‘এসএমই খাত ঘুরে দাঁড়াতে ঋণ পাওয়া সহজ করতে হবে’
৭ জুন ২০২১ ০১:৩০
ঢাকা: দেশে করোনাভাইরাসের প্রভাব শুরুর পর সিএমএসএমই খাতের ৯৫ শতাংশ কারখানায় উৎপাদন বা বিক্রি কমেছিল। পরে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও আগের পর্যায়ে আসেনি। পরিস্থিতির উন্নয়নে মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতের উদ্যোক্তাদের সহজে প্রণোদনার ঋণ পাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার জন্য বিদ্যমান নীতিমালা সহজ করতে হবে।
রোববার (৬ জুন) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অর্থায়নে পরিচালিত প্রিজম প্রকল্পের সঙ্গে যৌথভাবে আয়োজিত এক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। ওয়েবিনারের শিরোনাম ছিল ‘সিএমএসএমই খাতের ওপর কোভিড-১৯ এর প্রভাব ও পুনরুদ্ধার: বিসিক শিল্প নগরী থেকে প্রাপ্ত তথ্য’।
ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইডিএস’র গবেষণা পরিচালক ও প্রিজম প্রকল্পের সিনিয়র পরামর্শক ড. মনজুর হোসেন। প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চলনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রিজম কর্মসূচির টিম লিডার আলী সাবেত। সমাপনী বক্তব্য দেন ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভী। প্যানেল আলোচক হিসাবে অংশ নেন ড. আতিউর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্প মন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার আলোকে আমদানিকারক দেশ থেকে রফতানিকারক দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। শিল্পোন্নত দেশ গড়তে এসএমই খাত ভূমিকা রাখছে। করোনায় এ খাত ক্ষতিগ্রস্তি হলেও এরই মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারির মধ্যেও বিসিক শিল্পনগরীতে উৎপাদন বেড়েছে। এ খাতকে আরও এগিয়ে নিতে প্রণোদনার আওতায় ঋণ দেওয়াসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইইউর প্রকল্পের আওতায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের অনেক উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়াটা ইতিবাচক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়া সহজ করতে হবে। আর এ জন্য ট্রেড লাইসেন্স বা অন্যান্য ঝামেলায় না গিয়ে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও এনআইডির বিপরীতে ঋণ দিতে হবে। একইসঙ্গে অনলাইনে কীভাবে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারেন, সে ব্যবস্থা করতে হবে। সিএমএসএমই খাতের জন্য ২ হাজার কোটি টাকার একটি ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম করলেও এখনো তা কার্যকর না হওয়াটা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনজি তেরিং বলেন, করোনাভাইরাসে ক্ষতিস্তস্থদের জন্য ইইউয়ের আর্থিক সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
ঢাকা চেম্বার ডিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, স্বল্প মেয়াদি চলতি মূলধণ ঋণ না দিয়ে মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ দিতে হবে। কেননা খেলাপি হলে আর কোনো সুবিধা পাবেন না— এরকম ভীতি থেকে এসএমই খাতের অনেক উদ্যোক্তা ঋণ নিতে আগ্রহ দেখান না। এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়ার বিদ্যমান নীতিমালা সহজ করতে হবে।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, প্রণোদনার ঋণ মাঝারি ও বড়রা পাচ্ছেন। ছোটরা সেভাবে পাচ্ছেন না। এ সমস্যার সমাধানে সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য একটা ডেটাবেজ খুবই জরুরি। সেটি থাকলে ধরে ধরে উদ্যোক্তাদের ঋণ সহায়তা দেওয়া সহজ ছিল। এছাড়া এবারের বাজেটে ফেসবুকে পণ্য বিক্রির ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, বড় শিল্পের সঙ্গে ক্ষুদ্র খাতের সমন্বয় করা গেলে রফতানি অনেক বাড়বে। নতুন করে অনেক কর্মসংস্থান হবে। নতুন পণ্য, নতুন দেশ, নতুন সম্ভাবনা এটিকে মাথায় রেখে কাজ করতে হবে।
বিসিকের চেয়ারম্যান মো. মোশতাক হাসান এনডিসি বলেন, ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের এখনো ঋণ দিতে সেভাবে আগ্রহ দেখায় না। বিসিক তাদের ঋণ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে নতুন করে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার তহবিল চাইবে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. গোলাম ইয়াহিয়া বলেন, করোনার মধ্যে সিএমএসএমই খাতের কর্মী ছাঁটাই করার বিষয়টি উদ্বেগের। এ খাতের জন্য প্রণোদনার আওতায় কম সুদে ঋণ বিতরণে ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল করা হলেও নানা সমস্যার কথা শোনা যাচ্ছে। বিসিকের অনেক শিল্পনগরীতে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ, গ্যাস বা পানির লাইন না পাওয়ায় প্লট অব্যবহৃত রয়েছে। এসব অবস্থার উন্নতি হলে আর এ খাতের সমস্যা থাকবে না।
সারাবাংলা/জিএস/টিআর