হাইব্রিড-অনুপ্রবেশকারীর বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব
৫ জুন ২০২১ ১১:১২
আব্দুর রহমান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। তিনি কৈশোর থেকেই প্রতিবাদী চরিত্র নিয়ে রাজনীতিতে আসেন। কিশোর বয়সেই ফরিদপুরের খরসূতী চন্দ্র কিশোর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য যুবকদের অনুপ্রেরণা যুগিয়ে সংঘবদ্ধ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭৩ সালে ফরিদপুর সরকারি ইয়াছিন কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৭৪ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ফরিদপুর জেলা শাখার প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পরে প্রতিরোধ আন্দোলন ও সংগ্রামের নেতৃত্ব দেন এবং দীর্ঘদিন কারা ভোগ করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পরে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কার্যনির্বাহী সদস্য, এবং পরবর্তী সময়ে সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে ১৯৮৪ সালে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। স্বৈরাচারবিরোধী গণ-আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ২০০১-০২ মেয়াদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্বেক্ষক সদস্য ছিলেন। আওয়ামী লীগের ১৭তম সম্মেলনে সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ১৯তম সম্মেলনে কার্যনির্বাহী সদস্য হন। ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০তম সম্মেলনে ২০১৬-১৯ মেয়াদে দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন এবং একইসঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস নিয়ে কথা বলেছেন সারাবাংলার সঙ্গে। তার সঙ্গে কথোপকথনে অংশ নেন সারাবাংলার সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট নৃপেন রায়। সেই কথোপকথনের উল্লেখযোগ্য অংশ এখানে তুলে ধরা হলো-
সারাবাংলা: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ টানা মেয়াদে সরকার পরিচালনার দায়িত্বে আছেন। এতে দলের কেন্দ্রে ও তৃণমূলে কোনো সমন্বয়হীনতা বিরাজ করছে কি না?
আব্দুর রহমান: সংগঠন যদি শক্তিশালী না হতো তাহলে তো টানা তিনবার ক্ষমতায় দল কী করে এলো? নিশ্চয়ই সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি হয়েছে বা সংগঠনের শক্তিশালী একটি অবস্থান সারাদেশেই আছে বলেই তো এটা সম্ভব হয়েছে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী দল এবং এর জন্মলগ্ন থেকেই সংগ্রাম-সংকট-সম্ভাবনা সবিকিছু মিলিয়েই এই দল ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে শিক্ষা আন্দোলন, শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাতিল আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬৬’র ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে ভূমিকা, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রেখেছে; সবকিছু মিলিয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের ইতিহাসটাই হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাস।
সুতরাং এই দলকে কখনও কখনও কোনো ক্ষেত্রে হয়ত অনেক অনেক বড় চ্যালেঞ্জ, অনেক বড় পরীক্ষা দিতে হয়েছে এবং এর ভেতর দিয়েই দল তার নিজের অবস্থানক শক্ত করেই রেখেছে। এখন পর্যন্ত মনে করি, বাংলাদেশের রাজনীতিতে শুধুমাত্র নয় এই উপমহাদেশের যে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো আছে তাদের মধ্যেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যথার্থ অর্থেই একটা রাজনৈতিক চরিত্রের দল এবং এটা মানুষের রাজনীতি নিয়েই ভাবনা চিন্তা কার্যক্রম সবকিছু পরিচালিত হয়। ৭৫ পরবর্তী যে একটা প্রেক্ষাপটে আমাদেরকে চ্যালেঞ্জ নিতে হয়েছে, সেই স্বৈরাচার জিয়াউর রহমান, খুনি জিয়াউর রহমান এবং পরবর্তীকালে যে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন, সবকিছু মিলিয়েই এই দল বহু পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে এবং এই দলের শক্ত হাতে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এবং এই দলের সমস্ত নেতাকর্মীরা তার পেছনে কাতারবদ্ধ ঐক্যবদ্ধ বলেই আসলে এটি সম্ভব হয়েছে।
সারাবাংলা: তাহলে কি আপনি মনে করছেন দলের ভেতরে-বাইরে কোনো দুর্বলতা নেই?
আব্দুর রহমান: দুর্বলতার জায়গাগুলো যে নেই, একদমই অস্বীকার করবার কোনো কারণ নেই। একটি দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে নানা ধরনের বিষয়গুলো সামনে আসে। সেই সব জায়গায় কিছু ভুল বোঝাবুঝি বা কিছু অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কলহ যেটাই বলে থাকেন, সেগুলো যে একেবারেই নেই তা বলব না। তবে সেগুলো শক্ত হাতে দমন করা হয় এবং সেগুলো শক্ত হাতেই দল মোকাবিলা করছে এবং দৃশ্যত আওয়ামী লীগের এখন ওই ধরনের কোনো গ্রপিং বা ওই ধরনের কোনো কলহ-বিবাদ প্রকাশ্য রূপ লাভ করার কোনো সুযোগ নেই। যদিও বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তভাবে কিছু কিছু কিছু জায়গায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। তারপরও তাৎক্ষণিকভাবেই সেগুলোর বিরুদ্ধেও কিন্তু সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
সারাবাংলা: ক্ষমতাসীন দলের ভেতরে বিভিন্ন অনুপ্রবেশকারী-হাইব্রিড তথা কাউয়া বলে অভিহিত করা হয়, এদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে সরব ছিল আওয়ামী লীগ, হয়ত এখনও আছেন? তবে যারা এরইমধ্যে দলের ভেতরে রয়েছেন এবং আগামীতেও যারা দলের ভেতরে আসতে পারে তাদের ব্যাপারে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন?
আব্দুর রহমান: এই দল একটা বিশাল সমুদ্রসম। সুতরাং এইখানে নানা ধরনের প্রবাহ থেকে সমুদ্রে পানি গড়াবে এটাই স্বাভাবিক। খাল বিল নদী নালা এই সমস্ত পানিগুলোই তো ধাবিত হয় সমুদ্রের দিকে। সুতরাং এই দল যেহেতু একটা ঐতিহাসিক ঐহিত্যবাহী দল। সুতরাং এই দলে নানা ধরনের মতলববাজ আদর্শিক রাজনীতির বাইরের লোকও কখনো কখনো কোনো সুযোগ গ্রহণ করবার চেষ্টা তো করতেই পারে বা করেই থাকে। সেই চেষ্টাটা করে যেন কোনো সুবিধা না নিতে পারে বা এই দলের কোনো ভাবমূর্তি বিনষ্ট না হয়, নষ্ট করতে না পারে সে ব্যাপারে আমরাও অতীতেও যেমন সোচ্চার ছিলাম এখনও তেমন আছি। ভবিষ্যতেও সেই একইভাবে সোচ্চার থাকব।
সারাবাংলা: আওয়ামী লীগ যেহেতু ক্ষমতাসীন রয়েছেন। সেক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে দলের বিশেষ করে এক শ্রেণির আমলা এবং দলের মধ্যে কোনো সমন্বহীনতা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন কি না? কিংবা সরকার এবং দলের মধ্যে কোনো সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করেছেন কি না ?
আব্দুর রহমান: ‘না, আমার কাছে এরকম কিছুই মনে হচ্ছে না। কারণ সরকার এবং আমলা; এদের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা বা মতপার্থক্য থাকলে তো এগুলো চোখে পড়ার মতো বিষয় হয়ে দাঁড়াত বা নানা ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হতো। এই ধরনের কোনো বিষয় আমাদের নজরে নেই। আমলা একটা নিজস্ব শক্তি আর দল হল একটা নিজস্ব শক্তি সরকার আরেকটা নিজস্ব শক্তি; এই সব শক্তি মিলেই সমন্বিতভাবেই কিন্তু একটা সফল সরকার পরিচালিত হয় এবং সেটি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেৃতত্বে এই দেশ রাষ্ট্র সরকার সুষ্ঠ সুন্দরভাবেই পরিচালিত হচ্ছে। সুতরাং এই ধরনের কোন সমন্বয়হীনতার প্রশ্নই ওঠে না।”
সারাবাংলা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আব্দুর রহমান: সারাবাংলাকে ধন্যবাদ
আরও পড়ুন
বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি হিসেবে সেদিন শেখ হাসিনাকে পেয়েছে বাংলাদেশ
সারাবাংলা/এনআর/একে