করোনায় সামাজিক সচেতনতায় ‘স্বেচ্ছা-অঙ্গীকার’ সংগ্রহ অভিযান
১৩ জুন ২০২১ ০০:০৬
ঢাকা: সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ থাকলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা কমছে প্রবলভাবে। এমন পরিস্থিতিতে কালিহাতী উপজেলায় সকলের মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে শুক্রবার (১১ জুন) উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা তানজিন অন্তরা শুরু করেছেন ব্যতিক্রমি ‘স্বেচ্ছা-অঙ্গীকার’ সংগ্রহ অভিযান।
জানা গেছে, কালিহাতী পৌর এলাকার হাসাপাতাল রোডের মার্কেট প্রাঙ্গণে এ উদ্যোগের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারী। পরে করোনা প্রতিরোধে স্থানীয় মার্কেট ও বাসস্ট্যান্ডের আশেপাশের দোকান ও পরিবহন চালকদের মাঝে জনসচেতনতামূলক লিফলেট ও মাস্ক বিতরণ এবং লিখিত অঙ্গীকার সংগ্রহ করা হয়।
কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা তানজিন অন্তরা বলেন, ‘সারাদেশের মতো টাঙ্গাইলের কালিহাতীতেও করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় তা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যেই মূলত সেখানে মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনে মার্কেট ও বাজারের দোকানদার, সিএনজি ও অটোশ্রমিকদের কাছ থেকে স্বেচ্ছা-অঙ্গীকার সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছি। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে স্থানীয় সাংসদের নেতৃত্বে জনপ্রতিনিধিদেরও সম্পৃক্ত করে সামাজিক আন্দোলন তৈরি করছি।’
আইডিয়াটি নিজের হলেও ব্যতিক্রমি এই উদ্যোগটিকে সম্মিলিত উদ্যোগ হিসেবেই তুলে ধরেন রুমানা তানজিন অন্তরা। অকপটে বললেন, ‘ব্যক্তি বড় নয়, এই সময়ে সম্মিলিতভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোটাই বড় কাজ।’
মাস্ক পরানোর উদ্যোগটি নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘যেভাবে করোনা পরিস্থিত খারাপের দিকে যাচ্ছে তাতে এখন মাস্ক পরাটা শতভাগ নিশ্চিত করা শুধুমাত্র মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে পুরোপুরি সম্ভব নয়। সে কারণেই আমাদের এই সামাজিক আন্দোলন। যে যার জায়গা থেকে আমরা যদি সচেতন না হই তাহলে কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সেটি করা দুরূহ হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কালিহাতী উপজেলাকে বেশ কয়েকটি হটস্পটে ভাগ করেছি। হটস্পটগুলো হলো- যেখানে লোকসমাগম বেশি, বাসস্ট্যান্ড, হাট-বাজার, চায়ের দোকান, সেবাপ্রদানকারী সংস্থা, ব্যাংক, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ প্রভৃতি। এগুলোকে ভাগ করার পর সেখানে সেবা প্রদানকারী বা পণ্য বিক্রয়কারী বা পরিবহন মালিক বা শ্রমিকরা যারা আছেন তারা স্বেচ্ছা-অঙ্গীকার করবে যে, তারা নিজেরা মাস্ক পরবেন ও অন্যকে মাস্ক পরতে উদ্বুদ্ধ করবেন। এছাড়া মাস্কবিহীন কারও সঙ্গে পণ্য বিক্রয় বা সেবা প্রদান থেকে বিরত থাকবেন।’
ইউএনও বলেন, ‘এই কাজের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- একটা সামাজিক দায়বদ্ধতা সৃষ্টি করা। অর্থাৎ তিনি একটা অঙ্গীকারনামায় সই করছেন স্বেচ্ছায়; যেখানে লেখা আছে- আমি মাস্ক পরতে বাধ্য থাকব এবং অন্যকে উদ্বুদ্ধ করব এবং মাস্কবিহীন কারও কাছেই পণ্য বিক্রি করব না। এরপর মাস্ক না পরলে তার মনে হবে যে তিনি একটা অপরাধ করছেন। এই বোধটা যদি সৃষ্টি করা যায় তাহলেই করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। নাগরিক যদি নিজেই সচেতন হয় যে, করোনা থেকে বেঁচে থাকতে হবে, তাহলে কঠোর লকডাউনেরও প্রয়োজন পরবে না। তখন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও সচল রাখা সম্ভব হবে। মানুষের জীবন ও জীবিকা দুই-ই বাঁচবে। আমরা সেটিরই চেষ্টা করছি সম্মিলিতভাবে।’
এদিকে এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে সংসদ সদস্য হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারী বলেন, ‘মাস্ক পরতে নিজের সদিচ্ছাই যথেষ্ট। করোনা থেকে মুক্ত থাকতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে। মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা বিষয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে আমরা কালিহাতীতে সম্মিলিতভাবে সচেতনতার নজির তৈরি করতে চাই।’
সারাবাংলা/জেআইএল/পিটিএম