বাজেটে স্বাস্থ্যবিধি খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি
৩০ মে ২০২১ ১৯:২৭
ঢাকা: করোনা মোকাবিলায় ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে ওয়াশ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। মহামারি মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই সমাধানটি সকলের জন্য পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি বিশেষত পানি ও সাবানের ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতনতা নিশ্চিত করার সঙ্গে সম্পর্কিত। করোনার দ্বিতীয় ঢেউসহ অন্যান্য উপসর্গকে ধ্বংস করার জন্য ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে ওয়াশ খাতে তাৎক্ষণিক বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রোববার (৩০ মে) ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) খাতে বরাদ্দ বিষয়ে বাজেট পূর্ব এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব বলেন। ওয়াটারএইড, ইউনিসেফ, পিপিআরসি, ফানসা-বিডি, এফএসএম নেটওয়ার্ক, স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অল, ওয়াশ অ্যালায়েন্স ও এমএইচএম নেটওয়ার্কে যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, জনসমাগমস্থল, হাট-বাজার, বাস টার্মিনাল, সরকারি ও বেসরকারি অফিসসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার জন্য হাত ধোয়ার স্থানে পানি, হ্যান্ড ওয়াশ বা সাবানের ব্যাপক স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে শহর কিংবা গ্রামের পাশাপাশি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে কার্যকরি নানা সুযোগ-সুবিধাসহ হাতধোয়ার ব্যবস্থা রাখা খুবই প্রয়োজন।
সংবাদ সম্মেলনে ওয়াটারএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি, কোভিড-১৯ অনেক পরিবারকে দারিদ্রতার দারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। তারা স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থাপনার উপকরণ জোগাতে সামর্থ্য হারিয়েছে। বিশেষ করে নারীরা মাসিক ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের ক্রয় ক্ষমতা হারিয়েছে। আসন্ন বাজেটে স্যানিটারি ন্যাপকিনে অতিরিক্ত ভ্যাট এবং ট্যাক্স কর্তন এবং তা সামর্থ্যের মধ্যে রাখার জন্য মূল্য হ্রাস করাকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।’
অর্থনীতিবিদ এবং পিপিআরসি’র চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে অবশ্যই জোর দিতে হবে। একই সঙ্গে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ৬ অর্জনের জন্য ২০২১-২২ জাতীয় বাজেটে যথাযথ মনোযোগ দিতে হবে। চলমান মহামারির কারণে ওয়াশ খাতে বাজেটের ক্ষেত্রে ব্যাপক ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে। এসব অসমতা দূর করে আগামী জাতীয় বাজেটে ওয়াশ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজিএস) অর্জনের গতিকে আরও ত্বরান্বিত করা খুবই প্রয়োজন।’
সংবাদ সম্মেলনে কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সেগুলো হল- চলমান এই কোভিড-১৯ মহামারি ওয়াশ নিয়ে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে ব্যাপকভাবে নতুন ভাবনার জানালা খুলে দিয়েছে । সুনির্দিষ্টভাবে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধিকে শুধু মূলধারার এজেন্ডায় ফুটনোটে না রেখে এর সামগ্রিকতা বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্যবিধিতে ব্যাপকভাবে আলোকপাত করতে হবে। কিশোরী ও শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি ও স্বাস্থ্য এবং অপুষ্টির সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলোর ব্যাপারে পদক্ষেপগুলো খুঁজে বের করতে হবে। কোভিড-১৯-এর বাস্তবতা এবং টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট বাস্তবায়নের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি বা হাইজিন প্রসারের জাতীয় কৌশলপত্র পরিমার্জন ও হালনাগাদ করা প্রয়োজন। এটিকে মূলধারায় আনার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধির ইস্যু ও অনুশীলনগুলোকে ব্যক্তিগত ও সামাজিক উভয় পর্যায়েই গুরুত্বের সাথে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। জনসমাগম স্থল এবং মার্কেট/বাজার, সরকারি এবং বেসরকারি অফিস-আদালতসমূহে হাত ধোয়ার সুবিধা (হ্যান্ড ওয়াশিং স্টেশন) তৈরি এবং সেগুলোর কার্যকারিতা সুনিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত সম্পদের আরোহন ও যথাযথ কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন।
অন্যান্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- কভারেজের ব্যবধান কমিয়ে আনতে ওয়াশখাতের বরাদ্দের ক্ষেত্রে অঞ্চলভিত্তিক বৈষ্যম্য ও নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের পক্ষপাতের বিষয়টি দূর করতে হবে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ২০২০-২০২৫ অনুসরণে হাত ধোয়া এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি চর্চার মাধ্যমে সামগ্রিক পুষ্টি ও স্বাস্থ্যবিধি পরিস্থিতির উন্নয়নে বহু-খাত ও সংস্থাভিত্তিক উদ্যোগ এগিয়ে নিতে বাজেটের ফোকাস বাড়াতে হবে। পানি-বিষয়ক পরিবেশগত এবং ঝুঁকি নিরসনমূলক কর্মসূচিগুলো ভালো উদ্যোগ হিসেবে বিবেচনা নিয়ে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে নিরাপদ ও সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য পরিবেশবান্ধব সৌরচালিত পানি লবণমুক্ত করার প্ল্যান্ট চালু এবং এখন যেগুলো আছে সেগুলোর কাজ অব্যাহত রাখার জন্য পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ করা।
সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম