‘মুষ্ঠিমেয় লোকের কারণে কোনো ধর্মকেই অপরাধী করা যায় না’
১০ জুন ২০২১ ১৫:৫৫
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বের কোনো জায়গায় জঙ্গিবাদ হলেই যেন ইসলামিক জঙ্গি— এই ধরনের একটা নাম দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিকভাবে যেখানে যে সম্মেলনে গেছি, যখনই কেউ এ ধরনের কথা তুলেছে, আমি সবসময় সে জায়গায় তার প্রতিবাদ করেছি। মুষ্ঠিমেয় লোকের কারণে কোনো ধর্মকেই অপরাধী করা যায় না।
বৃহস্পতিবার (১০ জুন) দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ৫০টি মডেল মসজিদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব মসজিদের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়ন প্রান্তে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। এছাড়া স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নুরুল ইসলাম। গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। মসজিদগুলোর উদ্বোধন ঘোষণার পরে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী তিনটি জেলার তিন উপজেলায় যুক্ত হয়ে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
জেলা ও উপজেলায় দৃষ্টিনন্দন ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের অংশ হিসেবে প্রথম ধাপে ৫০টি মসজিদ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে এ মসজিদগুলো নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বর্তমান সরকার। তারই অংশ হিসাবে মুজিববর্ষেই ১৭০টি উদ্বোধন করা হবে। প্রথম ধাপে ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করা হলো। মসজিদগুলো সরকারের নিজেস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করা হচ্ছে।
মসজিদগুলোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। এখানে ইসলামের মূল্যবোধ এবং চর্চ্চা যাতে ভালোভাবে হয়, ইসলামিক সংস্কৃতির বিকাশ যেন হয়, ইসলামের বাণীটা যেন মানুষ বুঝতে পারে, সেটাই হবে সব থেকে বড় কথা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দেখেছি, এই ধর্মের নাম নিয়ে কীভাবে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করা হয়। কিছু লোক আমাদের দেশে না শুধু সারাবিশ্বব্যাপীই ধর্মের নামে মানুষ খুন করে। জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করা এবং মানুষকে খুন করলেই নাকি তারা বেহেশতে চলে যাবে। যারা এ পর্যন্ত মানুষ খুন-খারাবি করেছে তারা কে কে বেহেশতে গেছে, সেটা কি কেউ বলতে পারবে? সেটা বলতে পারবে না। কিন্তু সব থেকে সর্বনাশ করে গেছে পবিত্র ইসলাম ধর্মের, যে ধর্ম শান্তির ধর্ম। যে ধর্ম মানুষকে সব অধিকার দিয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি তো মনে করি সারাবিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের মুষ্ঠিমেয় লোক জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে, মানুষ হত্যা করে, বোমা মেরে খুন-খারাবি করে আমাদের এই পবিত্র ধর্মের নামে বদনাম সৃষ্টি করেছে। যেটা আমাদের ধর্মের পবিত্রতাকে শুধু নষ্ট করছে না, এর ইমেজটাও নষ্ট হচ্ছে সারাবিশ্বে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা যেন এই সর্বনাশা পথ থেকে সরে আসে সেজন্য আমাদের ওলামায়ে একরামগণ, অভিভাবক, শিক্ষক ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান থাকবে তার যেন এর জন্য সবধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন। ধর্ম চর্চা করতে হলে আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখতে হবে, নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। মানুষের সেবা করতে হবে, কল্যাণ করতে হবে। মানুষের অকল্যাণ করে, একটা পরিবারকে ধ্বংস করে কেউ বেহেশতে যেতে পারবে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সারাদেশে মসজিদ করার সিদ্ধান্তটা আমাদের অনেক আগেই ছিল। আমাদের প্রচেষ্টাও ছিল। আমরা নির্বাচরি ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছিলাম মসজিদ নির্মাণের। ইসলামের প্রচার-প্রসার যেন সঠিকভাবে করা হয় এবং জঙ্গিবাদ ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ থেকে যেন মানুষ দূরে থাকে সেজন্য এই মডেল মসজিদ নিমার্ণের পরিকল্পনা করা হয়।’ ইসলাম ধর্মের যে মূল প্রতিপাদ্য সেটা যেন মানুষ সঠিকভাবে শিখতে পারে, জানতে পারে, ধর্ম চর্চা করার যে প্রক্রিয়া সেটা সম্পর্কে মানুষ যেন জানতে পারে সেদিকেও সবাইকে খেয়াল রাখার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাদক আমাদের সমাজকে একেবারে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। এই মাদকের হাত থেকে মানুষ মুক্ত হতে পারে। তার জন্য সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে। এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, মাদক, নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধের আমাদের এই সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এবং মসজিদগুলো আমরা সেভাবেই তৈরি করতে চেয়েছি। যেখানে সবধরনের শিক্ষা, প্রচার এবং মানুষের মাঝে সচেতনতা, ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান যেন আরও বৃদ্ধি পায় সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা এটা করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মসজিদ করা হলো। সবাই এর যত্ম নেবেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন যেন থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন এবং যত্ম নিয়ে ব্যবহার করবেন, যেন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। সত্যিকার ইসলাম ধর্মের মর্মবাণী যেন এদেশের মানুষ বুঝতে পারে, জানতে ও শিখতে পারে। শুধু আমাদের দেশে নয়, আমরা যে ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করি, সব ধর্মের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি, আমরা স্ব স্ব ধর্ম যত্ম সহকারে লালন-পালন করি এবং অনুসরণ করি সেগুলো আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরতে হবে। কারণ ইসলাম আমাদের সেই মানবতার শিক্ষাই দিয়েছে।
সিলেটে মডেল মসজিদ উদ্বোধন করে সেখানকার মানুষজনের সঙ্গে মতবিনিময়কালে করোনাভাইরাস থেকে বাংলাদেশ যেন মুক্তি পায় সেজন্য সবাইকে দোয়া করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম