ইয়াসের প্রভাবে বাড়িঘর-রাস্তা বিধ্বস্ত, চরম সংকটে ক্ষতিগ্রস্তরা
৩১ মে ২০২১ ০০:৫২
ভোলা: ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ভোলার কয়েকটি চরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে দৌলতখান উপজেলার বিচ্ছিন্ন মদনপুর অন্যতম। ইয়াসের প্রভাবে এখানে বসবাসরত প্রতিটি পরিবারই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারো ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে, কারো বা গবাদিপশু জোয়ারে ভেসে গেছে। আবার অনেকের মাছের ঘেরে জোয়ারে পানি ঢুকে লাখ লাখ টাকার মাছ চলে গেছে।
একইসঙ্গে জোয়ারের তোড়ে এই ইউনিয়নের সাড়ে চার কিলোমিটার ইটের তৈরি ও ১৫ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা ভেঙে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কোনো রাস্তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না।
চারদিকে মেঘনা নদী বেষ্টিত ইউনিয়নটিতে প্রায় ২০ হাজার লোকের বসবাস। এখানকার বাসিন্দারা কৃষি, মৎস্য আহরণ ও পশু পালন করেই তাদের জীবিকানির্বাহ করেন। ইয়াসের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো সরকারি সহায়তা না পেলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।
শনিবার (২৯ মে) দিনভর সরেজমিনে মদনপুর ইউনিয়নে ঘুরে দেখা যায়, জোয়ারের পানিতে ইউনিয়নে থাকা ১৪টি গুচ্ছগ্রামের প্রায় ৮৪০টি ঘরের ভিটার মাটি চলে গেছে। কারো ঘর ঝড়ে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। ২০টির বেশি মাছের ঘের জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেকের গরু-মহিষ জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। সাগরের অতিরিক্ত লোনা পানি খেয়ে গরু, ছাগল ও মহিষ অসুস্থ হয়ে মারা যাচ্ছে। জোয়ারে প্রতিটি রাস্তার মাটি ধুয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এই ইউনিয়নটির অবস্থান মেঘনা নদীর মাঝে, আর যোগাযোগ ব্যবস্থাও খারাপ। তাই এখানকার ক্ষয়ক্ষতির বাস্তব চিত্র অনেকের চোখেই পড়েনি।
ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের চরমুন্সি গ্রামের গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা সীমা বেগম, ইয়ানুর বেগম, মনির মাঝি, মানিকজানসহ ১৫-২০ জন নারী-পুরুষ জানান, তাদের গ্রামে সাতটি গুচ্ছগ্রাম রয়েছে। গুচ্ছগ্রাম ছাড়াও এখানে শতাধিক ঘর রয়েছে। এখানে সহস্রাধিক লোকের বসবাস। তিন-চার ফুট জলোচ্ছ্বাসে তাদের ঘরের নিচের মাটিও ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। অনেকের গবাদিপশু জোয়ারে ভেসে গেছে। এখন তাদের ঘরগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি সহায়তা পায়নি।
তারা আরও জানান, এখানে কোনো রাস্তাঘাট নেই। নেই কোনো আশ্রয় কেন্দ্র। জোয়ারে পানি উঠলে তাদের জোয়ারের পানিতে ভাসতে হয়। কেউ অসুস্থ্য হলে তাকে চিকিৎসা দেওয়ারও ব্যবস্থা নেই। কোমর সমান পানিতে নেমে ১০-১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে খেয়াঘাটে এসে ট্রলারে করে মূল ভূখণ্ডে আসতে হয়।
৩নং ওয়ার্ডের আমেনা বেগম ও নেহার বিবি জানান, জোয়ারের পানিতে আমাদের হাড়ি-পাতিল, থালা-বাসন, জামা-কাপড়ও চাল ভেসে গেছে। টাকার অভাবে আমরা চাল ও রান্নার সামগ্রী কিনতে পারছি না। আমরা খুব অসহায় জীবনযাপন করছি।
মদনপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চর পাতা গ্রামের মো. রফিক মাল জানান, তিনি বিভিন্ন এনজিও’র থেকে ঋণ নিয়ে দুই একর জমিতে মাছের ঘের করেছিলেন। জোয়ারের পানিতে তার ঘেরের ২০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।
মদনপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক জানান, ঘুর্ণিঝড় ইয়াসে মদনপুর ইউনিয়নে কমবেশি প্রতিটি পরিবারই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জলোচ্ছ্বাসে ইউনিয়নের সাড়ে চার কিলোমিটার ইটের রাস্তা (হেরিং বোন) ও ১৫ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লোনা পানিতে প্রায় শতাধিক গবাদিপশু মারা গেছে। অসুস্থতায় ভুগছে অনেক গবাদিপশু। প্রায় ২০টি ঘেরের ৫০ লাখ টাকার মাছ চলে গেছে। যদি সরকারি সহায়তা না পেলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।
এ বিষয়ে ভোলা জেলা প্রশাসক মো. তৌফিক ই-লাহী চৌধুরী জানান, প্রাথমিকভাবে খাদ্য সহায়তা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকাও তৈরি করা হচ্ছে। পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হবে।
সারাবাংলা/এনএস