Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কবে আসবে ফাইজারের ১ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন?

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩০ মে ২০২১ ২০:০৬

ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ফাইজার ও বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন ‘কমিরন্যাটি’ ভ্যাকসিন আসবে দেশে। বৈশ্বিক ভ্যাকসিন জোট গ্যাভি’র বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন বিতরণের উদ্যোগ কোভ্যাক্সের আওতায় এই ব্র্যান্ডের এক লাখ ৬০০ ডোজ ভ্যাকসিন দেশে আসার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে ভ্যাকসিনগুলো কবে দেশে আসবে, তা নিয়ে খোদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেই জানানো হচ্ছে নানান রকম তথ্য।

বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বরাত দিয়ে গত ১৮ মে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম জানান, আগামী ২ জুন কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি থেকে ফাইজারের অন্তত এক লাখ ছয় হাজার কোভিড ভ্যাকসিন বাংলাদেশে পাঠাবে গ্যাভি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নিজেই এ কথা বলেছেন বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই ফাইজারের ভ্যাকসিন দেশে চলে আসছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। শনিবার (২৯ মে) অধিদফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয় ভ্যাকসিন দেশে আসবে রোববার (৩০ মে)। এদিন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কাতার এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে রোববার রাত ১১টা ২০ মিনিটে ফাইজারের এক লাখ ৬২০ ডোজ ভ্যাকসিন দেশে পৌঁছাবে। কিন্তু রোববার (৩০ মে) স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনলাইন বুলেটিনে জানানো হয়, ফাইজারের ভ্যাকসিন আজ আসছে না।

এদিন ব্রিফিংয়ে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন জানান, ফ্লাইট শিডিউল জানানো হয়নি। তাই ফাইজারের ভ্যাকসিন পেতে কিছুটা দেরি হতে পারে। তিনি বলেন, ‘আজ (রোববার) কোভ্যাক্স থেকে ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিনের প্রথম চালান আসার কথা ছিল। কিন্তু এখনও আমরা ফ্লাইট শিডিউল পাইনি। কোভ্যাক্স থেকে ফাইজারের ভ্যাকসিন আজ বাংলাদেশ পাচ্ছে না। কিছুটা দেরি হতে পারে। ফাইজারের ভ্যাকসিন আসতে অন্তত ১০ থেকে ১২ দিন সময় লেগে যেতে পারে।’

তবে এর কিছু সময় পর তিনি জানান, ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন আসছে নির্ধারিত সময়েই। এর একটু পরেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম আরেকটি আপডেট জানান ফাইজারের ভ্যাকসিন নিয়ে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত খবর জানানোর জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তৈরি করা হয় ‘HEALTH MINISTRY MEDIA WING’ নামে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপ।

বিজ্ঞাপন

সেই গ্রুপে মাইদুল ইসলাম জানান, ‘ভ্যাক্সিন আপডেট: আগামীকাল সোমবার (৩১ মে) রাত ১১টা ২০ মিনিটে ফাইজারের মোট এক লাখ ৬২০ ডোজ ভ্যাকসিন দেশে আসবে। উল্লেখ্য, ফাইজারের এই ভ্যাকসিন আজ রোববার রাতে দেশে আসবার কথা ছিল। তবে এই ভ্যাকসিন ১০ দিন পরে আসবে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে যে সংবাদ প্রচার হচ্ছে তা সঠিক নয়। পি.আর.ও/স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।’

এর আগে ২৭ মে দেশে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি ভ্যাকসিন প্রয়োগের অনুমোদন দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। ১২ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী যে কাউকে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা যাবে। তবে এই ভ্যাকসিন কারা পাবে, সেটি সরকারের ভ্যাকসিন প্রয়োগ পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছে অধিদফতর।

ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর জানিয়েছে, অক্সফোর্ড ও সিনোফার্মার ভ্যাকসিনের মতো ফাইজারের ভ্যাকসিনটিও নিতে হবে দুই ডোজ। প্রথম ডোজ নেওয়ার তিন থেকে চার সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ করা হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বৈশ্বিক ভ্যাকসিন জোট গ্যাভি’র বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন বিতরণের উদ্যোগ কোভ্যাক্সের আওতায় জুন মাসে ফাইজারের এই ভ্যাকসিনের এক লাখ ৬০০ ডোজ দেশে আসার কথা রয়েছে। তবে এরই মধ্যে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় সিরিঞ্জ চলে এসেছে দেশে।

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মোকাবিলায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ৯২টি দেশে ভ্যাকসিন সরবরাহের উদ্যোগ নেয় ‘দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স (গ্যাভি)’। এই দেশগুলোর ভ্যাকসিন পাওয়া নিশ্চিত করতে গঠন করা হয়েছে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম ‘কোভ্যাক্স’। বাংলাদেশ এই বৈশ্বিক উদ্যোগ থেকে ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য আবেদন করে গত বছরের ৯ জুলাই। ১৪ জুলাই গ্যাভি সেই আবেদন গ্রহণ করে। ১৮ সেপ্টেম্বর গ্যাভির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি পাঠানো হয়। তাতে জানানো হয়, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বাংলাদেশ এই ভ্যাকসিন পেতে পারে।

এই কোভ্যাক্স উদ্যোগের আওতাতেই বাংলাদেশে আসছে এক লাখ ডোজ ফাইজারের ভ্যাকসিন। চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যেই কোভ্যাক্স থেকে ভ্যাকসিন পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা ছিল। নানা কারণেই সেই তারিখ পিছিয়ে গেছে।

জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেকের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এই ভ্যাকসিনটি তৈরি করেছে মার্কিন ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজার। তবে এর পরিবহন ও সংরক্ষণ অনেক জটিল ও ব্যয়বহুল। ফাইজার ভ্যাকসিন শূন্যের নিচে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (-৭০ ডিগ্রি) তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। ফলে বিশেষ যন্ত্রাংশ সম্বলিত ভ্যাকসিন কেন্দ্র ছাড়া এগুলো প্রয়োগ করা যায় না। তবে গত মাসে কোম্পানিটির সিইও আলবার্ট বৌরলা জানান, ভ্যাকসিনের নতুন একটি সংস্করণ আনা হচ্ছে, যা সাধারণ ফ্রিজারেও রাখা যাবে।

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য গত বছরের ২ ডিসেম্বর এই ভ্যাকসিন প্রয়োগের অনুমতি দেয়। ৮ ডিসেম্বর থেকে দেশটিতে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়। জানুয়ারিতে জরুরি ব্যবহারের জন্য ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনকে তালিকাভুক্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

ফাইজারের দাবি, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের চূড়ান্ত ধাপে ভ্যাকসিনটি মানুষকে করোনা সংক্রমণ থেকে ৯৫ শতাংশ রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। আর ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের ওপর এটি শতভাগ কার্যকর। সম্প্রতি কানাডায় ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সের শিশুদের ব্যবহারের জন্য ফাইজারের ভ্যাকসিনকে অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কানাডার ফেডারেল সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে গৃহীত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে জাতীয় পর্যায়ে ভ্যাকসিন প্রয়োজন কার্যক্রম শুরু করে। দেশের মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে গত বছরের নভেম্বরেই বেসরকারি ওষুধ নির্মাতা বেক্সিমকোকে সঙ্গে নিয়ে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত ‘কোভিশিল্ড’ ভ্যাকসিন উৎপাদন করছিল সিরাম ইনস্টিটিউট।

নভেম্বরের ওই চুক্তির আওতায় সিরামের কাছ থেকে তিন কোটি ভ্যাকসিন পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। তবে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির কাছ থেকে মাত্র ৭০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়া গেছে। এছাড়া ভারত সরকার বাংলাদেশকে ৩২ লাখ ২ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন উপহার দিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী কোভ্যাক্স থেকে ছয় কোটি ৮০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ।

সারাবাংলা/এসবি/এনএস/পিটিএম

করোনাভাইরাস কোভ্যাক্সের গ্যাভি ফাইজারের ভ্যাকসিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

বিজ্ঞাপন

সাগরে লঘুচাপ, কমছে তাপমাত্রা
২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:৩৩

ঢামেকে অভিযানে ২১ দালাল আটক
২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:২০

আরো

সম্পর্কিত খবর