বাংলাদেশের সাফল্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ওয়ালটন— জার্মান রাষ্ট্রদূত
৪ জুন ২০২১ ০৩:০৩
ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফারেনহল্টস বলেছেন, কয়েক বছরে বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বাংলাদেশের সেই সাফল্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ওয়ালটন। তারা হাই-কোয়ালিটি পণ্য তৈরি করছে। জার্মানিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওয়ালটন পণ্য রফতানি করছে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুন ২০২১) গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হাই-টেক কারখানা পরিদর্শনকালে এসব কথা বলেন জার্মান রাষ্ট্রদূত। সে সময় তার সঙ্গে ছিলেন ঢাকাস্থ জার্মান দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন কনস্টানজা জেরিংগার।
এদিকে, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে দেশে তৈরি ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া দেখার পর ওয়ালটন কারখানার কর্মপরিবেশ ও বিশাল কর্মযজ্ঞ দেখে মুগ্ধতার কথা জানান জার্মান কূটনীতিকরা।
কারখানা কমপ্লেক্সে জার্মান প্রতিনিধিদলকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদ। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর হুমায়ূন কবীর ও আলমগীর আলম সরকার, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ইউনিটের (আইবিইউ) প্রেসিডেন্ট এডওয়ার্ড কিম, নির্বাহী পরিচালক কর্নেল (অব.) শাহাদাত আলম, উদয় হাকিম, ইউসুফ আলী, প্রধান বিপণন কর্মকর্তা ফিরোজ আলম, নির্বাহী পরিচালক আমিন খান, শাহজাদা সেলিম, ইয়াসির আল ইমরান, রাকিব উদ্দীন, ওয়ালটনের ইউরোপীয়ান মার্কেট হেড তাওসীফ আল মাহমুদ, ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রেজাউল ইসলাম মিনারসহ আরও অনেকে।
প্রথমেই তারা ওয়ালটন কারখানায় বিশাল কর্মযজ্ঞ এবং জার্মানিতে ওয়ালটন পণ্যের রফতানি কার্যক্রমের ওপর নির্মিত ভিডিও ডকুমেন্টারি উপভোগ করেন।
এরপর, জার্মান প্রতিনিধিদল ওয়ালটনের বিশ্বমানের রেফ্রিজারেটর উৎপাদন প্রক্রিয়া সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করেন। পর্যায়ক্রমে অতিথিরা ওয়ালটনের কম্প্রেসর, এলইডি টেলিভিশন, এলজিপি-এলডিপি, মাদারবোর্ড উৎপাদন এবং প্রোডাক্ট ডিসপ্লে সেন্টার ঘুরে দেখেন।
পরিদর্শন শেষে জার্মান রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ওয়ালটনের লক্ষ্য বেস্ট কোয়ালিটি প্রোডাক্ট তৈরি করা। সেজন্য তারা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও মেশিনারিজে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে। যার বেশিরভাগই জার্মানির তৈরি। ওয়ালটন কারখানার কর্মপরিবেশ অত্যন্ত সুন্দর। তারা বিভিন্ন ম্যাটেরিয়াল পুনঃব্যবহার করছে। যা খুবই আশার কথা। গ্লোবাল ব্র্যান্ড হয়ে ওঠার সব যোগ্যতা ও সামর্থ ওয়ালটনের রয়েছে।
ডেপুটি হেড অব মিশন কনস্টানজা জেরিংগার বলেন, ওয়ালটন কারখানার সুযোগ-সুবিধা, দক্ষ কর্মী, কাজের ধরণ সব কিছু দেখে তিনি অভিভূত। সবকিছুই অত্যন্ত গোছানো।
এ সময় ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদ বলেন, জার্মানিকে বলা হয় ‘ফাদার অব টেকনোলজি’। জার্মান রাষ্ট্রদূত এবং ডেপুটি হেড অব মিশনের ওয়ালটন কারখানা পরিদর্শন ওয়ালটনের জন্য অনুপ্রেরণার। জার্মানিকে ঘিরে ইউরোপে ওয়ালটনের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। ওয়ালটনের গ্লোবাল বিজনেস পরিচালিত হবে জার্মানি থেকে। তিনি প্রত্যাশা করেন, জার্মান কূটণীতিকদের কারখানা পরিদর্শন দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও মজবুত এবং দীর্ঘস্থায়ী করবে।
ওয়ালটনের ইউরোপীয়ান মার্কেট হেড তাওসীফ আল মাহমুদ বলেন, ইউরোপের বিজনেস হাব হলো জার্মানি। দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় ব্যবসায়িক সম্পর্ক সুদূঢ়। বাংলাদেশের রফতানি আয়ের ৬০ শতাংশ আসে ইউরোপ থেকে। যার কেন্দ্রে রয়েছে জার্মানি। কয়েক বছর ধরে দেশে তৈরি ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য ইউরোপের বাজারে অন্যতম রফতানির খাত হয়ে উঠেছে। ইউরোপে দেশের বাজার বাড়াতে ঢাকার জার্মান দূতাবাস ব্যাপক সহায়তা করছে।
তিনি বলেন, ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ড, কমপ্ল্যায়েন্স এবং সোশাল রিকোয়ারমেন্ট মেনে পণ্য তৈরি করছে ওয়ালটন। বর্তমানে ইউরোপের ১০ দেশে ওয়ালটনের পণ্য রফতানি হচ্ছে। চলতি বছরেই আরও ১০ দেশ ওয়ালটনের রফতানির আওতায় আসছে।
প্রসঙ্গত, বিশ্বমানের প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনে ওয়ালটন একটি প্রশংসিত নাম। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ৭ শতাধিক একর জায়গাজুড়ে স্থাপন করা হয়েছে ওয়ালটনের অত্যাধুনিক কারখানা। আন্তর্জাতিক মান ও স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করে এখানে ফ্রিজ, টিভি, এসি, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, হোম ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপ্লায়েন্স, লিফটসহ বিভিন্ন উচ্চমানের পণ্য তৈরি হচ্ছে। উৎপাদনের পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্যের গবেষণা ও উন্নয়ন, মান নিয়ন্ত্রণ, আন্তর্জাতিক ব্যবসা ইউনিটসহ বিভিন্ন বিভাগ গড়ে উঠেছে। ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা বুকে নিয়ে ওয়ালটনের তৈরি আন্তর্জাতিক মানের পণ্য যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশি পণ্য দিয়ে এবার বিশ্বজয়ের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে ওয়ালটন। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ব্র্যান্ডের কাতারে জায়গা করে নেওয়ার টার্গেট নিয়েছে বাংলাদেশের এই প্রতিষ্ঠান।
সারাবাংলা/একেএম