Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এক বছরের মধ্যে জনগণের পক্ষের বিকল্প শক্তি গড়ে উঠবে


১ জুন ২০২১ ০৩:৪৭

সাইফুল হক। দেশের বামধারার রাজনীতিতে অন্যতম রাজনীতিক। রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনীতি করেছেন দীর্ঘ দিন। ২০০৪ সালে পার্টি ছেড়ে দেন। বর্তমানে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সাইফুল হক বাম গণতান্ত্রিক জোটেরও অন্যতম নেতা। জোটের সমন্বয়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। জাতীয় রাজনীতি ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের রাজনীতি নিয়ে কথা বলেছেন সারাবাংলার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সারাবাংলার স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট আজমল হক হেলাল। দু’জনের কথোপকথনের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলে সারাবাংলার পাঠকদের জন্য।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা: বাম গণতান্ত্রিক জোটের দলগুলোর একাংশ আওয়ামী লীগ ও একাংশ বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জোটের দলগুলো বামপন্থি নীতি-আদর্শ এবং জনগণর পাশ থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণেই এমন হচ্ছে বলে মনে করেন কি?

সাইফুল হক: বাম গণতান্ত্রিক জোটের বাইরেও কিন্তু অনেকগুলো বাম দল আছে। বামপন্থিদের কারও কারও দেহটা বাইরে রয়েছে, আত্মাটা যুক্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গে। বিএনপি’র সঙ্গে তাদের আত্মাটা আনুষ্ঠানিকভাবে জড়িত কি না, তা বলতে পারছি না। তবে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কোনো শরিক দল কিংবা এসব দলের নেতাদের কেউ আওয়ামী লীগ বা বিএনপির সঙ্গে নেই।

তবে আমরা গণফোরাম, নাগরিক ঐক্যসহ অন্যান্য ফ্রন্ট বা প্ল্যাটফর্মে গিয়ে বক্তব্য রাখি। তারাও আমাদের অনুষ্ঠানে এসে বক্তব্য রাখেন। কারণ আমরা সবাই বর্তমান আওয়ামী সরকারের দুঃশাসন ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। আমাদের বর্তমান আন্দোলনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। সে কারণেই আমরা একে অন্যের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে থাকি। তার অর্থ এই নয় যে বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা তৈরি হয়েছে।

সারাবাংলা: আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে এখনো বেশ কয়েকটি বামপন্থি দল রয়েছে। তাদের বিষয়ে কী বলবেন?

সাইফুল হক: বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। নব্বইয়ের দশকে বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট ছিল। ওই ফ্রন্টে কিছু কিছু শরিক দল ২০০১/২০০২ সালে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সখ্য গড়ে তোলে। তারা সেই সম্পর্ক ধরে রেখেছে। ওইসব বাম রাজনৈতিক দলগুলোকে দেশের জনগণ বামপন্থি শিবিরের লোক বলে বিবেচনা করে না। তাদের দেশের জনগণ আওয়ামী লীগের লেজুড়বৃত্তিক রাজনৈতিক দল বলে মনে করে। ওইসব দলের নেতাদের কেউ কেউ এমপি-মন্ত্রী হওয়ার জন্য নীতি-আদর্শ ছেড়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তাদের সঙ্গে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে যদি তারা সরকার ও মহাজোট থেকে বেরিয়ে এসে আলাদা অবস্থান নিতে পারেন, জনগণের কাতারে আসতে পারেন, তাহলে বাম গণতান্ত্রিক জোট তাদের নিয়ে বিবেচনা করবে।

বিজ্ঞাপন

ওইসব বাম রাজনৈতিক দলগুলো যখন মহাজোটে গিয়েছে, তখন তাদের যে কথা দেওয়া হয়েছিল, মহাজোটের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ তার উল্টো পথে হাঁটছে। সে কারণে বাম রাজনৈতিক দলগুলোর আরও আগেই মহাজোটের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে জোট থেকে বেরিয়ে আসা উচিত ছিল।

সারাবাংলা: বামপন্থি রাজনীতির মূলে তো রয়েছে সমাজতন্ত্র। বামপন্থি নেতারা তাহলে সমাজতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকা আওয়ামী লীগ বা বিএনপির সঙ্গে মিশে গিয়ে রাজনীতি করে কিভাবে?

সাইফুল হক: অল্প কথায় বলতে গেলে তাদের রাজনৈতিক আদর্শের বিচ্যুতি ঘটেছে। বাম রাজনৈতিক দলের অনেক ত্যাগী নেতা ছিলেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মাধ্যমে। বিএনপিতেও অনেকে ব্যবহৃত হয়েছেন। এমপি-মন্ত্রী হওয়ার লোভ তারা পরিত্যাগ করতে পারেননি। এমপি-মন্ত্রী হওয়ার জন্য রাজনৈতিক আদর্শ ত্যাগ করেছেন।

সারাবাংলা: দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটকে খুব বেশি কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি। জোটের এখনকার লক্ষ্যটি কী?

সাইফুল হক: বাম গণতান্ত্রিক জোট কোনো দলকে শক্তিশালী করা কিংবা তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য গঠিত হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের যে ঘোষণা— বাংলাদেশ সুন্দর হবে, মানবিক মর্যাদা পাবে, ন্যায় বিচার নিশ্চিত হবে, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ ও সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে— এসব ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে বাম গণতান্ত্রিক জোট গঠিত হয়েছে। স্বাধীন-স্বতন্ত্র চিন্তাধারায় যারা সক্রিয় আছে, সেসব দল ও সংগঠনকে নিয়ে জনগণের পক্ষে একটি রাজনৈতিক বিকল্প শক্তির সমাবেশ গড়ে তুলবে জোট। আগামী ছয় মাস কিংবা এক বছরের মধ্যে বাম গণতান্ত্রিক দলসহ অন্যান্য দল নিয়ে জনগণের পক্ষের একটি বিকল্প শক্তি গড়ে উঠবে। আর এই বিকল্প শক্তিতে জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদী ধ্যান-ধারণার দল বা সংগঠন স্থান পাবে না। এই শক্তি প্রকৃত গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করবে, আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের অবসান ঘটানোর জন্য লড়াই-সংগ্রাম করবে।

সারাবাংলা: আওয়ামী লীগ সরকারের পতন কেন চান?

সাইফুল হক: দেখুন, আমরা কোনো কিছুরই অন্ধ সমালোচনায় বিশ্বাসী না। সরকারের অন্ধ সমালোচনা করাও আমাদের কাজ না। সরকার দেশ ও জাতির জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ নিলে আমরা স্বাগত জানাই। ভুল পদক্ষেপ নিলে তারও যৌক্তিক সমালোচনা করি। উন্নয়ন-জিডিপি প্রবৃদ্ধির নামে রাষ্ট্রে লুটপাটের যে সংস্কৃতি আর প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের বঞ্চনার যে ধারা তৈরি হয়েছে, আমরা তার বিরুদ্ধে। আমরা এই সরকারের অন্যায়-ভুল, দুর্নীতি-দুঃশাসন ও জবরদখলের বিরোধিতা করছি। আজ দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই। সরকার যৌক্তিক সমালোচনাও ভয় পাচ্ছে। দমন-পীড়ন করে সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। গণতন্ত্রের নামে গণতন্ত্রহীনতার চর্চার অবসান ঘটাতে হবে।

সারাবাংলা: ইসলামি অনেক দলও বর্তমানে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে। অনেক ইসলামি দলই গণতন্ত্র চায় বলে আন্দোলন করছে। যে বিকল্প শক্তির কথা বলছেন, এসব দল কি সেই শক্তিতে স্থান পাবে?

সাইফুল হক: হ্যাঁ, বর্তমানে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে অনেক ইসলামি দিই রাজপথে আছে। তারা ইসলামি দল হলেও দেশের বর্তমান স্বৈরতন্ত্রবিরোধী দুঃশাসন মোকাবিলা করতে রাজপথে আন্দোলন করছে। আমি তাদের আন্দোলকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। তাদের সঙ্গে রাজপথে দেখা-সাক্ষাৎ হবে না— বিষয়টি এমন নয়। তবে তাদের সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক মোর্চা কিংবা রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলার সম্ভাবনা দেখছি না। তবে আমাদের জোটের কোনো শরিক দল তাদের সঙ্গে ঐক্য গড়ে তুলতে চাইলে সেটি একান্তই তাদের নিজস্ব ব্যাপার।

সারাবাংলা: সরকার পতনের জন্য বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন হলে সেক্ষেত্রে ইসলামি ও ডানপন্থি অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইস্যু বা কর্মসূচিভিত্তিক যুথবদ্ধ আন্দোলন হতে পারে কি?

সাইফুল হক: বর্তমান আওয়ামী সরকারের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে বাম গণতান্ত্রিক জোট রাজপথে সক্রিয় আছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে জনগণকে সচেতন ও সংগঠিত করে জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায়ে সর্বাত্মক লড়াই-সংগ্রাম গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এখন সরকারের বিরোধী শিবিরে যারা আছে, তাদের সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ, শব্দ-বাক্য-স্লোগানের মিল কখনো হবে না— এটিই স্বাভাবিক। তাদের সঙ্গে আমাদের মতাদর্শ বা রাজনীতির পার্থক্য আছে বলেই আমরা আলাদা ঘরানার রাজনীতি করি। তবে আমরা মনে করি, এখনকার সামগ্রিক যে চরম কর্তৃত্ববাদী শাসন চলছে, সেই দুঃশাসন ও কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে রাজপথের আন্দোলন আরও জোরদার করা উচিত। এজন্য গণতান্ত্রিক ধারার রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলোকে নিয়ে ন্যূনতম একক ইস্যুতে রাজপথের আন্দোলন গড়ে ‍তুলতে হলেও একটি কার্যকর ঐক্য গড়তে হবে। আমরা সরকারবিরোধী দলগুলোকে বলে আসছি, সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে এবং নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠনের দাবিতে ন্যূনতম ঐক্যের ভিত্তিতে হলেও আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সব গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও দেশপ্রেমিক ধারার রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলোকে নিজ নিজ জায়গা থেকে রাজপথে নেমে এসে একটি কার্যকর ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

সারাবাংলা: সরকারের প্রতি কোনো আহ্বান রয়েছে এই মুহূর্তে?

সাইফুল হক: স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে মন্ত্রিসভা থেকে অবিলম্বে বরখাস্ত করতে হবে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সব মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করার জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করতে হবে। সরকার শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে ব্যর্থ হলে, দেশের বুদ্ধিজীবী সাংবাদিকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাহায্য নিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোট শ্বেতপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নেবে। আর সবশেষে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাব— দুঃশাসন থেকে সরে দাঁড়ান। মানুষকে মুক্তি দিন।

সারাবাংলা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

সাইফুল হক: আপনাকেও ধন্যবাদ।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

আওয়ামী লীগ সরকার বাম গণতান্ত্রিক জোট বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি সাইফুল হক

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর