Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বামীর টিনের ঘর দেখে ঝগড়া, স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১ জুন ২০২১ ১৮:৪৪

বরিশাল: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে বিয়ে। এরপর স্বামীর বাড়ি গিয়ে টিনের ঘর এবং ওয়াশরুম দেখে ঝগড়া শুরু করেন কলেজশিক্ষার্থী। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্লাস্টিকের দড়ি দিয়ে স্ত্রীর গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন স্বামী। এরপর সেপটিক ট্যাংকের মধ্যে লাশ ফেলে দেন। বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় এমন ঘটনা ঘটেছে।

এ ঘটনায় ঘাতক স্বামীকে নিয়ে মঙ্গলবার (১ জুন) দিনভর উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের হরহরগ্রামে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এ সময় একটি সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করে শরীরের চামড়ার কিছু অংশ, দুটি নখ ও ওড়না উদ্ধার করা হয়েছে। তবে মরদেহের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন গৌরনদী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন। অভিযান এখনো অব্যাহত রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

গ্রেফতারকৃত সাকিব হোসেন হাওলাদার বগুড়ার জাহাঙ্গীরাবাদ সেনানিবাসের ঝাড়ুদার। তিনি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার নতুনচর জাহাপুর গ্রামের বাসিন্দা ভ্যানচালক আব্দুর করিম হাওলাদারের ছেলে। বর্তমানে গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের হরহরগ্রামে ভাড়া বাসায় বসবাস করে সাকিবের পরিবার।

কলেজশিক্ষার্থী নাজনিন আক্তার বগুড়া সদরের সাবগ্রাম (উত্তরপাড়া) এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফের মেয়ে। বগুড়ার গাবতলী সৈয়দ আহম্মেদ কলেজের একাদশ শ্রেণি পড়তেন তিনি।

এ বিষয়ে সাকিব হোসেন হাওলাদার বলেন, মোবাইলে আমাদের প্রেমের সম্পর্কের পর গত বছর ২৩ আগস্ট বগুড়ার একটি পার্কে আমারা দেখা করে বিয়ের দিন ঠিক করি। ৩০ সেপ্টেম্বর নাজনিনের বাড়িতে আমাদের বিয়ে হয়। নাজনিনের খালু আমাদের বিয়ে পড়ান। বিয়েতে আমার ঠিকানা গোপন রাখি। এ বছর ২৪ মে বগুড়ার চারমাথা থেকে নাজনিনকে নিয়ে বরিশাল নিজের বাড়িতে নিয়ে আসি। আমার বাবা-মা বিয়ে সম্পর্কে কিছুই জানতো না। তারা নানাবাড়িতে অবস্থান করার সুযোগে আমি নাজনিনকে বাড়িতে তুলি। তার আগে নাজনিনকে জানিয়েছিলাম, বাবা অসুস্থ এ সুযোগে বাড়িতে গেলে কোনো সমস্যা হবে না।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, নাজনিন বাড়িতে গিয়ে আমাদের টিনের ঘর এবং ওয়াশরুম দেখে আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। এমনকি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। এতে করে নাজনিনের ওপর আমার প্রচণ্ড রাগ হয়। এরপর বাহির থেকে লাইলন দড়ি এনে নাজনিনের গলায় লাগিয়ে ফাঁস দেই। মৃত্যু নিশ্চিত করতে বিছানার ওপর ফেলে বালিশ দিয়ে চাপা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করি। এরপর নাজনিরনের লাশ কাঁধে তুলে আমাদের বাড়ির সেপটিক ট্যাংকের মধ্যে ফেলে দেই।

সাকিব আরও বলেন, ২৬ মে বগুড়া সেনাবাহিনী থেকে আমাকে কাজে যোগদান করতে বলা হয়। যোগদানের পরপরই আমার ইউনিট অফিসার আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় আমি সকল ঘটনা খুলে বলে আমার ভুল স্বীকার করি। এরপর আমাকে বগুড়া পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

নাজনিন আক্তারের ভাই আব্দুল আহাদ প্রমাণিক জানান, গত ২৪ মে সাকিব তার বাবার অসুস্থতার কথা বলে বোনকে নিয়ে বরিশালে যায়। পরবর্তীতে আমার বোন ও সাকিবের মোবাইল বন্ধ থাকায় কোনো যোগাযোগ করতে না পারায় ২৬ মে আমার বাবা বগুড়া সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি ও সেনানিবাসে অভিযোগ করেন। এরপরই গ্রেফতার করা হয় সাকিবকে। তার স্বীকরোক্তি অনুযায়ী বোনের লাশ উদ্ধারে গৌরনদীতে আসি।

এ ব্যাপারে গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন জানান, সাধারণ ডায়েরি ও অভিযোগের সূত্র ধরে পুলিশ সাকিব হোসেন হাওলাদারকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে সব স্বীকার করে, নাজনিনকে দড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস ও বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করে টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকের মধ্যে লাশ গুম করে। সেখান থেকে কিছু আলামত পাওয়া গেলেও লাশ উদ্ধার হয়নি। সাবিক এক সময় এক এক ধরনের তথ্য দিচ্ছে।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, ফেসবুকে প্রেমের সম্পর্ক থেকে নাজনিনকে বিয়ে করে সাকিব। কিন্তু প্রেম ও বিয়ের সময় নাজনিনকে সে ভুল তথ্য দেয়। সে জানায় তাদের নিজস্ব ভবনসহ আর্থিকভাবে স্বচ্ছল। এর একপর্যায়ে গত বছর ৩০ সেপ্টেম্বর সাকিব ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে কলেজশিক্ষার্থী নাজনিনকে বিয়ে করে।

তিনি আরও বলেন, ২৪ মে নাজনিনকে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসার পর হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে সাকিব। মরদেহ ট্যাংকের মধ্যে ফেলার কথা বললেও সেখানে নাজনিনের দেহ পাওয়া যায়নি। বাড়ির আশপাশে তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে।

সারাবাংলা/এনএস

ফেসবুকে পরিচয় সেপটিক ট্যাংকের মধ্যে লাশ স্ত্রীর গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা স্বামী গ্রেফতার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর