Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গ্যাস-বিদ্যুৎ বিলের ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ, মূল হোতা গ্রেফতার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৭ জুন ২০২১ ১৯:৫৯

ঢাকা: রাজধানীর মিরপুরের তিনটি ওয়ার্ডের দেড় হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিল নিতেন মো. ওমর ফারুক (৩২)। দেড় বছর ধরে এসব গ্রাহকের বিল সংগ্রহ করলেও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে একটি টাকাও জমা দেননি তিনি। সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও গ্রাহকদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেনি। একপর্যায়ে তিতাস গ্যাসের পক্ষ থেকে এলাকাবাসীকে জানানো হয়, তাদের দেড় বছরের বিল বকেয়া। গ্রাহকরা ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গিয়ে দেখেন, তিনি তাদের ইউটিলিটি বিল বাবদ জমা দেওয়া প্রায় ১০ কোটি টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছেন!

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী কয়েকজনের দায়ের করা মামলার সূত্র ধরে ছায়াতদন্ত শুরু করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র‌্যাব)। শেষ পর্যন্ত ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎকারী ফারুককে র‌্যাব-৪ গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়েছে।

সোমবার (৭ জুন) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

র‌্যাব অধিনায়ক বলেন, ওমর ফারুক গ্যাস বিল ছাড়াও বিদ্যুৎ ও পানির বিল নিয়েছে নিজের এজেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্সের মাধ্যমে। কিন্তু দেড় বছর ধরে গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া বিলের কোনো টাকাই তিনি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে জমা দেননি। সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এই সময়ে গ্রাহকদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করায় বা কোনো তথ্য অবহিত না করায় গ্রাহকরাও টের পাননি। প্রায় দেড় বছর পর তিতাস কর্তৃপক্ষ ওই এলাকায় মাইকিং করে জানায়, তারা ওই এলাকার গ্রাহকদের কাছ থেকে কোনো বিল পায়নি। দ্রুত বিল পরিশোধ না করলে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে বলে জানায় তিতাস।

র‌্যাব অধিনায়ক আরও জানান, এ পর্যায়ে গ্রাহকরা ওমর ফারুকের প্রতিষ্ঠানে গিয়ে জানতে পারেন, প্রতিষ্ঠানে তালা লাগিয়ে তিনি পালিয়েছেন। এরপর এলাকায় মানববন্ধন ও মিছিল-মিটিং করেন তারা। গ্রাহকরা জানতে পারেন, কেবল তিতাস নয়, তাদের বিদ্যুৎ-পানির বিলগুলোও সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা পড়েনি।

অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, গ্রাহকরা যখন বিষয়টি জানতে পারছে, এর মধ্যেই এ বছরের ২৩ জানুয়ারি ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্সসহ তিনটি অফিস তালাবদ্ধ করে ফারুকসহ অন্য সহযোগীরা আত্মগোপনে চলে যান। পরে ২ ফেব্রুয়ারি কয়েকজন ভুক্তভোগী ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এরপর র‌্যাব-৪-এর গোয়েন্দা দল ওই মামলার ছায়াতদন্ত শুরু করে। একপর্যায়ে প্রতারক ওমর ফারুকের অবস্থান শনাক্ত করে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

যেভাবে ওমর ফারুকের উত্থান

র‌্যাব জানিয়েছে, ওমর ফারুকের বাড়ি নোয়াখালী জেলার কবিরহাট থানার সাগরপুর গ্রামে। স্থানীয় একটি স্কুল থেকে ২০০৯ সালে এসএসসি পাস করে ২০১৪ সালে ঢাকার মগবাজার এলাকায় এসে একটি বিকাশের দোকানে চাকরি শুরু করেন। ২০১৫ সালে মিরপুরের আহম্মেদনগর এলাকায় নিজে বিকাশের ব্যবসা শুরু করেন। প্রতারণার উদ্দেশ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি বিভিন্ন ব্যাংকে পাঁচটির বেশি অ্যাকাউন্ট খোলেন।

পরে তিনি ২০১৮ সালে মিরপুর-২-এর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৬০ ফিট এলাকায় ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্স নামে একটি এজেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু করেন। ওমর ফারুক তার এজেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ওই এলাকার গ্রাহকদের গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের বিল জমা নিতেন। ২০১৮ সাল থেকে তিতাস গ্যাস, ওয়াসা ও ডেসকোর গ্রাহকদের কাছ থেকে বিল সংগ্রহ করে জমা না দিয়ে বিলের টাকা আত্মসাৎ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তিনি।

র‌্যাব-৪-এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলাও প্রক্রিয়াধীন। তিতাসের কেউ তার সহযোগী হিসেবে জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখছে র‌্যাব। কেউ জড়িত থাকলে আমরা তিতাস কর্তৃপক্ষকে বিস্তারিত জানাব। প্রতারিত সবাই মামলা করলে ভবিষ্যতে তারা ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন বলে জানান তিনি।

র‌্যাব-৪ অধিনায়ক জানান, এর সঙ্গে কোনো ব্যাংক ও তিতাসের কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা গতকাল (রোববার) দিবাগত রাত ১টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করেছি ওমর ফারুককে। তাকে এনে বেশি জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ হয়নি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আর কে কে জড়িত, তা জানার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর বাইরে বেশ কয়েকজনের নাম এরই মধ্যে জানা গেছে। তাদের গ্রেফতারের স্বার্থে আগেই নাম বলা যাচ্ছে না।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

গ্যাস-বিদ্যুৎ বিলের টাকা আত্মসাৎ টপ নিউজ প্রতারক ওমর ফারুক র‌্যাব-৪


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর