অর্থের বিনিময়ে নিরাপরাধ ব্যক্তির জেলখাটা দুর্ভাগ্যজনক: হাইকোর্ট
৬ জুন ২০২১ ২২:২১
ঢাকা: অর্থের বিনিময়ে নিরপরাধ ব্যক্তিকে জেল খাটানো দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। চট্টগ্রামের একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির বদলে মিনু নামের নিরপরাধ এক নারীর কারাবাসের বিষয়ে শুনানির সময় আদালত এ মন্তব্য করেন।
আদালত বলেন, ‘অর্থের বিনিময়ে বা যেকোনো কৌশলে মূল আসামি নিজেকে বাঁচিয়ে নিরপরাধ ব্যক্তিকে জেলে রাখার ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।’
রোববার (৬ জুন) বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
আদালতে নিরপরাধ মিনুর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশির উল্লাহ।
শুনানিতে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘বিগত দুই বছরে আমাদের দেশে এমন ২৬টি ঘটনা ঘটেছে। একজনের নামে আরেকজন জেলে থাকে।’
আইনজীবী আরও বলেন, ‘আসল আসামি শনাক্তের অনেক পদ্ধতি আছে। আইবলিং পদ্ধতি আছে। এই পদ্ধতিতে শনাক্ত করলে কোনো ভুল হবে না। এ বিষয়ে আমি আরও লিখিতভাবে আদালতকে জানাব। তবে মিনুর ঘটনার পেছনে একটি চক্র কাজ করছে, তা তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশনা দাবি করছি আদালতের কাছে।’
এ সময় আদালত বলেন, ‘আমরা মনে করি এভাবে যদি রিয়েল (আসল) কালপিট (দোষী) অর্থের বিনিময়ে হোক অথবা বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে নিজেকে বাঁচিয়ে অন্য নিরপরাধ লোককে জেলের মধ্যে আটক রাখে সেটা দুর্ভাগ্যজনক।’
এ সময় আইনজীবী শিশির মনিরের সঙ্গে একমত পোষণ করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বশির উল্লাহ বলেন, ‘আমরাও এটা চাই দোষীদের শাস্তি হোক, নিরপরাধ কেউ যাতে জেলে না থাকে। সরকার কখনও এটা চায় না। আমরা আইনজীবী শিশির মনিরের সঙ্গে একমত। প্রয়োজনে এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানি করবেন।’
এরপর আদালত সোমবার (৭ জুন) পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। এর আগে ৩১ মার্চ এ ঘটনা উচ্চ আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। এরপর বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ আইনজীবীকে হলফনামা দাখিল করতে নির্দেশ দেন। এর মধ্যে ওই বেঞ্চের এখতিয়ার পরিবর্তন হওয়ায় বিষয়টি বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে আসে।
গত ২৪ মার্চ মিনুর বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর চট্টগ্রামের নথি পাঠিয়েছেন।
জানা যায়, একটি হত্যা মামলায় আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেন কুলসুম আক্তার কুলসুমীকে। আর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জেল খাটছেন মিনু। বিষয়টি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. শফিকুল ইসলাম খান আদালতের নজরে আনেন।
গত ২২ মার্চ সকালে অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁঞার আদালতে পিডব্লিউ মূলে মিনুকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে জবানবন্দি শুনে এ মামলার আপিল উচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকায় মিনুর নথি ২৩ মার্চ হাইকোর্টে পাঠানোর আদেশ দেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম