Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তারেক রহমানকে কামরুলের আলটিমেটাম

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৩ জুন ২০২১ ২৩:৫৮

ঢাকা: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আলটিমেটাম দিয়েছেন দলটির পুনর্গঠনের উদ্যোক্তা কামরুল হাসান নাসিম।

রোববার (১৩ জুন) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তিনি এ আলটিমেটাম দেন। এতে আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে তাকে (কামরুল হাসান নাসিম) দলের সংকটকালীন মুখপাত্র এবং পুনর্গঠনের উদ্যোক্তা হিসেবে মেনে নিতে বলা হয়েছে।

নিচে কামরুল ইসলাম নাসিমের ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো—

‘দলের অবৈধ সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বলছি, প্রচলিত রাজনীতির রুগ্ন সড়কে আমার সম্পর্কে আপনাদের কথিত উক্তিগুলোকে কখনই আমলে নেই নাই। আপনারা বলছেন, ‘সে কে? কীসের বিএনপি পুনর্গঠনের উদ্যোক্তা! সে (কামরুল হাসান নাসিম) তো আওয়ামী লীগের ওপর আওয়ামী লীগ!’

তবু ক্লান্ত না হয়ে ওই রুগ্ন রাস্তায় আমি পথিক হয়েই শুরুর দিন থেকে বলে আসছি, দলের অসুখ আছে। পাঁচটি রোগ। আমি সামান্য ওষুধওয়ালা। বলাবাহুল্য, হোমিওর পরে আমি অ্যালোপ্যাথি ওষুধ (প্রতীকী) প্রদানেও অতীতে ব্যস্ত থেকেছি।

২০১৫ সালের ৯ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকায় একটি ব্যতিক্রমি সভায় বক্তব্য দিয়ে আমি জানান দেই, দলকে পুনর্গঠন করতে হবে। কারণ, এক, দলটি জাতীয়তাবাদী থেকে জামায়াতেবাদী হয়ে পড়েছে। দুই, দল পরিচালনায় দুইজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতা (আপনি ও আপনার মাতা) ব্যর্থ। তিন, নাশকতাকে রাজনীতির হাতিয়ার করা হয়েছে। চার, বিদেশি শক্তির ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। পাঁচ, জনস্বার্থ সংরক্ষণের রাজনীতি করা হচ্ছে না।

উপরেল্লেখিত পাঁচটি অসুখের সঙ্গে দলের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা চেয়ে অতি উদ্যোগ নিয়ে সৎ সাহসের পরিচয় দিয়েছি।

বিজ্ঞাপন

এখন সময়কাল ২০২১! প্রায় ছয় বছর ধরে আমি কাজ (নিয়মিত-অনিয়মিত) করছি। দলের সঙ্গে কাটালাম প্রায় ২২ বছর। যদিও ২০০৭ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সামাজিক সংগঠন গড়বো বাংলাদেশ নিয়ে অতি সোচ্চার ছিলাম।

অন্যদিকে ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসের পর হতে প্রায় ২০টির মতো কর্মসূচি পালন করি। এক পর্যায়ে ওই একই বছরের ২৬ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী জনতার প্রতীকী নিম্ন আদালত বসাতে সক্ষম হই। বাদী হিসাবে আমি কাঠগড়ায় উঠে বক্তব্য প্রদান করি। বিবাদী হিসাবে ওই পাঁচটি অসুখকে রাখা হয়। উপস্থিত জনতার কাছে তথা বিচারকদের কাছে এক পর্যায়ে আমি দুইটি রায় চাই। এক, দলের গঠনতন্ত্র স্থগিত করা হোক। দুই, জাতীয়তাবাদী জনতার উচ্চ আদালত দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রিয় কার্যালয়ের সামনে বসাতে হবে। তখন জাতীয়তাবাদী জনতা সমস্বরে সমাধান দিয়ে রায় প্রদান করে বলে, তাই-ই হোক।

এর পর পরই রাজনৈতিক ছদ্দাবরণে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ডাক দিই। ৯টি কবিতা উৎসর্গ করে ‘দলীয় বিপ্লব’ করবার ঘোষণা দেই। তার ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের ২ জানুয়ারি, ১৭ জানুয়ারি, ৫ মে, ১৭ সেপ্টেম্বরসহ মোট চারবার করে দলীয় বিপ্লবের মহড়া পরিচালনা করি।

মহড়ার উদ্দেশ্য ছিল— ছেলেমেয়েরা কার্যালয়ের সামনে গিয়ে বলবে, এখানেই বসবে উচ্চ আদালত। কিন্তু, আপনি আপনার কথিত চাকরদের দ্বারা প্রত্যেকবার করে আমাদের নিজেদের মধ্যেই রক্তপাতকে কাছে টানেন। অর্থাৎ একই দলের ভিন্ন আদর্শের মতাবলম্বিদের আপনি মেরে ফেলার আদেশ দেন। কারণ, চারবারের মহড়ায় জীবন মৃত্যুর পাশ ঘেঁষে অনেকেই নির্মম বাস্তবতাকে সঙ্গী করেছেন।

জনাব তারেক রহমান, বিএনপি প্রতিষ্ঠায় মাওলানা ভাসানী-যাদু মিয়ার অবদান ছিল। ন্যাপের মার্কা ধানের শীষকে যেমন তারা আপনার পিতার গড়া দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে তথা বিএনপি’র জন্য দিয়ে দিয়েছিলেন— একইভাবে জিয়া ও যাদু মিয়ার চুক্তির আলোকেই দলটির ভবিষ্যত নির্ধারণ করা হয়েছিল। ইতিহাসের এমন একটা জায়গায় আমরা রয়েছি, সেই যাদু মিয়ার দল বাংলাদেশ ন্যাপকে পুনরায় নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়ে দলের পুনঃনিবন্ধন নিতে হয়েছে। অথচ, তারা (যাদু মিয়ার উত্তরসূরী প্রয়াত শফিকুল গাণি স্বপন-জেবেল গাণি) নির্বাচন কমিশনের কাছে মার্কা চেয়ে বিএনপির মত দলকে বিপদে ফেলতে চায়নি। যা আজও সুযোগ রয়েছে ওই মার্কাটি ফেরত পাবার। কিন্তু, কেন এই পরিস্থিতি? কারণ, বিএনপি জিয়া ও যাদুর স্বপ্নকে লালন করে এগোতে পারেনি।

বিজ্ঞাপন

জনাব তারেক রহমান, আপনার চেয়ে আমি ১২ বছরের বয়সে ছোট হব। আপনার বয়স বেড়েছে। দেখতে দেখতে আপনিও এখন জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের নাগরিক। কিন্তু, আপনি কোথায় বাস করেন তা সকলেই জানেন। আপনার মা দেশের অভ্যন্তরে কারাগারে যাওয়া-আসার মধ্যে আছেন, অথচ আপনি কি সুন্দর করে লন্ডনে বসে ‘ভাইয়া’ সেজে দলীয় রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আছেন!

আপনি জিয়াউর রহমানের সন্তান হয়ে কারাগারে যাওয়ার ঝুঁকি কেন নিতে পারলেন না, তা বোধগম্যে আসে না। কেন আপনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে জাতির জনক মানতে চান না, বোঝা মুশকিল! কেন আপনি আন্টি সম্বোধনে না যেয়ে একজন উন্নত মানের নেত্রীকে রং হেডেড বলে হাসিনা হাসিনা করেন, তা জাতি জানতে চায়? কেন আপনি অতীতে আপনার আম্মাজানকে নকল জন্মদিন পালন করা থেকে বিরত রাখতে কঠোর হুংকার দেন না, মাথায় আসে না!

কার্যত দেশে ও বিদেশে আপনি ভাল এসোসিয়েটস পান নাই। যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি পদে যিনি আছেন, তার মুখের ভাষা শোনার পরেও যখন তাকে আপনি তার স্বীয় পদে রেখে বলেন, চালিয়ে যা— তখন আপনার রুচিবোধ নিয়ে প্রশ্ন জাগে। জনাব তারেক রহমান, আগেও বলেছি, এখনো বলছি, আমার পেছনে এসে দাঁড়ান, রাজনীতি করুন।

আত্মশুদ্ধির সেরাটা দিয়ে বলুন, কামরুল হাসান নাসিম এগিয়ে যাও, আমরা সকলেই আছি তোমার সঙ্গে। বলতে পারবেন? যদি পারেন, তবে বিএনপির রাজনীতির ভবিষ্যৎ থাকবে। আর যেভাবে চলছে তাতে করে আপনি ও আপনার মায়ের কোনো সমস্যা হবে না। চাঁদা তুলে, মনোনয়ন বাণিজ্য সেরে আপনার কন্যা-স্ত্রীদের বিলাসবহুল জীবন পার হবে। কিন্তু বিএনপির অগনিত কর্মীদের, সমর্থকদের কী হবে? আপনাদের দু’জনার কারণে দল আজ জিম্মি। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে কামরুল হাসান নাসিমের হাতকে শক্তিশালী করুন। দুষ্টু, অবুঝ নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিন এবং বলুন, যাও তোমরা কামরুল হাসান নাসিমের কথা মেনে রাজনীতি কর। মনে রাখতে হবে, কামরুল হাসান নাসিমের বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই, সময় নেই বিএনপি ও বাংলাদেশ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী কর্মব্যস্ততায় থাকার। তার কাছে এসব ইস্যু পুঁচকে পর্যায়ের।

জনাব তারেক রহমান

অবৈধ সিনিয়র ভাইস চেয়ারপার্সন হন কিংবা খুবই জনপ্রিয় নেতা হন, বাস্তবতা হলো— আমি আলাদা কোনো রাজনৈতিক দল করি নাই। দলের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য নাজমুল হুদার মতো করে রাজনৈতিক সমিতি খুলি নাই। উড়ে এসে জুড়ে বসা বলেন, আর কোনো এক সাধারণ ঘরে জন্ম নিয়ে অসাধারণ উদ্যোক্তা হিসাবে বলেন, কামরুল হাসান নাসিম অভিজাত রাজনৈতিক ব্র্যান্ড, তর্ক সাপেক্ষে সর্বসেরা— আমার ওপর আস্থা রাখুন। আমি আপনার প্রকাশ্য সমালোচক। এটার মধ্যে ইতিবাচক আলেখ্যর সন্ধান করুন। সন্ধান না করতে চাইলে মনে রাখবেন, ২০২১-২০২২ সালের মধ্যে দলীয় মহড়া আর নয়, উচ্চ আদালত দিনের আলোয় বসিয়ে গণতান্ত্রিক উপায়ে দলের পুনর্গঠন করে দেব।

আমি আপনাকে সতর্ক করছি, আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আমাকে সংকটকালীন মুখপাত্র এবং দলের পুনর্গঠনের উদ্যোক্তা হিসাবে মেনে নিয়ে দলের কাউন্সিল করবার উদ্যোগে না গেলে এমন সত্য বিষয়কে জাতির সামনে আমি তুলে ধরব, তার ফলাফল হিসাবে দু’টো দিক সামনে আসবে। এক, দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া নিষ্পত্তি হবে এবং তা জিয়া ও যাদু মিয়ার সেই দল হিসাবে আবির্ভূত হবে। দুই, আপনি ও আপনার অগণিত সমর্থকেরা কখনই আর রাস্তায় গিয়ে বলবে না, আমি ও আমরা বিএনপি করি বা করতাম। তারা লজ্জা পাবে। কাজেই বুদ্ধিবৃত্তিক অস্ত্র আমার কাছে রয়েছে, যে অস্ত্র সম্পর্কে আপনার ধারণা নেই, লেখাপড়াও নেই।

কোভিড-১৯ কাল পার হচ্ছে। নিজের প্রতি যত্ন নিয়েন। ভালবাসা রইল আপনার প্রাণপ্রিয় আত্মজার প্রতি ও অতি অবশ্যই ভাবীর জন্য থাকল শুভ কামনা!’

 — কামরুল হাসান নাসিম, বিএনপি পুনর্গঠনের উদ্যোক্তা

সারাবাংলা/এজেড/এনএস

কামরুল হাসান নাসিম টপ নিউজ তারেক রহমানকে আলটিমেটাম বিএনপি পুনর্গঠন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর