Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ পাচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তা খাত

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২ জুন ২০২১ ০৮:৩৮

ঢাকা: সরকারিভাবে খাদ্যশস্যের মজুত বাড়ানোর অন্যতম উৎস ফসলের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন। গত বছর এই মজুতে ধাক্কা লেগেছে। একদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ, অন্যদিকে ছিল দফায় দফায় ঝড়-বন্যা। ‍দুইয়ে মিলে বোরো বা আমন— কোনো মৌসুম থেকেই কাঙ্ক্ষিত ফসল সংগ্রহ করতে পারেনি সরকার। এমনকি বিদেশ থেকে আমদানি করেও আশানুরূপ মজুত বাড়ানো সম্ভব হয়নি। কিন্তু করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য সহায়তা করতে হয়েছে সরকারকে। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি চলমান থাকায় ২০২১-২২ অর্থবছরে তাই খাদ্য নিরাপত্তায় বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এই অর্থবছরের বাজেটে এই খাতে সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে, যা চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে ৩০০ কোটি টাকা বেশি।

বিজ্ঞাপন

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারেনি এই মন্ত্রণালয়। এর অন্যতম কারণ খাদ্যশস্যের মজুত কম থাকা। খোলা বাজারে চাল বিক্রির কর্মসূচি কোনোরকমে অব্যাহত রাখা গেলেও মজুত কম থাকায় টিআর-কাবিখার মতো কর্মসূচিগুলো নগদ টাকা দিয়ে চালিয়ে নেওয়া হয়েছে। এতে দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ খরচ হলেও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সেই টাকা রয়ে গেছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এ বছর অনেকটা গত অর্থবছরের মতোই থাকছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থ বছরে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনূকুলে বরাদ্দ দেওয়া অর্থের অনেকটাই উদ্বৃত্ত রয়ে গেছে। কিন্তু করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি আগামীতে কেমন হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলার সুযোগ নেই। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ছাড়ালে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা কর্মসূচি চালু করতে হবে সরকারকে। সে কারণেই খাদ্য নিরাপত্তায় সরকার জোর দিতে চাচ্ছে। ২০২০-২১ বছরে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য ১৭ হাজার ২শ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও এবার ৩শ কোটি টাকা বাড়ানো হচ্ছে। তবে এই ১৭ হাজার ৫শ কোটি বরাদ্দ থাকলেও প্রয়োজনে তা বাড়ানো বা কমানো হতে পারে। এর বাইরে টাকা প্রয়োজন হলে থোক বরাদ্দ থেকে সে চাহিদা মেটানো হবে। কারণ বর্তমানে খাদ্য নিরাপত্তা সরকারের অগ্রাধিকার খাতগুলোর অন্যতম।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির বাড়তি খাদ্য সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে— এমন ভাবনা থেকে বাড়তি প্রস্তুতি রাখা হয়েছিল। কিন্তু গত বছরের শেষ থেকে চলতি বছরের শুরুর দিক পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিল। ফলে বাড়তি সহায়তার প্রয়োজন হয়নি। তবে গুদামে খাদ্যের মজুত যে পরিমাণ থাকার কথা, সেই পরিমাণ মজুত না থাকায় বাজারে চালের দাম বেড়ে গেছে। চাল আমদানির মাধ্যমে চালের সংকট কাটলে সেই দাম কমে আসবে বলে আশা করছে সরকার। সে কারণেই অন্যান্য কার্যক্রমের পাশাপাশি খাদ্য আমাদানিও অব্যাহত রাখা হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, রোববার (৩০ মে) পর্যন্ত সরকারি গুদামগুলোতে খাদ্যশস্যের মজুতের পরিমাণ ছিল ৯ দশমিক ১৩ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে চাল রয়েছে ৬ দশমিক ১৬ লাখ টন, গম ২ দশমিক ৯৭ লাখ টন। গত আমন মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার পূরণ না হওয়ায় আমদানির পরিমাণ বাড়িয়েছে সরকার। তাই বিদেশ থেকে ১২ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত এপ্রিল পর্যন্ত ৭ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানির চুক্তিও হয়েছে। অতিরিক্ত আরও ৩ লাখ টন চাল আমদানির জন্য এলওআই (লেটার অব ইনটেন্ট) দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ২ লাখ টন চাল আমদানি প্রক্রিয়াধীন। এসব চুক্তির মধ্যে ২ লাখ ৬৩ হাজার টন চাল ও আড়াই লাখ টন গম দেশে পৌঁছেছেও।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মাৎ নাজমানারা খানুম সারাবাংলাকে বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি কতদূর যাবে, আবার কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে— এগুলো তো আগে থেকে বলা যাচ্ছে না। যদি আবার ব্যাপক পরিমাণে খাদ্য সহায়তা (ম্যাসিভ রেশনিং) দিতে হয়, বিস্তৃত পরিসরে ওএমএস (খোলা বাজারে বিক্রি) চালু করতে হয়, সেক্ষেত্রে প্রচুর খাদ্যের প্রয়েজন হবে। সেজন্য অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সংগ্রহের পাশাপাশি আমদানির কার্যক্রমও চলবে। লক্ষ্য একটাই— খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

সচিব বলেন, বাজেটে বরাদ্দ অনেকটা গতবছরের মতোই থাকবে, কিছুটা বাড়ছে। গত বছর আমন-বোরোর ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বাজেট থাকা সত্ত্বেও প্রত্যাশিত পরিমাণে খাদ্য সংগ্রহ করা যায়নি। ফলে বাজেট কিছুটা উদ্বৃত্ত ছিলে। আশা করছি এ বছর আর উদ্বৃত্ত থাকবে না। প্রায় একই বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে। বরাদ্দ যতটুকু বাড়বে, তা দিয়ে ভালোভাবেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া যাবে।

মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, করোনায় ক্ষতিগ্রস্তসহ নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে বা স্বল্প মূল্যে খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা চালু রাখবে সরকার। শুধু তাই নয়, এসব কর্মসূচির পরিধি আরও বাড়ানোর কথা ভাবছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সারাবাংলা/জেআর/টিআর

২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট খাদ্য নিরাপত্তা সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর