ফেটে যাচ্ছে। অনেক লিচু তীব্র তাপদাহের কারণে রঙ ধরতে শুরু করেছে। এছাড়া প্রতিদিনই ঝরে পড়ছে লিচু। বৃষ্টি না হওয়ায় লিচু ফোলার জন্য গত সপ্তাহ ধরে বাগানে বাংলা গুটি সার, লাল সার, টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) ও জিপসাম দিচ্ছেন। একইসঙ্গে কীটনাশক ও পানি ছিটানো হচ্ছে। কিন্তু এতে লিচু ফেটে যাওয়ার কোনো প্রতিকার হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, লিচুর ব্যাপারে পরামর্শ তো দূরের কথা, এখানকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার চেহারা পর্যন্ত আমি দেখিনি।
লিচু ব্যবসায়ী মাসুম মিয়া জানান, গত বছরও কম বৃষ্টিপাত ও তীব্র তাপদাহের করণে লিচু বড় ও রসালো হয়নি। এরপর করোনার সংক্রমণ রোধে লকডাউন থাকার করণে লাখ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে, এবারও একই অবস্থা। তাই এখানো বাগান কেনার ইচ্ছা পোষণ করছি না। এবারের আবহাওয়া দেখে ও লিচুর বাগানগুলো দেখে বুঝা যাচ্ছে গতবারের চেয়ে এবারের লিচুর ফলন আরও খারাপ হবে। সেজন্য চিন্তা ভাবনা করে এবার লিচুর বাগান কিনব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরা আক্তার জানান, লিচু একটি মৌসুমি ফল। লিচুর ফুল ও গোটা থেকে সব কিছু প্রকৃতি নির্ভর। গোটা আশার সময় বৃষ্টি হলে ফলন ভাল হয় লিচুগুলো বড় ও রসালো হয়। এবার কম বৃষ্টিপাত ও তীব্র তাপদাহের কারণে লিচুর ফলন ভাল হয়নি। এ ব্যাপারে ইউনিয়ন কৃষি কর্মকর্তরা কাজ করছে। যদি কোনো কৃষক আমাদের পরামর্শ থেকে বাদ পড়ে তাহলে তিনি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা মাঠ কর্মকর্তাকে তার বাগানে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
সোরনারগাঁও উপজলা নির্বাহী অফিসার আতিকুল ইসলাম জানান, এ বছর সোনারগাঁওয়ের লিচুর ফলন মহাবিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এর মূল কারণ হচ্ছে তীব্র তাপদাহ। এ বছর যেহেতু লিচু চাষিরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন তাদের প্রকৃত তথ্য নিয়ে আমরা সরকার থেকে অর্থ সাহায্যের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
সারাবাংলা/এনএস