সুনামগঞ্জে ভাঙনে ঘর হারাচ্ছে মানুষ, ‘ব্লক ফেলা হবে শীতে’
৮ জুন ২০২১ ১২:১৬
সুনামগঞ্জ: দোয়ারাবাজার উপজেলার মাজেরগাঁও গ্রামের সমর আলীদের তিন ভাইয়ের বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। যেকোনো সময় বিলীন হয়ে যাবে মুক্তিযোদ্ধা লালা মিয়ার বাড়িসহ শত শত ভিটেমাটি। অন্যদিকে নদী ভাঙন রোধে ১৯১ টাকার নদী শাসন প্রকল্পের কাজ চলছে। ব্লক তৈরি শেষে বিছানো হবে শীতে। যা আপাতত কোনো কাজেই আসছে না এলাকাবাসীর। প্রকল্প এলাকায় ভয়াবহ ভাঙনের মুখে এলাকা ছাড়ছে মানুষ। ভাঙনের শিকার নিরূপায় পরিবারগুলো স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। এই মুহূর্তে ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কোনো উদ্যোগও দেখা যায়নি।
জানা গেছে, নদী ভাঙন থেকে দোয়ারাবাজারকে রক্ষার জন্য ১৯১ কোটি টাকার নদী শাসনের কাজ হচ্ছে। গেল জুন মাসে এই প্রকল্প অনুমোদিত হয়ে ঠিকাদার নিয়োগ শেষে নভেম্বর থেকে ব্লক তৈরির কাজ চলছে। কিন্তু ব্লক বিছানো শুরু হয়নি। ব্লক বানানোর কাজেও উঠেছে অনিয়মের অভিযোগ। ব্লক তৈরিতে কাটা পাথরের বদলে ‘সিঙ্গেল’ ব্যবহার হচ্ছে। মাটিযুক্ত বালুও দেওয়া হচ্ছে শুরু থেকেই।
গত মার্চ মাস থেকে উপজেলা সদরের মাজেরগাঁও, মংলারগাঁও, পুর্ব মাছিমপুর, পশ্চিম মাছিমপুর ও মুরাদপুর গ্রামে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। পূর্ব মাছিমপুরের ১৮টি পরিবার এরমধ্যেই ভিটেমাটি হারিয়ে দোয়ারাবাজার মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। অর্ধশতাধিক পরিবার পাশের সড়কের পাশে আশ্রয় নিয়েছে। পার্শ্ববর্তী স্বজনদের বাড়িতেও আশ্রয় নিয়েছেন কেউ কেউ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শুক্রবার (৪ জুন) রাতে মাজেরগাঁও গ্রামের সফিকুল ইসলাম, সমর আলী ভুট্টুসহ একই পরিবারের তিন ভাইয়ের ভিটেমাটি নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। মুরাদপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা লালা মিয়ার বাড়ি যেকোনো সময় তলিয়ে যাবে। শনি ও রোববার একই গ্রামের সামছুদ্দিন মিয়ার আধাপাকা বাড়িটি নদীগর্ভে গেছে। পূর্বমাছিমপুর গ্রামের অতুল দাস, রাজেন্দ্র দাস ও বাবুল দাসের ভিটেও নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় আছে পূর্বমাছিমপুর গ্রামের পিয়মন দাসসহ আরও ৬ পরিবারের বাড়ি। গত দুই দিনের ভারী বৃষ্টিতে ভাঙন বেড়েছে।
মাজেরগাঁও গ্রামের সমর আলী ভুট্টু বলেন, এলাকার বড় বাড়িগুলোর একটি ছিল আমাদের। এখন মাথাগুজার ঠাঁই নেই আমার পরিবারের।
মুরাদপুর গ্রামের সামছুদ্দিন বলেন, দুই দিনে দেখতে দেখতে আমার শত বছরের বসতি নদী গর্ভে গেল।
গ্রামের বাসিন্দা মাজেদা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, শখের একটি বাড়ি তৈরি করেছিলাম সেই বাড়িটি এখন নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। আমার বাড়ির পেছনে অনেক বড় জায়গা ছিল, সেগুলোও নদীতে তলিয়ে গেছে। এখন যেকোনো সময় আমার শখের বাড়িটিও নদীতে তলিয়ে যাবে।
নদী ভাঙন রোধে সরকারের পরিকল্পনা কি? জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বলেন, দোয়ারাবাজারের নদী শাসনের জন্য ১৯১ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। আবার নদী খননেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সিসি ব্লক বানানো চলছে। টার্গেট অনুযায়ী ব্লক বানানো শেষে আগামী শীত মওসুমে পানি যখন কম থাকবে তখন ব্লক ফেলা এবং বিছানো হবে। এরমধ্যে প্রকল্প এলাকায় বড় ভাঙন দেখা দিলে, ঠিকাদারকে দিয়ে ভাঙন নিয়ন্ত্রণের কাজ করা হবে।
গত কয়েকদিন ধরে ভয়াবহভাবে নদী ভাঙছে, কি উদ্যোগ নেওয়া হবে? জানতে চাইলে তিনি অপর নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুদ্দোহাকে ফোন করার কথা বলেন।
নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুদ্দোহা বলেন, ঠিকাদার এভাবে নদী ভাঙন ঠেকানোর কাজ হয়তো করবে না। আমাদের ইমার্জেন্সি ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। এই বিষয়ে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শমশের আলী ভালো জানবেন বলে জানান তিনি।
উপ-বিভাগীয় শমসের আলী জানালেন, বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেবেন তারা।
ব্লক বানানোর কাজে এলাকাবাসীর অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, কাজে অনিয়মের সুযোগ নেই। ট্রাস্কফোর্স এসে দেখে যেকোনো ব্লকই বুয়েটে পরীক্ষার জন্য পাঠাতে পারে। পরীক্ষায় সঠিক পাওয়ার পরই ব্লক বিছানো বা ফেলার কাজ হবে।
সারাবাংলা/এএম