সুমিজ হট কেকের সাড়ে ১০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি
৮ জুন ২০২১ ২০:২৮
ঢাকা: সুমিজ হট কেকে অভিযান চালিয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। অভিযানে প্রতিষ্ঠানটির ১০ কোটি ৫২ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার (৮ জুন) বিকেলে সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান।
তিনি জানান, ভ্যাট ফাঁকির উদ্দেশে প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন এবং মেশিনে প্রস্তুতকৃত কেক হাতে তৈরির ঘোষণা দিয়ে ভ্যাট ফাঁকির দায়ে ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভ্যাট গোয়েন্দার একটি দল সুমিজ হট কেক লিমিটেড ঢাকায় অবস্থিত কারখানা কাম প্রধান কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে।
জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে কেন্দ্রীয়ভাবে নিবন্ধিত। রাজধানীসহ সারাদেশে এই কেক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের ২৬টি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এসব বিক্রয়কেন্দ্রে কারখানায় উৎপাদিত পণ্য সরবরাহ করা হয়।
সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি হাতে তৈরির কেক ঘোষণা দিলেও মূলত মেশিনে কেক তৈরি করে আসছে। মেশিনে তৈরির কেক‘র ওপর ১৫% হারে ভ্যাট প্রযোজ্য। কিন্তু হাতে তৈরি করলে তা ৫%। এতদিন সুমিজ কেক ৫% হারে ভ্যাট দিয়েছে। ভ্যাট গোয়েন্দার পরিদর্শনকালে ভ্যাট সংক্রান্ত নথিপত্র দেখাতে বলা হলে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহযোগিতা করেন। পরিদর্শনকালে প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয়ের তথ্যসহ আরো কিছু বাণিজ্যিক দলিলাদি জব্দ করা হয়।
ভ্যাট গোয়েন্দা বলছে, সুমিজ হট কেক’র ভ্যাট সংক্রান্ত দলিলাদি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি তিন ধরনের ভ্যাট হার বিশিষ্ট পণ্য সরবরাহ মূল্য তাদের রিটার্নে উল্লেখ করেছে। যার মধ্যে রয়েছে আদর্শ হারে পণ্য (মূসক-১৫%), সম্পূরক শুল্ক আরোপযোগ্য পণ্য (সম্পূরক শুল্ক-১০%), আদর্শ হার ব্যতীত অন্যান্য হারে পণ্য (মূসক-৫%) ও অব্যাহতি প্রাপ্ত পণ্য। তবে রিটার্নের সংযুক্ত সাবফরম যাচাই করে দেখা যায়, মেশিনে প্রস্তুতকৃত কেক ও অন্যান্য কেক’র মূল্য রিটার্নের নোট-৭ এ উল্লেখ করে এবং এর উপর ৫% ভ্যাট পরিশোধ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ওই পণ্যের উপর আদর্শহারে ভ্যাট (মূসক-১৫%) প্রযোজ্য হবে। কারণ সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির সবধরনের কেক মেশিনে প্রস্তুত করা হচ্ছে।’
আরও জানা গেছে, পরিদর্শনকালে প্রতিষ্ঠানের কারখানায় স্থাপনকৃত কেক মিক্সিং মেশিন ৬টি, অটোওভেন (ক্যাপাসিটি ১০৫টি) ২টি, বিস্কুট প্রস্তুতের বড় অটোওভেন ১টি, ক্রিম মিক্সিং মেশি ১টি দেখতে পাওয়া যায়। কেক তৈরিতে এসব মেশিন ব্যবহার হচ্ছে।
মামলার প্রতিবেদন অনুসারে, প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রস্তুতকৃত কেক মেশিনে প্রস্তুত বিবেচনায় নিয়ে তার উপর আদর্শহারে ভ্যাট আদায়যোগ্য। একই প্রক্রিয়ায় অন্যান্য কেক প্রস্তুতকারকরা ১৫% হারে ভ্যাট দিয়ে আসছে। সুমিজ হট কেক কম ভ্যাট দেওয়ায় অন্যান্য প্রস্তুতকারকরা ক্ষতির মুখে পড়েছে।
প্রতিষ্ঠানের জুলাই/২০১৯ থেকে এপ্রিল/২০২১ সময়ের দাখিলপত্র অনুযায়ী মেশিনে প্রস্তুত কেক’র সরবরাহ মূল্য ২৬ কোটি ৯০ লাখ ৭২৬ টাকা। ওই কেকগুরো মেশিনে প্রস্তুত করা হলেও প্রতিষ্ঠানটি (হাতে তৈরি কেক হিসেবে ৫% হারে) ভ্যাট প্রদান করে ১ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ৩৬ টাকা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির জন্য প্রযোজ্য আদর্শ হার হলো ১৫%। ফলে ৪ কোটি ৩ লাখ ৫০ হাজার ১০৯ টাকা ভ্যাট প্রযোজ্য। সে বিবেচনায় প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট এর পরিমাণ ২ কোটি ৬৯ লাখ ৭৩ টাকা।এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২% হারে সুদ ৬০ লাখ ২২ হাজার ৬৬৯ টাকা প্রযোজ্য।
এছাড়া প্রতিষ্ঠান থেকে জব্দকৃত সিএ রিপোর্ট থেকে দেখা যায় যে, জুলাই/২০১৬ হতে জুন/ ২০১৯ পর্যন্ত সময়ে প্রকৃত বিক্রয়মূল্য ৫৫ কোটি ৫৫ লাখ ১২ হাজার ৮৬৫ টাকা। কিন্তু প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ দাখিলপত্রে বিক্রয়মূল্য ২৫ কোটি ৮৫ লাখ ৭১ হাজার ৮৬১ টাকা দেখিয়েছে। এর মাধ্যমে সুমিজ কেক ২৯ কোটি ৬৯ লাখ ৪১ হাজার ৪ টাকা বিক্রয়মূল্য গোপন করেছে। গোপন বিক্রয়মূল্যের উপর ১৫% হিসেবে ৮ কোটি ৩৩ লাখ ২৬ হাজার ৯৩০ টাকা ভ্যাট প্রযোজ্য। এই সময়ে প্রতিষ্ঠান ৩ কোটি ৮৯ লাখ ২৬ হাজার ৮৫৯ টাকা ভ্যাট দিয়েছে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটির পরিহারকৃত ভ্যাটের পরিমাণ ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৭১ টাকা। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২% হারে সুদ বর্তায় ২ কোটি ৭৮ লাখ ৪২ হাজার ৯৬ টাকা।
প্রতিবেদন অনুসারে, সুমিজ হট কেক জুলাই/২০১৬ হতে এপ্রিল/২০২১ পর্যন্ত ৭ কোটি ১৩ লাখ ১৪৩ টাকা ভ্যাট পরিহার করেছে এবং এই পরিহারকৃত ভ্যাটের ওপর সুদ বাবদ ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৬৪ হাজার ৭৬৫ টাকাসহ সর্বমোট ১০ কোটি ৫১ লাখ ৬৪ হাজার ৯০৯ টাকা আদায়যোগ্য হবে।
তদন্তে উদ্ঘাটিত ভ্যাট ফাঁকির টাকা আদায়ের আইনগত কার্যক্রম গ্রহণের জন্য মামলাটি ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে পাঠানো হবে বলে ভ্যাট গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।
সারাবাংলা/এসজে/পিটিএম