অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে অন্তর্ভুক্তিমূলক বাজেট: ঢাকা চেম্বার
৩ জুন ২০২১ ২১:৫৬
ঢাকা: বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ব্যবসায়ীদের আর্থিক প্রণোদনা, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যয় বৃদ্ধি ও জনগণকে করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি থেকে রক্ষায় বাজেটে উদ্যোগ থাকার কারণে ‘জীবন-জীবিকার ভারসাম্য রক্ষা’য় এটি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বাজেট হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। তবে এত বড় বাজেট বাস্তবায়ন অনেকটা চ্যালেঞ্জিং হবে, তাই রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার। একইসঙ্গে বাজেট বাস্তবায়ন, ঘাটতি মোটানো এবং রাজস্ব আদায় ও সম্প্রসারণে আরও বেশি নজর দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বিকেলে জাতীয় বাজেট ২০২১-২২-এর ওপর ঢাকা চেম্বারের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলা হয়েছে।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা চেম্বার বলছে, বিশ্ব অর্থনীতি যখন কোভিড-১৯-এ বিপর্যস্ত, এই কঠিন সময়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ঘোষিত জাতীয় বাজেট ২০২১-২২ এ প্রবৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে যথাক্রমে ৭ দশমিক ২ শতাংশ ও ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। এই সময়ে এরকম অগ্রগতিমূলক ও অর্জনযোগ্য প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা আমাদের মাঝে আশার সঞ্চার করছে। কোভিডকালীন বাংলাদেশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ২ শতাংশ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে, যেখানে সারাবিশ্বে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক। তাই এ ধরনের উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে অর্থনীতির সব ক্ষেত্রে উত্তরণ ঘটাতে হবে, যা অনেকাংশে চ্যালেঞ্জিং।
বাজেটে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত বরাদ্দ, প্রণোদনা ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া, বিনিয়োগ বাড়ানো, কৃষি পুনর্বাসন, সামাজিক নিরাপত্তাবলয় বাড়ানো ও কর্মসংস্থান সৃজনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে ডিসিসিআই। একইসঙ্গে আয়কর ও ভ্যাট হার কমানো, গবেষণা এবং আমদানি কাঁচামালের ওপর অগ্রিম কর কমানো, স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাড়ানো এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করায় ডিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানানো হয়।
সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোকে সময়োপযোগী উদ্যোগ উল্লেখ করে ডিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঘোষিত সরকারি সহায়তা সহজতর উপায়ে ব্যবসায়ীদের প্রদান করা গেলে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঘোষিত বাজেট সহায়ক হবে। একইসঙ্গে অর্থনৈতিক ক্ষতি যথাযথভাবে নিরূপণ করে প্রণোদনা প্যাকেজের পরিমাণ ও আওতা বাড়ানো প্রয়োজন।
ঢাকা চেম্বারের পক্ষ থেকে বলা আরও বলা হয়, ২০২১-২২ অর্থবছরের অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণের জন্য করের আওতা বাড়ানো, অনাদায়ী কর আদায়, জেলা শহরের রাজস্ব আদায় বাড়ানো, স্বচ্ছতা ও কর প্রদান প্রক্রিয়ায় অটোমেশন প্রয়োজন। বেসরকারি বিনিয়োগের ধারা অব্যাহত রাখতে বিদ্যমান করদাতাদের ওপর নতুন করে করের বোঝা আরোপ না করে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। সেভিংস সার্টিফিকেট, সমবায় নিবন্ধন, পোস্টাল সেভিংসের ক্ষেত্রে ই-টিন বাধ্যতামূলক করায় কর সংগ্রহের আওতা কিছুটা বাড়তে পারে।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে এ অর্থবছরে লিস্টেড ও নন-লিস্টেড কোম্পানির ২ দশমিক ৫ শতাংশ করপোরেট কর হার কমানো হয়েছে। এই ব্যবসাবান্ধব উদ্যোগের জন্য ডিসিসিআই সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানায় ডিসিসিআই। চেম্বার বলছে, তবে করপোরেট কর হার পর্যায়ক্রমে আরও কমানো প্রয়োজন, যেন কোভিড পরবর্তী সময়ে ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারে। পাশাপাশি, বাজেটে নতুন শিল্পে যেমন— হোম অ্যাপ্লায়েন্স, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, অটোমোবাইল, তথ্যপ্রযুক্তি কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ওয়ান পারসন কোম্পানির ক্ষেত্রে করপোরেট কর হার ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই, তবে পর্যায়ক্রমে এই কর হার আরও কমানোর জোর দাবি জানাই, যেন ক্ষুদ্র ও ছোট বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হয়।
বাজেটে দেশীয় শিল্পের বিকাশে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশে হোম অ্যাপ্লায়েন্স সামগ্রী, তথ্যপ্রযুক্তি, সিমেন্ট, স্টিল, ইলেকট্রনিক ও আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী বলে মনে করে ঢাকা চেম্বার। আমদানি করা ফল ও সবজিতে ৫ শতাংশ হারে কর কমানোর দাবি জানিয়ে ডিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, করোনাকালীন বিশ্বব্যাপী রফতানি চাহিদা কমেছে। তাই রফতানিমুখী পোশাক শিল্প, চামড়া, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাতপণ্য এবং পণ্যসমূহের কাঁচামাল আমদানিতে অগ্রিম আয়কর অব্যহতি যৌক্তিককরণের পাশাপাশি আমদানিকৃত ফল ও সবজিতে ৫ শতাংশ হারে কর বাড়ানো হয়েছে, তা কমানোর প্রস্তাব করা হয়।
ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ঋণ বাজেটের ঘাটতি ব্যয় মেটাতে আর্থিক খাতের ওপর নির্ভরতা তৈরি করবে বলে মনে করছে ডিসিসিআই। ব্যবসায়ীদের এই ফোরাম বলছে, প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণপ্রদান প্রক্রিয়া সহজ ও খেলাপি ঋণ আদায়ে উদ্যোগ গ্রহণ করে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর