Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মহানগর মহিলা কলেজ : প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষায় ফেল করানোর হুমকি


২৭ মার্চ ২০১৮ ২১:১৬

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: পরীক্ষার প্রবেশপত্র বিতরণের সময় অবৈধভাবে টাকা নেওয়ার অভিযোগে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সকালে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে রাস্তায় নামলে আশেপাশের রাস্তাগুলোতে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

পরে বেশ কয়েক দফায় অভিভাবক, শিক্ষার্থী, পুলিশ ও কলেজ কতৃপক্ষ বৈঠক করেও সমঝোতা না হওয়ায় অডিটোরিয়াম কক্ষের চেয়ার ভাংচুর করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, টাকা ফেরত দেবে ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজ

অবশেষে শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে (অ্যাডমিট কার্ড) প্রবেশপত্র দিয়েছে কলেজ কতৃপক্ষ। এ ছাড়া প্রবেশপত্র বাবদ আগে যাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছিল, তাদের টাকাও ফেরত দিয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে একটা করে লিখিত আবেদনপত্র নিয়েছে কলেজ কতৃপক্ষ। সেখাণে লেখা আছে- ‘প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষায় ফেল করলে কলেজ কতৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।’

 

জোর করে এ রকম বাক্য লিখে নেওয়ায় চিন্তিত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবি, এই অযুহাতে যদি প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়। এ কারণে পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই ফেল করার বিষয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।

নাবিলা (ছদ্ম নাম) নামে এক শিক্ষার্থী সারাবাংলাকে জানায়, ‘টাকা ফেরত দেওয়ার সময় নাসরিন ম্যাডাম বলেন, তোমাদের দেখে নেওয়া হবে, কীভাবে কলেজ থেকে বের হয়ে যাও। তোমাদের রোল নাম্বার ও নাম জমা থাকল।’

কেনো ওরকম দরখাস্ত লিখলেন, এ রকম প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না লিখলে অ্যাডমিট কার্ড দিচ্ছিল না। তাই লিখেছি। এখন কিছু করলে আবারও আন্দোলনে যাবো আমরা।’

কলেজের প্রশাসনে যারা আছেন তাদের বিরুদ্ধেও অনেক অভিযোগ রয়েছে। সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থী ও অবিভাবকরা।

প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষার জন্য টাকা নেওয়া হলেও নেওয়া হয়নি কোন ক্লাস। নুশরাত (ছদ্মনাম) নামে এক ছাত্রী বলেন, আইসিটি প্র্যাকটিক্যাল বাবদ ২৫০ টাকা নিয়েছে। কিন্তু গত দুই বছরে এক দিনও প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস হয়নি।

এ ছাড়া ছামিরা (ছদ্ম নাম) বলেন, পরিসংখ্যান ও রসায়ন বিভাগের প্রতিটি প্র্যাকটিক্যালের জন্য ১ হাজার টাকা নিলেও এক দিনও ক্লাস করতে পারিনি।

নজরুল ইসলাম নামে এক অবিভাবক বলেন, এই কলেজে ভর্তি হতে প্রথম বছরে সাড়ে ৯ হাজার টাকা লেগেছে। দ্বিতীয় বর্ষে আবার লেগেছে ১০ হাজার টাকা। ফরম পূরণ বাবদ টাকা নিয়েছে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। মডেল টেস্টের নামে নিয়েছে ২ হাজার টাকা। প্রতিমাসের বেতন ৭০০ টাকা। এ ছাড়া এই ফি, সেই ফি দেওয়াই লাগে। র‌্যাগ ডে’র নামে বিপুল পরিমাণ টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছে কতৃপক্ষ। পিকনিকে না গেলেও সবার কাছ থেকে ৭০০ টাকা করে নেওয়া হয়।

আন্দোলন সম্পর্কে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম বলেন, যারা টেস্টে ফেল করেছিল তাদের পাঁচ হাজার টাকা ছাড়া অ্যাডমিট কার্ড দিচ্ছে না। আবার যারা মডেল টেস্টে ফেল করেছে তাদের প্রতি সাবজেক্টে এক হাজার টাকা ছাড়া অ্যাডমিট কার্ড দিচ্ছে না। এ কারণে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে। কিন্তু প্রশ্ন হলো আমরা সকল প্রকার জরিমানা পরিশোধ করেই ফরম পূরণ করেছি। এখন নতুন করে আবার টাকা নেবে কেন?

ইলাধর (ছদ্ম নাম) নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, অ্যাডমিট কার্ড নিতে এক হাজার টাকা নিয়েছিল। কিন্তু যখন ফেরত দেন তখন ৫০০ টাকা ফেরত দেন। জানতে চাইলে শিক্ষক বলেন, ৫০০ টাকাই লেখা আছে। তার মানে ওই শিক্ষক ৫০০ টাকা মেরে দিয়েছে।

সাদিয়া (ছদ্ম নাম) নামে অপর এক শিক্ষার্থী জানায়, আমরা যারা নেতৃত্ব দিয়েছি তাদের শায়েস্তা করতে কবি নজরুল কলেজের ছাত্রলীগের ছেলেদের ফোন করেছেন প্রিন্সিপাল ম্যাডাম। তাদের বলেছে, যারা আন্দোলন করেছে তাদের ধরে নির্যাতন করবে।ছাত্রলীগের ওই ছেলেরা ম্যাডামকে বলে দিয়েছেন এ ব্যাপারে আমরা কিছুই করতে পারব না। ছাত্রলীগের এক ছেলে এসব কথা আমাদের জানিয়েছে।

 

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গেটে তালা লাগিয়ে দেয়।

 

নানা অভিযোগ রয়েছে শিক্ষকদের বিরুদ্ধেও। এক শিক্ষার্থী স্বর্ণের চেইন পরে কলেজে আসলে সেটা টেনে ছিড়ে ফেলেন ইংরেজি শিক্ষক বিপ্লব সাহা রঞ্জন। এ ঘটনার অনেক দিন পরে ক্ষমা চেয়ে তার চেইন ফেরত দেন তিনি।

মেয়েদের গায়ে হাত দেওয়ার নানা অভিযোগ রয়েছে বিপ্লব সাহা রঞ্জনসহ কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। র‌্যাগ ডের অনুষ্ঠানে নাচানাচি করায় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করেন বিপ্লব সাহা রঞ্জন। এ ছাড়াও অধিকাংশ শিক্ষার্থীর অভিযোগ তার কাছে প্রাইভেট না পড়লে অকারণে কান ধরিয়ে ক্লাসে দাঁড় করিয়ে রাখেন।

ফোনে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এরকম অভিযোগ ভিত্তিহীন। এ বিষয়ে আপনার সঙ্গে সামনা-সামনি বসে কথা বলতে চাই।’

রসায়নের শিক্ষক আবুল কালাম দরজির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে সুস্মিতা দাস নামের এক ছাত্রী বলেন, যারা তার কাছে প্রাইভেট পড়েন তাদের প্রশ্নপত্র দেন। আর যারা পড়েন না তাদের সঙ্গে নানা অশালীন আচরণ করেন। আমরা তার কাছে পড়তে যেতে ভয় পাই। এরকম একটি মহিলা কলেজে পুরুষ শিক্ষকের কক্ষে সিসি ক্যামেরা নেই।

এ ছাড়াও অভিযোগ রয়েছে- এইচএসসি পরীক্ষার কয়েকদিন বাকি, এখনো রসায়নের প্র্যাকটিক্যাল খাতা তৈরি করা হয়নি। তিনি যাদের প্রাইভেট পড়ান তাদের কাছ থেকে খাতা প্রতি এক হাজার করে টাকা নিয়ে খাতা সম্পুর্ণ করে দিয়েছেন। এ ছাড়া বাকিদের কারও খাতাই তৈরি করা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরণের কোনো অভিযোগ আমার বিরেুদ্ধে নেই। যারা আমার বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ করেছে তারা আক্রোশমূলকভাবেই করেছে।

এ সব বিষয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আফসানা হাসানের কক্ষে কথা বলতে গেলে তাকে ছত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে দেখা গেছে। একটি ভিজিটিং কার্ড দিয়ে বলেন, ফোনে কথা হবে। এরপর সন্ধ্যার দিকে তার দেওয়া ফোন নাম্বারে বেশ কয়েকবার ফোন করে কথা বলার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সারাবাংলা/ইউজে/এমআই


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর