Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘মোহাম্মদ নাসিমের চলে যাওয়া দেশের রাজনীতির জন্যও ক্ষতি’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৫ জুন ২০২১ ২১:৫৭

ঢাকা: মোহাম্মদ নাসিম তার বাবা মনসুর আলীর মতোই সাহসী ও নির্ভীক ছিলেন। কোনোদিন অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। তিনি ছিলেন আপসহীন নেতা। বঙ্গবন্ধুহীন আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে তার অসামান্য অবদান ছিল। তার চলে যাওয়া শুধু দলেরই নয়, দেশের রাজনীতির জন্যও ক্ষতি।

মঙ্গলবার (১৫ জুন) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সংগঠনের সহ-সভাপতি কণ্ঠশিল্পী রফিকুল আলমের সভাপতিত্বে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানার পরিচালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, নাসিমপুত্র প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় এমপি।

বিজ্ঞাপন

প্রধান অতিথির বক্তৃতা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মোহাম্মদ নাসিম পিতার পুত্র হিসেবে নেতা হননি। ক্যাপ্টেন মুনসুর আলীর সন্তান হিসেবে তিনি নেতা হননি। তিনি কর্মী থেকে নেতা হয়েছেন। ছাত্রলীগ করেছেন। দলের পক্ষে, আদর্শের পক্ষে সংগ্রাম করে তিনি তরুণ বয়সে কারাগারে গেছেন।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মোহাম্মদ নাসিম অনেক বড় নেতা ছিলেন। তার চেয়েও বড় কথা তিনি চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর সন্তান ছিলেন। কিন্তু তার আচার আচরণে কেউ বলতে পারবেন না- এত বড় নেতার ছেলে ছিলেন, বা তিনি এত বড় নেতা। সবাইকে আপন করে নেওয়ার অসামান্য গুণ তার মধ্যে ছিল। আমি তার চেয়ে বয়সে অনেক ছোট। আমাকেও তিনি আপনি করে বলতেন।’

বিজ্ঞাপন

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘কর্মীদের খোঁজ-খবর নেওয়া একজন নেতার গুণ। এই গুণ তার মধ্যে ছিল। তিনি সবার খোঁজ-খবর নিতেন। তিনি ১৪ দলের সমন্বয়ক হিসেবে ১৪ দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন। বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে ১৪ দলকে আওয়ামী লীগের পাশে রাখার অসামান্য দক্ষতা দেখিয়েছেন। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সপক্ষের পেশাজীবী সংগঠন সুসংগঠিত করে আওয়ামী লীগের পক্ষে দাঁড় করাতে ভূমিকা রেখেছেন। তিনি মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘নাসিম ভাইয়ের মতো একজন নেতার চলে যাওয়ায় শুধু আমাদের দলের জন্য নয়, দেশের রাজনীতি জন্যও ক্ষতি। তার অন্যতম গুণ ছিল অন্য দলের সঙ্গেও সম্পর্ক রাখা। একেবারে কট্টর বিরোধীদের সঙ্গেও তিনি সুসম্পর্ক রাখতেন।’

তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান বলেন, ‘নেতা তৈরির কারিগর ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। তিনি ছিলেন রাজনৈতিক শিক্ষক। আন্দোলন সংগ্রাম কীভাবে গড়ে তুলতে হয়, তার প্রধান সেনাপতি ছিলেন তিনি। চরম নির্যাতনের মুখেও তিনি অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে বেঈমানি করেননি। একদিকে রাজনীতি, অন্যদিকে মন্ত্রণালয়- দুটি ক্ষেত্রেই দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে গেছেন মোহাম্মদ নাসিম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে তিনি যে অবদান রেখে গেছেন তা ইতিহাসে সোনার হরফে লেখা থাকবে।’

আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। অসাম্প্রদায়িক সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার অঙ্গীকার থেকে কখনও বিচ্যুত হননি তিনি। সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মোহাম্মদ নাসিমের ভূমিকা রাজনৈতিক কর্মীদের সাহসী ও অনুপ্রাণিত করবে। শত প্রতিকূলতার মাঝেও আন্দোলন সংগ্রামে তিনি কখনো পিছু হটেননি। নিজে পিট পেতে দিয়ে কর্মীদের পুলিশের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। কিন্তু কর্মীদের গায়ে আচর লাগতে দেননি। সত্যিকারের জননেতা বলতে যে যে গুন থাকা দরকার মোহাম্মদ নাসিমের মধ্যে সব ছিল।’

সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও নাসিমপুত্র প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় বাবার স্মৃতি চারণ করে বলেন, ‘বাবা সবসময়ই সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। তার চিন্তা চেতনায় সবসময় ছিল দলীয় নেতাকর্মী। পরিবারের সদস্যদের চেয়ে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের গুরুত্ব দিতেন। সে কারণে সকলের প্রিয় ‘নাসিম ভাই’ হিসেবে পরিচিত লাভ করেন।’

১/১১ সময়ের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে জয় বলেন, “১/১১ সরকার আব্বাকে তুলে নিয়ে যায়। প্রথম তিন মাস কেমন আছেন, কোথায় আছেন- আমাদের কোনরকম যোগাযোগ করতে দেওয়া হতো না। আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম। এরপর একদিন বাবার সঙ্গে দেখা হয়, তখন দেখি বাবা খুঁড়িয়ে হাটছেন। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই বলেছিলেন, ‘বাথরুমে পড়ে গিয়ে সামান্য ব্যথা পেয়েছি।’ আসলে আব্বাকে যে চরম নির্যাতন করা হয়েছে তিনি তা লুকিয়েছিলেন। সে সময় আব্বাকে রাজনীতি ছাড়তে অনেক চাপ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আব্বা অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। একটা কথাই বলেছেন, আমি ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর সন্তান। আমার পিতা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বেঈমানি করেননি। জীবন দিয়ে সেটা প্রমাণ করেছেন। আমিও নেত্রীর প্রশ্নে কোন আপস করব না। নেত্রী ভালো থাকলে বাংলাদেশ ভালো থাকবে।”

আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কামাল চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, এম এ করিম, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির সদস্য সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম রনি, যুবলীগ নেতা মানিক লাল ঘোষ, অভিনেত্রী তারিন জাহান, শাহনুর, সাংবাদিক সুজন হালদার, রোকন উদ্দিন পাঠান প্রমুখ।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট মৃত্যুবার্ষিকী মোহাম্মদ নাসিম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর