মানুষের মুখে হাসির থেকে বড় পাওয়া আর কিছু না: প্রধানমন্ত্রী
২০ জুন ২০২১ ১৩:৩১
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। কোনো ঘরহীন মানুষ যখন একটি ঘর পায়; তখন মানুষের ভিতরে যে আনন্দ, তার মুখে যে হাসি, এর থেকে বড় পাওয়া তো আর কিছু না।
রোববার (২০ জুন) সকালে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান কার্যক্রমের (২য় পর্যায়) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি উদ্বোধন ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও ৪৫৯টি উপজেলার কর্মকর্তারা সংযুক্ত ছিলেন অনুষ্ঠানে। এ ছাড়া কয়েকটি উপজেলা প্রান্তে যুক্ত হয়ে উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী।
দ্বিতীয় পর্যায়ে আজ মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে বিনামূল্যে দুই শতক জমিসহ সেমি পাকা ঘর প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। গত জানুয়ারিতে প্রথম পর্যায়ে ৭০ হাজার পরিবারকে ঘর প্রদানের পর রোববার (২০ জুন) দ্বিতীয় পর্যায়ে এক সঙ্গে আরও প্রায় ৫৩ হাজার ৩৪০ টি অসহায় পরিবারকে ঘর দিচ্ছে সরকার। এছাড়া আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে আরও ১ লাখ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বিনামূল্যে জমিসহ ঘর প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করা হয়েছে।
গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। তিনি জানান, একসঙ্গে এত মানুষকে বিনামূল্যে বাড়ি-ঘর দেওয়ার ঘটনা পৃথিবীতে নজিরবিহীন। বিভিন্ন দেশে ভূমিহীন, গৃহহীনদের ঘর-বাড়ি নির্মাণের জন্য সুদবিহীন ঋণ দেওয়ার নজির থাকলেও ভূমিহীন-গৃহহীনদের ডেকে তাদের বাড়ি-ঘর দেওয়ার নজির আর নেই জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। পাশাপাশি মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীন ভূমিহীন মানুষের ঘরবাড়ি ঘোষণা দেওয়ার পর সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের এগিয়ে আসার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘যার ঘর নাই বাড়ি নাই তাকে ফুটপাতে পড়তে হয়। রাস্তার পাশে, রেললাইনের পাশে বা বিভিন্ন জায়গায় ঝড় বৃষ্টি বাদলা সবকিছু মাথায় নিয়ে থাকে জীবনযাপন করতে হয়। সে যখন একটা ঘর পায়, তার জীবনটাই বদলে যায়।’
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা চেয়েছিলেন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। একটা ঘর যখন পায়, যখন মানুষের ভিতরে যে আনন্দ, তার মুখে যে হাসি, এর থেকে বড় পাওয়া তো আর কিছু না। আমি মনে করে করি এর থেকে বড় পাওয়া আর কিছু না।’
প্রধানমন্ত্রী এই কর্মসূচির সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করায় ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘মানুষের জন্য মানুষ। মানুষের জন্য মানুষের কল্যাণে কাজ, এটিই তো সব থেকে বড় কথা।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য স্থির করেছি যে বাংলাদেশকে আমরা দারিদ্র্যমুক্ত করব। দারিদ্র্যমুক্ত করতে হলে আমি মনে করি সবচেয়ে বড় দরকার, আমি মনে করি একটা হচ্ছে। আমরা জাতির পিতার পদাঙ্ককে অনুসরণ করেই শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছি।’
তার পাশাপাশি গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে ঘরবাড়ি করে দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আজকে আশ্রয়ণের মাধ্যমে এবং অন্যান্য কর্মসূচির মাধ্যমে গৃহহীন মানুষকে ঘরবাড়ি তৈরি করে দিচ্ছি। যাতে মানুষ ঘর পাবে সেই সঙ্গে তাদেরকে কিছু ট্রেনিং দেওয়া হয়, ঋণ দেওয়া হয় এবং নগদ টাকা দেওয়া হয়, তাকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। যেন ভালোভাবে মানুষ বাঁচতে পারে, কিছু করে খেতে পারে। পরমুখাপেক্ষী না হতে হয়। সে যেন নিজের জীবনটাকে নিজেই গড়ে তুলতে পারে। বস্তিবাসিরাও তার নিজ গ্রামে ফিরে গেলে সেখানেও একটা ফান্ড এবং প্রকল্প আমরা নিয়েছিলাম, ঘরে ফেরা কর্মসূচি। নিজের গ্রামে গেলে সেখানে ঘরবাড়ি, ছয় মাসের জন্য ভিজিএফের মাধ্যমে বিনা পয়সায় খাদ্যের ব্যবস্থা করা, তার ঋণের ব্যবস্থা করা অর্থ্যাৎ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা আমরা করে দেব।’
‘ঢাকা শহরে আামদের যে বস্তিবাসী আছে। তারা বস্তিতে যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকে এবং যে ভাড়া দিয়েই যখন থাকবে তখন ভালভাবে থাকুক। আমরা তাই বস্তিবাসির জন্য ভাড়ায় থাকায় জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দিচ্ছি। তাদের ভাড়া দিয়েই থাকতে হবে। যে টাকাটা তারা ভাড়া দেয় একটা বস্তির ঘরের জন্য ঠিক সেই টাকাটাই তারা ভাড়া দেবে কিন্তু তারা থাকবে একটু ভালো পরিবেশে। সে প্রকল্পটাও আমরা নিয়েছি, খুব শিগগিরই পুনর্বাসন শুরু করে দেব।’
‘এভাবেই সমাজের একেবারে নিম্মস্তরে পড়ে থাকা মানুষগুলো তাদেরকে টেনে তোলা তাদেরকে মানে অন্তর্ভুক্তি করা, মূল জনগণের সঙ্গে। সেটাই আমরা করে যাচ্ছি, এটিই আমাদের লক্ষ্য। অর্থ্যাৎ অর্থনৈতিক নীতিমালায় আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত তৃণমূল মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া। অর্থ সংগ্রহ করা জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করা, তাদের বাসস্থান শিক্ষা চিকিৎসা স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা করা এই নীতিমালাটিই হচ্ছে আমাদের আওয়ামী লীগের নীতি। এটিই আমাদের জাতির পিতা শিক্ষা দিয়েছেন এবং সেই নীতিমালা নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
‘যার শুভফলটা পাচ্ছে এদেশের মানুষ। আমাদের সমাজ। সমাজে একেবারে হতদরিদ্র মানুষ তারা কিন্তু আস্তে আস্তে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখছে, উঠে আসছে এবং সেটিই আমাদের লক্ষ্য’ বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সারাবাংলা/এনআর/একে
গণভবন প্রধানমন্ত্রী বাড়ি নির্মাণ ভূমিহীনদের বাড়ি মুজিববর্ষ শেখ হাসিনা